নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:১৩ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:১৩ এএম
একই ধরনের পোশাক হবে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত। একই ড্রেস কোড ও কর্মসময় ৮ ঘণ্টা চায় মাঠপর্যায়ের পুলিশ। দেশের পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে সমন্বয় সভা করে সংস্কার কমিশনের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এদিকে পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কোনো প্রস্তাবনা থাকলে সেটি জানানোর অনুরোধ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনসাধারণের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে ১০টি সভা করেছে। অংশীজনের সঙ্গে করেছে আরও চারটি সভা। এসব সভায় সংস্কারের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে।
সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা বেশকিছু সভা করেছি। জনসাধারণের মতামত চেয়েছি। বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা একটি সমন্বয় সভা করেন। সেখান থেকে সংস্কার কমিশনের কাছে কিছু লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, স্বাধীন কমিশন গঠন ও পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করা, ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে পুলিশ যে রঙের ইউনিফর্ম (পোশাক) পরে কলঙ্কিত হয়েছে সেই রং পরিবর্তন করা, কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেস কোড চালু করা।
বর্তমানে প্রতিটি রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নসহ (এসপিবিএন) বিভিন্ন ইউনিটের জন্য আলাদা ড্রেস কোড রয়েছে। পোশাকের রংও আলাদা। সংস্কার বাস্তবায়ন হলে কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত সবার একই ড্রেস কোড হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পুলিশের সমন্বয় সভা থেকে তৈরি করা লিখিত প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, মাঠ পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যেসব ‘ক্ষমতালোভী দালাল’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে শত শত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, একই সঙ্গে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করা, যেসব পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং যাদের আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেওয়া বা হয়রানি না করা।
আরও বলা হয়েছে, শ্রম আইন অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের কর্মসময় ৮ ঘণ্টা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকে ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করা, পরিদর্শকদের থেকে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া, জটিলতা নিরসনে পদোন্নতির জন্য সুপারনিউমারারি পদোন্নতি চালু করা এবং ন্যূনতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়া অধস্তন পুলিশ সদস্যদের টিএ-ডিএ বিল যথাসময়ে দেওয়া ও পর্যাপ্ত সোর্স মানি দেওয়া, ঝুঁকিভাতা মূল বেতনের ৭০ শতাংশ করা এবং ফ্রেশমানি পুলিশ সদস্যের ব্যাংক হিসাবে দেওয়া, ওসির ক্ষেত্রে গত ১৫ বছরে সুবিধাবঞ্চিতদের দায়িত্ব দেওয়া ও ওসি হিসেবে দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে না পারা এবং ওসি পদায়নে ৫৪ বছরের বয়সের সীমা তুলে দেওয়া।
তাদের প্রস্তাবে আরও রয়েছে, পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, অধস্তন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা, ব্যক্তিগত কাজে কোনো সদস্যকে ব্যবহার না করা, কনস্টেবল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করা। সার্জেন্ট ও সাব-ইন্সপেক্টরদের সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যমে সব ইউনিটে পদায়ন করা, কর্মরত সার্জেন্টদের তদন্ত ক্ষমতা দেওয়া এবং এটিএসআই পদকে এএসআই (নিরস্ত্র) হিসেবে সমন্বয় করা।
এ ছাড়া সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বাণিজ্য বন্ধ করা, মামলার টার্গেট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, কমিউনিটি ব্যাংক এবং সব কল্যাণ তহবিলের সুস্পষ্ট হিসাব প্রতি বছর সব সদস্যকে দেওয়া এবং ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ষষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করা, একই পদে সর্বোচ্চ ছয় বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়া পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকরি হারালে সবাইকে পেনশনসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত একই সুবিধা নিশ্চিত করা, পুলিশ সদস্যদের প্রতি বছর ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি দুই মাস অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ নিশ্চিত করা, পুলিশের সব ইউনিটে প্রত্যেকের চাকরি করার সুযোগ রাখা, পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড, অর্ডালি রাখার নিয়ম বন্ধ করা, প্রতিটি ইউনিট থেকে সমন্বয় করে নতুন করে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা এবং সেখানে কনস্টেবলের সংখ্যা বেশি রাখা।
মতামত চেয়েছে কমিশন:
এদিকে ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনসাধারণের মতামত চেয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মতামত দিতে পারবেন রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিক। এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করার সময় কিছু পুলিশ সদস্যের সহিংস ভূমিকা ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সংস্কার এখন সময়ের দাবি। সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন আপনার মূল্যবান মতামত জানতে চায়।
উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে অগ্রগতি:
পুলিশ সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন। বৈঠকে জানানো হয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে ১০টি সভা ও অংশীজনের সঙ্গে চারটি সভা করেছে। জনসাধারণের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মব নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কতিপয় ধারা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তা পরিবর্তন করা হবে কি না, সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
বিআরইউ