Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

চট্টগ্রামে ৭৯২ শূন্য পদ

মামলার দোহাইয়ে ঝুলে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম


মামলার দোহাইয়ে ঝুলে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ

একটি মামলার দোহাই দিয়ে ঝুলে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। চট্টগ্রামে ৭৯২ শূন্য পদ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ। এতোসব বিদ্যালয় জোড়াতালি চলছে। এতে বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের নিজেদের ভোগান্তি হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একটি মামলার কারণে সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলে যোগ্যদের সহকারী থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

সূত্রে জানা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ের ইচ্ছে করে প্রধান শিক্ষক না আসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলেন ভারপ্রাপ্ত থাকা শিক্ষক। চট্টগ্রামে ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৯২টি বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। এসব বিদ্যালয়ে ১৩ হাজার ৫৯৯টি সহকারী শিক্ষকের পদের মধ্যে বর্তমানে শূন্য আছে ১ হাজার ৩৬২টি।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ আছে ৯৭টি। এর মধ্যে পদ শূন্য আছে ৪৫টি। ২১টি উচ্চমান সহকারী পদের মধ্যে ১৫টিই খালি। ৩৯টি অফিস সহকারী পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২৩টি। আর অফিস সহায়ক পদ খালি পড়ে আছে ৮৪টি। এ ছাড়া জেলায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ২১টি পদের মধ্যে তিনটিতে কর্মকর্তা নেই দীর্ঘদিন ধরে।

গ্রামে বিদ্যালয় বেশি, শিক্ষক কম: চট্টগ্রামে শহরের তুলনায় গ্রামে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি, শিক্ষক সংকটও বেশি। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক—দুই পদেই শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি সংখ্যক পদ শূন্য। ২ হাজার ২৬৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে উপজেলায় ৭১২টি ও নগরের ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।

উপজেলাগুলোর মধ্যে বাঁশখালীতে ৩০টি, রাউজানে ৭৪টি, সন্দ্বীপে ৩৫টি, ফটিকছড়িতে ৬১টি, পটিয়ায় ৫৭টি, আনোয়ারায় ৪৮টি, বোয়ালখালীতে ৫১টি, লোহাগাড়ায় ৩৫টি, চন্দনাইশে ২৫টি, হাটহাজারীতে ৪০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৩৬টি, মিরসরাইতে ১০৬টি, সীতাকুণ্ডে ৩০টি, সাতকানিয়ায় ৭৭টি ও কর্ণফুলীতে ৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। অন্যদিকে নগরীর মধ্যে ডবলমুরিংয়ে ১৬টি, পাহাড়তলীতে ১২টি, বন্দরে ১৫টি, পাঁচলাইশে ১৪টি, চাঁদগাঁওতে ১৭টি ও কোতোয়ালিতে ৬টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।

সহকারী শিক্ষক পদে বাঁশখালীতে ১৩২টি, রাউজানে ৯০টি, সন্দ্বীপে ৯৭টি, ফটিকছড়িতে ১১০টি, পটিয়ায় ৯৩টি, আনোয়ারায় ৪২টি, বোয়ালখালীতে ৬৯টি, লোহাগাড়ায় ৭২টি, চন্দনাইশে ৫৬টি, হাটহাজারীতে ১০৩টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪৮টি, মিরসরাইয়ে ১২৬টি, সীতাকুণ্ডে ৪৩টি, সাতকানিয়ায় ৪৮টি ও কর্ণফুলীতে ৫টি পদ শূন্য। অন্যদিকে নগরীর মধ্যে ডবলমুরিংয়ে ২১টি, পাহাড়তলীতে ২৩টি, বন্দরে ২৮টি, পাঁচলাইশে ১৭টি, চাঁদগাঁওতে ২৮টি ও কোতোয়ালিতে ১১টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য।শিক্ষাবিদদের মতে,শিক্ষার প্রধান এবং প্রথম স্তম্ভ প্রাথমিক বিদ্যালয়।আর সেখানে শিক্ষা অর্জনে ব্যাহত হলে  সারাজীবন ভুগতে হয়।তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক না, সকল ক্ষেত্রে শতভাগ রাখতে।এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে কোন বাধা থাকবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রেখে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি না থাকেন, তাহলে ক্লাস ব্যবস্থাপনা, শিক্ষকদের উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি দেখভাল করার কেউ থাকে না। আমাদের গ্রামেগঞ্জে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেগুলোর বেহাল অবস্থা। সেখানে প্রধান শিক্ষক অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। সেখানে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে যদি প্রধান শিক্ষক না থাকে, তাহলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আর উপজেলায় বিদ্যালয়গুলো তদারকি করার জন্য পর্যাপ্ত লোকও যদি না থাকে, তাহলে তো পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে দ্রুতই শূন্যপদগুলো পূরণ করা উচিত।

ইএইচ

Link copied!