Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫,

প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে ভাটা মালিকরা

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম


প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে ভাটা মালিকরা

‘৩টি সাংবাদিক সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে মোট ২৩ জন সাংবাদিক ইটের ভাটার মালিকদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা এনেছে বলে অভিযোগ। অথচ আমি সভাপতি হয়ে কিছুই জানলাম না।’ অভিমান ও ক্ষুব্ধ হয়ে এভাবেই ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাদারীপুরের সাংবাদিক সংগঠন মৈত্রী মিডিয়ার সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান বাদল।

সাংবাদিক, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের টাকা ও প্রভাব খাটিয়ে ইট ভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানোর গুঞ্জন এখন জেলাজুড়ে।

বিভিন্ন মিডিয়ায় ইটভাটার অনিয়মের খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হলেও জেলা প্রশাসনের নিরবতা গুঞ্জনকে আরও দৃঢ় করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাটি দিয়ে ইট তৈরি করে মাঠজুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভাটার চুল্লির কাছে ছোট বড় বিভিন্ন গাছ কেটে এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেক ভাটায় স্ব-মিল বসিয়ে গাছগুলোকে কেটে চুল্লিতে দেয়ার মতো করে উপযোগী করছে। কিছু কিছু ভাটায় কাঁচা ইট সাজিয়ে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা চুল্লিতে দিচ্ছে স্তূপ করে রাখা গাছের টুকরো। আবার কিছু কিছু ভাটায় শ্রমিকরা পোড়ানো ইট চুল্লি থেকে বের করছে। কিছু ভাটা ইট পোড়ানোর জন্য রোদে শুকানো কাঁচা ইটগুলো চুল্লির ভিতরে সাজিয়ে রাখছে পোড়ানোর জন্য। ভাটাগুলো রাখ ঢাক না রেখে প্রকাশ্যেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজগুলো করছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা নামের একটি ইউনিয়নেই ইটভাটা আছে ২৬টি। জনবসতি এলাকায় ইটভাটা করার নিয়ম না থাকলেও জেলার অধিকাংশ ইটভাটাই জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এমনকি পৌরসভার মধ্যে তৈরি হয়েছে ইটভাটা। এই ইটভাটাগুলো কাঠ পোড়ানোর কারণে যেমন উজার হচ্ছে গাছ তেমনি ইট বানাতে ফসলি জমির মাটি কেটে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কৃষিখাতকে।

ডিসেম্বর মাসে জেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা, ভাটায় কাঠ পোড়ানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ৫টি অভিযান পরিচালনা করে। তার মধ্যে ৩টি মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে। তাতে ৩টি ভাটাকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করছে। ভাটাগুলোকে বিধি মোতাবেক সব কাগজপত্র ঠিক করে এবং নিয়মমতো ভাটার অবকাঠামো করে ইট পোড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিল মোবাইল কোর্ট। কিন্তু মোবাইল কোর্টের নির্দেশনা না মেনে তারা ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

মাদারীপুরের অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ কার্যক্রম চালালেও জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো কিছু অভিযান, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করে। মোবাইল কোর্ট চলে আসলে তারা স্বাভাবিকভাবেই আবারো তাদের অবৈধ কর্যক্রম চালিয়ে যায়। অবৈধ ইটভাটাসহ যে সকল ইটভাটা অবৈধ কার্যক্রম চালায় সেগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা এবং ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা হলে কাঠ পোড়ানো থেকে শুরু করে ভাটাগুলোর সকল অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা যেত বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে টাকা ও প্রভাবকে এড়িয়ে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ এগুলো বন্ধ করবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন এই মহল।

পাঁচখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা নিউজ টোয়ান্টিফোর ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি বেলাল রিজভী বলেন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইটভাটা মালিকরা। এতে আশেপাশে বাসিন্দারা স্বাস্থ্যগত হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া গত বছর একটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হামলার শিকার হলেও মামলা করেনি জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের সাথে তাদের অনৈতিক যোগসাজশ থাকায় তারা জেলায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারে উর্ধ্বতনদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সঠিক তদন্ত করে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা এবং তাদের অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ইটভাটাগুলোর আশেপাশের অনেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটাগুলো ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। যেখানে ইটভাটা আছে তার আশেপাশের জমিতে ফসল ভাল হয় না। এছাড়া ফল গাছে ফল হয় না। আমরাও বিভিন্ন অসুখ বিসুখে ভুগতেছি।

মাদারীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম শরিফুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস নতুন হয়েছে। এখানে লোকবল নেই। ৩ জন স্টাফ এর মধ্যে ১ জন ট্রেনিং এ আছে। আমি জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। যেগুলো অবৈধ পাচ্ছি সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। জেলায় কোন ইটভাটা বন্ধ হয় নাই তাহলে আপনার কোন ইটভাটা বন্ধ করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনে আবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জেলায় যেন কোন ইটভাটায় কাঠ পোড়াতে না পারে। প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে এবং অনেক ইট ভাটায় কাঠ পোড়ালেও জেলা প্রশাসক দাবি করেন আমাদের মোবাইলকোর্ট সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

ইএইচ

Link copied!