Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫,

রাজবাড়ীতে অবৈধ শতাধিক ইটভাটায় চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

মার্চ ২, ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম


রাজবাড়ীতে অবৈধ শতাধিক ইটভাটায় চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

রাজবাড়ীতে ৯০টি ইটভাটার সব গুলোই অবৈধ। তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠা এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ভাটা মালিকদের দাবি প্রতি বছর প্রায় প্রতিটি ভাটা পরিচালনার জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে প্রশাসন সহ সকল দপ্তরকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি ভাটা মালিকদের।  তবে প্রশাসনের দাবি তারা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন।

রাজবাড়ি পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলার ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত ১৯টি ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন রয়েছে। বাকিগুলোর কোন ছাড়পত্র নেই। এ বছর ৪৯টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ৭টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২টি গুড়িয়ে দেওয়া সহ জরিমানা করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি, কালুখালী, রাজবাড়ী সদর ও পাংশা উপজেলার প্রতিটি ইটভাটাই ৩ ফসলী জমিতে গড়ে উঠেছে। ইটভাটার পাশেই রয়েছে ঘনবসতি, স্কুল, মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও বাতাসে কালি উড়ে স্কুলের মধ্যে প্রবেশ করছে।

কালুখালীর কালিকাপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামে এমবিবি বিকস, বোয়ালিয়ার ৭৭৭ বিকস, মোহনপুরের কেসিবি বিকস, কেবি বিকস ২টি, রাজবাড়ি সদর উপজেলার বাগমারার এসবিএস বিকস, রাজবাড়ী পৌরসভার চরলক্ষীপুর এসবিবি বিকস, বাগমারার কেএমবি বিকস, খানখানাপুর আরএন্ড বিকস, গোয়ালন্দ উপজেলার ভাগলপুর এসআইবি বিকস, এএসবি বিকস, রামকান্তপুর রাবেয়া বিকস, বালিয়াকান্দির এএমবি বিকস, টিএমবি বিকস, এডিবি ব্রিকস সহ প্রতিটি ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। এ ভাবেই রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী উপজেলাতে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয় আব্দুল আলিম, রেহেনা আক্তার, সুমন খান বলেন, ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ কাঠ পোড়ানোর কারণে কালোধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলের মাঠে কালো ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। ইটভাটায় মাটি নিতে গিয়ে সড়কের উপর পড়ে ঘটছে দুঘর্টনা। সরকারের কোটি কোটি টাকার সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন ইটভাটা মালিক বলেন, কয়লার দাম বেশি হওয়ার কারণে ইটের খরচ বেশি হয়। এ কারণে তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন। প্রতিটি ইটভাটায় প্রতিদিন ৩শত মন কাঠ লাগে। প্রকাশ্যে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কিভাবে কাঠ পোড়াচ্ছি তা ডিসি অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউএনও অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎকার নেন, উনারা ভালো বলতে পারবেন। ভাটা চালুর আগেই ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভ্যাট-ট্যাক্স সহ সব মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে চালু করতে হয়।  

তবে এখন পর্যন্ত পাংশা, কালুখালী, রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হারুন-অর রশীদ বলেন, ৪৯টি ইটভাটাকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ৭টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২টিকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়াসহ জরিমানা করা হয়েছে। তবে চলতি বছর পর্যন্ত কোনো ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন নেই। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মিজ সুলতানা আক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বিআরইউ
 

Link copied!