Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫,

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

চীনা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছরে নিতে চায় সরকার

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম


চীনা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছরে নিতে চায় সরকার

চীনা প্রকল্পে ঋণে সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সীমা ৩০ বছরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বেইজিং সফরে এ বিষয়টি তোলা হবে।

বেইজিং সফর নিয়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান উপদেষ্টা।

তৌহিদ হোসেন বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। বিনিয়োগগুলো মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। আলাপ-আলোচনার মধ্যে প্রথমে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো আসবে। অফিসিয়ালি চীন আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। আনঅফিসিয়ালি ভারতকেও বড় অংশীদার বলা হয়।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের প্রধানত আমদানির সম্পর্ক এবং এগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের অনেক রপ্তানি সেই আমদানি পণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চীনের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে—যেমন আমরা ঋণের শর্তাবলি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।

তিনি বলেন, চীনের কাছে এটাও চাইবো যেন যখন আমরা এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েট করব তখন ইউরোপের মতো তারাও যেন আমাদের জন্য তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখে। এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে, তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।

‘এছাড়া, কিছু কালচারাল আলোচনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে দুই দেশেই কিছু উৎসব রয়েছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথাবার্তা বলবো’ —যোগ করেন উপদেষ্টা।

বাংলাদেশে চীনে ঋণের পরিমাণ জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি ঋণের সুদের হার এক না। আমরা মোটাদাগে সুদের হার কমানোর কথা বলব। ঋণ পরিশোধ সীমা চেষ্টা করব ৩০ বছরে নিয়ে যেতে; যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ কম আসে এবং পরিশোধ করতে সহজ হয়। পরিশোধের সময় বাড়ানোর কথা বলবো।

আগামী ২০ জানুয়ারি চীন সফরে যাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। উপদেষ্টার সফরে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা স্মারকের নবায়নের তথ্য জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, তিস্তার প্রকল্পের চেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নদী নিয়ে যে এমওইউ আছে ওটা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সেটা নবায়ন করার সিদ্ধান্ত আছে। স্পেসিফিক প্রকল্পের বিষয়ে আরও অনেক বিস্তারিত আলোচনা লাগবে। তবে বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের সহায়তা চাওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করব। আমরা চাইব চীন আমাদের সহায়তা করুক। চীনের ওখানে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এক দিনে সমাধানের বিষয় না। এখন যে পরিস্থিতি মিয়ানমারে সেখানে স্থিতিশীলতা না ফিরলে কিন্তু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, এটা মেনে নিতে হবে। তাদের জোর করে পাঠাতে পারবেন? একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের সহায়তা চাইব। আমরা চাইব রাখাইনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক।

চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বিগত সরকারের সময় থেকে বাংলাদেশকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বেইজিং। উপদেষ্টার সফরে জিডিআই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক কিংবা সরকারের অবস্থান কি-জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, কিছু জিনিস আছে যেগুলো চলমান আছে আলাপ-আলোচনা। এটা বহাল থাকবে এবং আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনই সমঝোতা স্মারকে যাব কিনা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

বিগত সরকারের সময়ে চীনের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি ছিল এবং বাজেট সহায়তা নিয়েও আলোচনা ছিল। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা কোনো কিছু বাদ রাখব নাম, সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। সেই আলোচনা আছে এবং থাকবে। যেহেতু আমাদের সমস্যা আছে আমরা বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলবো। দেখি তারা কতটুকু সহায়তা দিতে পারে।

চীন সফরের লক্ষ্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সরকার স্পেসিফিক না। ইস্যুগুলো আপনারা জানেন কোনটা এক মাসের বা এক বছরের ইস্যু না। ইস্যুগুলো অনেক দিনের, অনেক পেছন থেকে হয়ে আসতেছে। বিগত সরকারের সময়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা কি সেগুলো সব বাদ দিয়ে দেব? নট নেসেসারি। আমরা দেখব যে, সেটা আমাদের দেশের স্বার্থ ঠিক মতো রক্ষীত হচ্ছে কিনা।

তিনি বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ত্রুটি রয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশে সরকার পরিবর্তন হলেও কিছু পরিবর্তন হয় না; আমাদের এখানে অনেক সময় খানিকটা পরিবর্তন করতে হয় সরকারের চরিত্রের কারণে। যেহেতু আমাদের সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট নয়, দীর্ঘদিন থাকবে এ সরকার এ রকম কোনো পরিকল্পনা নেই। সেহেতু আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে বিষয়গুলো আছে, সেটা চীনের সঙ্গে হোক বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে হোক সেটা কিন্তু আমাদের বাদ দিলে চলবে না। আমাদের পক্ষে যতটুকু করা যাবে করব, বাকিটা পরবর্তী সময়ে যারা আসবে করবে।

আরএস

Link copied!