Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪,

যে কৌশলে ভোটে যাবে বিএনপি

মার্চ ১৪, ২০২২, ০৬:৩০ পিএম


যে কৌশলে ভোটে যাবে বিএনপি

দ্বাদশ নির্বাচনেও বিএনপি ভোটে যাবে! যদিও ঘোষণা দেয়া হয়েছে চলমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না দলটি। মাঠ ছেড়ে নয়, মাঠে থেকেই ভোটের প্রস্তুতির জন্য লন্ডন থেকে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। নির্বাচনে জিততে হলে নির্বাচনের আগেই জিততে হবে। অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণই বিএনপির বড় অস্ত্র, জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছ থেকে এমন পরামর্শ এসেছে স্থায়ী কমিটিতে। নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সরাতে এবং চাপে রাখতে দেয়া হয়েছে কঠোর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা। 

জনসম্পৃক্ততা ইস্যুতে মাঠে থাকতে নেয়া হয়েছে সিরিজ কর্মসূচি। অসুস্থ না হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে থাকতে হবে। দ্বাদশ নির্বাচনে আগে মাঠের সক্রিয়তার মাধ্যমে নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ যোগ্যতা আর দলে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়া হবে না। মাঠের কর্মসূচিতে ভূমিকার মাধ্যমে দলের সম্মানের চেরাগ তুলে দেয়া হবে। 

এমন নির্দেশনায় হঠাৎ ঢাকা কর্মসূচিতে বিস্ময়কর উপস্থিতি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও সবাই মাঠে নেমে গেছেন। চলছে একের পর ইস্যু নিয়ে সিরিজ কর্মসূচি। বিএনপির সভা-সমাবেশে উপস্থিতিতে জনস্রোতও দেখা যাচ্ছে। পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সাথে সংঘর্ষ করে ব্যারিকেড ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘটনাও ঘটেছে। 

সম্প্রতি ফেনী শহরে পুলিশের উপস্থিতিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কর্মসূচি পালনের পর আরেকটি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কক্সবাজারেও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এখন দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে প্রতিদিনই বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষও হয়েছে।

মাঠে ও ভোটে থাকতে নেয়া হচ্ছে বেশ কিছু কর্মসূচিও। পরিস্থিতি বুঝে ট্রেন মার্চ ও লংমার্চ কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে বিএনপির। ঢাকার কোনো স্থানে আসতে পারে বৃহৎ কর্মসূচিও। ইসি ঘেরাওসহ আরো নানান বিষয়ে আন্দোলনে সিদ্ধান্ত আছে দলে। সব মিলিয়ে বিএনপি কৌশলও পরিবর্তন করছে। আর এ কৌশলে এবার যুক্ত রয়েছে নয়া নেতৃত্বের একটি অংশ। 

এছাড়া চলমান কৌশলগুলোতে ভালো ফলাফল দেখছে দলটি।  স্থানীয় সরকার নির্বাচনে না গিয়ে লাভ এসেছে বিএনপির ঘরে। চলমান ভোটে খুন, আহত, সংঘর্ষ, গুলি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের অধীনে ভোটের চিত্র ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা বিশ্ব দরবারে স্পষ্ট করা গেছে। আউয়াল কমিশনের ইসি গঠনে নাম না দিয়ে বৈঠকে না গিয়েও সাধারণ মানুষ থেকে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। 

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরকারের অনিয়মের আমলনামা পাঠানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের দরবারগুলোতে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব ভোটে অনিয়ম, নিয়ন্ত্রণ, খুনোখুনি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ও শিশুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নির্যাতন, বুয়েটের আবরার হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা হরণ, আইনের শাসন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। 

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শেয়ার বাজার লুট, ব্যাংক কেলেঙ্কারি, বিডিয়ার বিদ্রোহ, সর্বশেষ র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসহ সরকারের আমলনামা নিয়ে বিশেষ ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে সরকারের নেতিবাচক খবরগুলো সিডি ও চিত্রাকারে দাঁড় করানো হয়েছে। এক ডজন নেতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে চৌকস টিম। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ, ইশরাক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন লড়ছেন এ কাজে। লন্ডনে বসে কাজের মনিটরিং করছেন তারেক রহমান। একই সাথে নেয়া হয়েছে কর্মসূচিও। সময়ের সাথে সাথে তা পৌঁছে যাচ্ছে বিশেষ স্থানে।

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে প্রতিষ্ঠিত একটি জনবান্ধব রাজনৈতিক দল। যা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন জিয়াউর রহমান, লালনপালন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং চলমান সময়ে এগিয়ে নিচ্ছেন তারেক রহমান। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও রাজনীতিকদের বড় একটি অংশ চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে দূরে রেখে আরেকটি নির্বাচনি ছক তৈরি করতে বিএনপি ভাঙতে। সেটি বুঝতে পেরে দলটি যেকোনো পরিস্থিতিতে ভোটে যেতে প্রস্তুতি রাখবে। 

ঢাকার মাঠ দখলে সিরিজ কর্মসূচি : হঠাৎ ঢাকার কর্মসূচিতে বিএনপির সক্রিয়তা। কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে। চলছে সিরিজ কর্মসূচি। গত এক সপ্তাহের কর্মসূচি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিদিনি ঢাকায় একাধিক কর্মসূচি পালন হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সবাই উপস্থিত ছিলেন। গত ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। 

এছাড়া একই দিন সকালে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া ১২ মার্চ সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

১১ মার্চ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে দেখা গেছে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি। ১০ মার্চ সকালে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ছাত্রদলের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একই দিন সকালে মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগেও কর্মসূচি ছিল। 

১০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের নারী ও শিশু অধিকারের কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বহু নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। একই দিন বিকেলে রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিলে সেখানেও সমাবেশে শত শত নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। ৯ মার্চ প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ দেন। 

৮ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যুবদলের সমাবেশে ছিল হাজার হাজার নেতাকর্মী। প্রধান অতিথি ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৭ মার্চ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির উপস্থিতিতে একটি কর্মসূচি পালন করে। বিএনপি বলছে, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এভাবেই ইস্যুভিত্তিক তাদের কর্মসূচি চলবে।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির প্রতি এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। জনগণ দেখেছে, দেশের প্রতিটি কঠিন সময়ে বিএনপিই একমাত্র মানুষের পক্ষে কথা বলেছে। অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। 

ইনশাআল্লাহ আগামীতেও হবে। আগামীতে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আবার মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামের, প্রতিটি ওয়ার্ডে যে সব নেতা রয়েছেন তারাই আগামীর শূন্যতা পূরণ করবেন। আর তার নেতৃত্ব দেবেন আমাদের তারুণ্যের অহঙ্কার জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান।’ বিএনপির জন ইস্যু নিয়ে মাঠে রয়েছে তা আরো তীব্র হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে ‘নির্বাচন ও সংলাপ’ কোনোটাতে বিএনপি আর যাবে না। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী নির্বাচনে এই রেজিমের অধীনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। শুধু তাই নয়, কোনো আলোচনায় বিএনপি যাবে না। কারণ, আমরা বিগত দিনে আলোচনাও করেছি, নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছি। তার ফলাফল বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে, বিশ্বাবাসীর কাছে এটা পরিষ্কার দিনের আলোর মতো। বিএনপির জনগণের ইস্যু নিয়ে মাঠে থাকবে।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপি এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও মানুষ বিএনপি থেকে দূরে সরে যায়নি। মানুষ এখন বিএনপির মাধ্যমে চায় চলমান দুঃশাসন থেকে মুক্ত হতে। এই মাফিয়া সরকার থেকে বাঁচতে। মানুষ তাদের জীবনের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। মানুষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে চায়। কিন্তু এই সরকার জনগণ নিয়ে ভাবে না। তাই আজ ঘরে হাহাকার। বিএনপি জনগণের দল, জনগণকে নিয়েই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাবে।’