Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫,

ধারাবাহিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে সকল ক্যাডারের সরকারি কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১, ২০২৫, ০২:৩১ পিএম


ধারাবাহিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে সকল ক্যাডারের সরকারি কর্মচারীরা

বছরের শেষ দিনে সরকারি কর্মচারীদের সতর্ক করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান-ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম-বিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে যা সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এবং যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০ এর লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আচরণ) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের আওতাভুক্ত। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে এই বিধিমালা কেউ লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থার আওতায় আসবেন বলেও জানানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ধারাবাহিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যার শুরু গত ৫ অক্টোবর যখন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের প্রত্যাখান করে যা সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনসম্মুখে আপত্তি উত্থাপন করার শামিল এবং যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০(এ) এর লঙ্ঘন। পরবর্তীতে ১৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ঢাকাস্থ খামারবাড়ির তুলা ভবনে মতবিনিময় সভা করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। অতঃপর, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ তারিখে রাজশাহীতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিভাগীয় সম্মেলনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট সংস্কার কমিশন দাবি করে এর পুনর্গঠনের দাবি জানান ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ঘোষণা দেন যে তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডারের বাইরে রাখার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছেন। পাশাপাশি উপসচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০% এবং বাকি ক্যাডার থেকে ৫০% কর্মকর্তা নিয়ে পদোন্নতির প্রস্তাব দেওয়ার সুপারিশ চূড়ান্ত করেছেন। মূলত এই ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ২১ ডিসেম্বর ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় সরকারি কর্মচারী হিসেবে যা নজিরবিহীন। ২২শে ডিসেম্বর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে জমায়েত করে এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির নেতৃত্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নিকট তাদের দাবি তুলে ধরেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য পালটা মন্তব্যের বাকযুদ্ধ চলতে থাকে। ২২শে ডিসেম্বর ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসন ক্যাডারকে বাইরে রেখে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ সিনিয়র পুল সার্ভিস গঠন’ করে যা আন্তঃক্যাডার সংঘাত সৃষ্টির চূড়ান্ত পদক্ষেপ। ২৩শে ডিসেম্বর বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এর কর্মকর্তারা হেলথ ক্যাডার বিলুপ্ত সংক্রান্ত সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে বলে স্বাস্থ্য ক্যাডার না থাকলে কোন ক্যাডার থাকবে না এমন হুমকি প্রদান করে।

২৪ ডিসেম্বর ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সকাল ১১টা থেকে ১২টা কলম বিরতি কার্যক্রম পালন করে। ২৫ ডিসেম্বর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নজিরবিহীনভাবে বিয়াম ফাউণ্ডেশনে  বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস প্রশাসন বহুমুখী সমবায় সমিতির অধীনে একটি প্রতিবাদ সভা আয়োজন করেন যেখানে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত উভয় শ্রেণির কর্মকর্তাই বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন। ২৫শে ডিসেম্বর ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।

ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছেন যার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এবং সরকারি সেবার মান কমে যাবে যে বিষয়ে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।

ইএইচ

Link copied!