Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আদালতের রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক: বিএএসএ

সুমন খান

সুমন খান

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম


সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আদালতের রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক: বিএএসএ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আদালতের রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন৷

সোমবার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম এবং মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় দেশের সার্বিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে যা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একটি দক্ষ, জনমুখী, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক জনপ্রশাসন গড়তে সরকারের এই উদ্যোগকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুরু থেকেই স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক বৃহত্তর কল্যাণ চিন্তার পরিবর্তে নিজ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের  সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সকল সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের সকল কার্যক্রমকে গতিশীল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কমিশনের দাখিলকৃত সুপারিশের মধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করা উচিত বলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে। তন্মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের পদ উপসচিবসহ তদূর্ধ্ব যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবকে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ এ অন্তর্ভুক্ত করে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিএসসি কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য সার্ভিস থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানকে অধিকতর যৌক্তিক বলে কমিশন মন্তব্য করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ১০ বছর চলার পর মহামান্য আপিল বিভাগের রায় ও রিভিউ শেষে ২০১৬ সালে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয় এবং উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশকে বৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করা হয়। আপিল বিভাগ প্রশাসন ক্যাডারের প্রাসঙ্গিক কর্ম অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিকভাবেই প্রশাসন ক্যাডারের সাথে উপসচিব পদটির সম্পর্ক বিবেচনায় উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত অধিকার আছে এবং অন্য ক্যাডারের সহজাত অধিকার নেই বলে ঘোষণা করে। সুতরাং কমিশনের এই মতামত উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক।

এতে আরও বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কোটা হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করা অধিকতর যৌক্তিক মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কোটা নেই বরং অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্যই ১৯৮৯ সালে কোটার প্রচলন করা হয়েছিল।

মামলার পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন ক্যাডার চয়েজ দেওয়াদের মধ্যে যেসকল প্রার্থী মেধা তালিকায় উপরের দিকে স্থান অধিকার করিয়াছেন এবং প্রশাসন ক্যাডার যদি পছন্দ (Option) জ্ঞাপন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার শূন্যপদ সমূহে তাহাদিগকে নিয়োগ প্রদানের জন্য পিএসসি সুপারিশ করিবে’। ফলে, ৭৫ শতাংশ এর বদলে ৫০ শতাংশ করা হলে বরং বিসিএস পরীক্ষায় মেধায় পিছিয়ে পড়াদের সাথে এগিয়ে থাকাদের সমানভাবে বিবেচনা করা হবে যা মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নির্মাণকে ব্যাহত করবে। এতে করে, শাসন ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের ভারসাম্য বিপর্যস্ত হতে পারে। এছাড়া এটি বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক সিভিল সার্ভিসের অভিজ্ঞতার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।

এছাড়াও ১৯৯২ সনে বিসিএস (সচিবালয়) এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একীভূত হওয়ার পর সচিবালয় সার্ভিসের সকল পদ তথা সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ইত্যাদি প্রশাসন সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হয়। পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদের ফিডার পদ হচ্ছে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিবের ফিডার পদ সহকারী সচিব। যেহেতু উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ, সেহেতু পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারকে শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে তার পরিবর্তে পার্শ্ব-নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়।

তাই, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পর্যালোচনা বাস্তবায়ন না করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অ্যাসোসিয়েশন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে জনকল্যাণমুখী শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সংস্কার কর্মসূচিসহ যাবতীয় কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সকল সদস্য বদ্ধপরিকর।

ইএইচ

Link copied!