আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
বিসিএস আবেদনে চিকিৎসকদের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে সরকারকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তাদের দাবি, বিসিএসে আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বয়স-সীমা দুই বছর বাড়ানো হলেও চিকিৎসকদের আবেদনে পূর্বের বয়স-সীমাই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই বৈষম্য নিরসন করা না হলে কর্মবিরতিসহ চিকিৎসকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে চিকিৎসকদের বয়স-সীমা বাড়ানোর দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই হুঁশিয়ারি দেন।
এসময় চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, গত দেড় বছরে আমার বার বার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি। সবাই শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে আর বলেছে আমাদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু আমাদের দাবি মানার বিষয়ে কারও কোন পদক্ষেপ আমরা দেখিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি যে, কোনও দাবিই আন্দোলন ছাড়া মানা হচ্ছে না। ভাতা বৃদ্ধির বিষয়েও চূড়ান্ত আন্দোলনের পর দাবি মানা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকদের কাজ তো আন্দোলন করা নয়। যে কারণে আমরাও কোনও আন্দোলনে যেতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয়, তাহলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ হয়তো আমাদের দাবি নিয়ে ভুল বুঝবেন। আমরা বয়স ৩৪ করার দাবি করছি না। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে যেন বৈষম্য না হয়৷ সরকার চাইলে বয়স-সীমা ৩৪ করতে পারে, ৩৫ বা ৩৬ বছরও করতে পারে। আমরা চাই ডাক্তারদের সঙ্গে যে বৈষম্যটা করা হচ্ছে, সেটি যেন না হয়।
ডা. রাইয়ান আক্তার বলেন, বয়স-সীমা বৃদ্ধির এই যৌক্তিক দাবি নিয়ে এর আগেও একাধিকবার আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। এরপরও যখন হবে না, তখন আমাদের বাধ্য হয়ে মশাল মিছিল করতে হবে, কর্মবিরতি দিতে হবে। এরপরও যখন দাবি আদায় না হবে, তখন আমরা শাহবাগ অবরোধ করতে বাধ্য হবো।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা কর্মবিরতি করলে রোগীদের কষ্ট হয়, সেটা আমরাও বুঝতে পারি। কিন্তু আসলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তখন একদিকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের ভুল ধারণা তৈরি হয়, সরকারের বিরুদ্ধেও একটা বিদ্বেষ তৈরি হয়। আমরা কঠোর কোনও কর্মসূচিতে যেতে চাই না। কিন্তু যদি বাধ্য হয়ে যদি কর্মবিরতি বা শাহবাগ অবরোধে যেতে হয়, তখন কার কষ্ট হলো বা কী সমস্যা হলো সেটি আমাদের দেখার থাকবে না।
সবশেষে ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি ও ইউমবের মুখপাত্র ডা. মোবারক হোসেন বলেন, গত কিছুদিন আগেই ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু প্রজ্ঞাপনে আবেদনকারীর বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩২ বছর উল্লেখ করা হলেও, চিকিৎসকদের বয়সসীমা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু অন্যান্য বিসিএস আবেদনকারীর স্নাতক শেষ করতে যেখানে ন্যূনতম ৪ বছর প্রয়োজন হয়, সেখানে চিকিৎসকদের এমবিবিএস-বিডিএস স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে নূন্যতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর লাগে।
তাই পূর্ববর্তী সকল সাধারণ বিসিএস পরীক্ষায় যেখানে আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩০ বছর ছিল সেখানে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে সবার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করে ৩২ করা হলেও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কোনো বয়স বৃদ্ধি হয়নি। ফলে চিকিৎসকরা এই ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে আমরা মনে করি।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা শুরুতেই শাহবাগ অবরোধ করতে চাই না। আমরা চাই সরকার যেন আমাদের দাবির গুরুত্ব অনুধাবন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মেনে নেয়। আমরা ৪৭ তম বিসিএসেই বয়সসীমা ৩৪ দেখতে চাই। অন্যথায় চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কঠোর কর্মসূচি দিলে তখন আর আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
ডা. সারওয়ার জাহান তুহিন বলেন, ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসক মহল আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এখন বয়স বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে না। কিন্তু এদিকে ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সকল ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসকদের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিবাচক হওয়া স্বত্বেও এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
ডা. গোলাম সাদমানী নামক আরেক চিকিৎসক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে আমরা খুবই আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ বয়স বৃদ্ধির দাবিতে কাজ করে আসলেও এখন পর্যন্ত আমরা জানি না এই দাবি পূরণ হবে কিনা।
আরএস