রায়হান আহমেদ তপাদার
জুন ২৭, ২০২২, ১২:০১ পিএম
রায়হান আহমেদ তপাদার
জুন ২৭, ২০২২, ১২:০১ পিএম
বিগত কয়েক বছরে এশিয়ার গণতন্ত্রের অর্জন নেহাত কম নয়। এই এক প্রজন্ম আগেই এশিয়ার অর্ধেক দেশে জোর করে ক্ষমতায় আসার নজির দেখা গেছে আর আজ দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে জোর করে ক্ষমতায় বসে যাওয়াটা সহজ কাজ নয়। এমনকি মিয়ানমার শত সমস্যা সত্ত্বেও নিশ্চিতভাবে কর্তৃত্ববাদী ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করাটা খুব একটা সুখকর হবে না, সে পথ বন্ধুর। এশিয়ার গণতন্ত্র মসৃন পথে এগুচ্ছে না।
কোথাও গণতন্ত্রের নামে সর্বাত্মক-এককেন্দ্রিক শাসক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখছে। কোথায়ও যে গণতন্ত্র আছে তা হুমকি ও ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ছে। কোথাও গোষ্ঠী ও সর্বাত্মক শাসকের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভ তৈরি হচ্ছে ও তার পতন ঘটছে। কোথাও কয়েক যুগ আগে গণবিক্ষোভে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর তদের পোষ্যরা আবার ক্ষমতায় আসছেন। কয়েক দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ চড়াই-উৎড়াই একটি ধারাবাহিক বিষয়। তা কখনো সম্মুখ ও বিপরীতমুখী।
১৯৮৬ সালে ফিলিপাইনে এক ব্যাপক গণবিক্ষোভে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতন হয়। ৯ মে ফিলিপাইনের নির্বাচন হয়ে গেল। সে নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে ১৯৮৬তে জনবিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের পুত্র জুনিয়র ফার্দিনান্দ বং বং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
শুধু নির্বাচিতই হননি তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধান নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কোস জুনিয়র তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি বর্তমানে ফিলিপাইনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট লেনি রোব্রেডোর চেয়ে প্রায় দুই কোটির বেশি ভোট পেয়ে জিতেছেন। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। তারই প্রকাশ দেখা গেল ফিলিপাইনের এই রাজনৈতিক পরিবর্তনে। মার্কোস কেমন শাসক ছিলেন? এ প্রশ্নের এক কথার উত্তর হচ্ছে, বিশ্বে সামরিক স্বৈরাচাররা যেমন হন তিনিও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।
গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস-নষ্ট পদদলিত করে তিনিও ক্ষমতায় টিকেছিলেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে সকল প্রকার নিষ্ঠুরতার আশ্রয়ই তিনি নিয়েছেন। তার সময়ে প্রায় এক হাজার নাগরিক গুম হয়েছে। প্রায় হাজার তিনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার-হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে জেলে পুরেছেন, পঙ্গু করেছেন, দেশ ছাড়া করেছেন। তার পরিবারের দুর্নীতি-লুটপাট বিশ্ব সংবাদে পরিণত হয়।
সে সময়ে তাকে বলা হতো বিশ্বের ধনী ও সম্পদশালী শাসকদের একজন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে মানুষ সব ভুলে যায়। ভুলে যাবার কারণ, স্বৈরাচারপরবর্তী তথাকথিত নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শাসকরা এই সব পতিত খলনায়কদের চেয়ে ভালো কোনো শাসন উপহার দিতে পারেনি। তারাও তাদের ফেলে যাওয়া বুটের মধ্যে পা রেখেই দেশ শাসন করেছে।
এ সবই পরবর্তী শাসকদের ব্যর্থতার ফলাফল। তারাই আজ এই কথিত নির্বাচিত গণতান্ত্রিকদের চেয়ে-ভালোর লেবাসে উত্তম শাসক ও ত্রাণকর্তা হয়ে ফিরে আসছেন। সেটা কি দুঃখজনক নয়?
অন্যদিকে আরেকপ্রান্তে-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভে শ্রীলঙ্কায় সর্বাত্মক কর্তৃত্ববাদী এক শাসক রাজা পাকসের পতন ঘটেছে। তার পদত্যাগ করার পর জনতা এমপি-মন্ত্রী, রাজনীতিক, আমলাদের বাড়ি-গাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের ওপর হামলা করেছে। যানবাহন ভাঙচুড় করছে, নদীতে ফেলে দিচ্ছে। এমপিসহ ডজনখানেক মানুষকে পিটিয়ে মেরেছে। লুটপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীশাসন ও অদূরদর্শী নীতি একটি দেশের কি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে শ্রীলঙ্কা তার জলন্ত উদাহরণ।
তারা বৈদেশিক মুদ্রা ও রিজার্ভের সংকটে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। যে কারণে সেখানে খাদ্য ও পণ্য সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে চরম নৈরাজ্য ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। মাসাধিককাল ধরে এই আন্দোলন চলছে। শাসক পদত্যাগ করলেও তার দলীয় লোকজনকে লেলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করতে। তারা তাদের তাবুতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, তাদের ওপর হামলা আক্রমণ করছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন এতদিন শান্তিপূর্ণ থাকলেও এখন আর সেটা নেই। তা এখন সহিংশতায় রূপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকারবিরোধী দলগুলোও পরবর্তী সরকার গঠন ও পরিচালনার কোন রূপরেখা প্রকাশ করতে পারেনি। তারা এখন পর্যন্ত কোনো যৌথ বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান করেনি। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার ভাগ ও ক্ষমতায় থাকাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানকে দুর্বল ও অকার্যকর করে ফেলে। তখন সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী ও প্রকট হয় এবং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। দক্ষিণ এশিয়ায় নির্বাচনি গণতন্ত্র অস্বস্তিকর এক অবস্থায় সহাবস্থান করে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে। তীব্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হলে তা রাজনীতিবিদদের তার নিজের সংসদীয় আসনের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। আদর্শগতভাবে এতে তারা অধিক দায়িত্বশীল হন।
কিন্তু এই প্রতিযোগিতা তাদের আদালত, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইন প্রয়োগকারীদের রাজনীতিকীকরণের দিকে ঠেলে দিতে পারে। শ্রীলঙ্কার শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিকরা সংকটের সময়ে সংবিধানের প্রতি উল্লেখযোগ্য অবজ্ঞা দেখিয়েছেন তাদের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের একটি যুক্তিসঙ্গত একটি সমাধান পেতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিচার বিভাগ বিস্ময়কর দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছে। তারা একটি চাপা কঠিন পরীক্ষা মোকাবিলা করেছে, যেটা কখনো প্রথমে ঘটা উচিত ছিল না। ভারতেও সরকার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ আছে। এর উদ্দেশ্য নরেন্দ্র মোদির দল যেন সুবিধা পায়।
এর ফলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো (সিবিআই) ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) নাটকীয়, উচ্চ মাত্রার বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ শত্রুতার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। এমন হস্তক্ষেপ বিজেপির পুরনো রীতি ও ভারতের দীর্ঘদিনের ইতিহাস। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শিখর যখন বিজেপি ধরে রাখতে চাইছে তখন রাষ্ট্রীয় অভিজাত প্রতিষ্ঠানের এই সংঘাতময় অবস্থাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিলান বৈষ্ণব বর্ণনা করেছেন ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট’ হিসেবে।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশই বিপরীত সমস্যার সম্মুখীন। সেখানে নির্বাচিত রাজনীতিকরা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে যেমন হস্তক্ষেপ করেন তার চেয়ে বেশি নাগরিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে স্ব-শাসিত সেনাবাহিনী। পাকিস্তান ও মিয়ানমারে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে সেনাবাহিনী। এ দুটি দেশেই সেনাবাহিনীর দীর্ঘ উপস্থিতির ইতিহাস আছে। দুই দেশেই সেনাবাহিনী জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তারা অব্যাহতভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘তামাদ’ নামে পরিচিত।
তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জাতীয় সংসদে তাদের শতকরা ২৫ ভাগ আসনের গ্যারান্টি নিশ্চিত করেছে। তারা রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা চালিয়েছে তাতে তারা দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মার জাতিগোষ্ঠীর কাছ থেকে নতুন করে ব্যাপক হারে সমর্থন পেয়েছে। তারা এটাকে দেখে বাঙালি অনুপ্রবেশকারী ও বিদেশিদের নাক গলানো থেকে দেশকে নিরাপদ রাখার যুদ্ধ হিসেবে। সেনাবাহিনী সেখানে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করেছে। মিয়ানমারে সন্ত্রাসবিরোধীর (কাউন্টার ইনসার্জেন্সি) বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত রেখেছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বার্মার জাতীয়তাবাদ ঝলসে ওঠার পর নিজেদের তা থেকে বিরত রাখে সেনাবাহিনী।
এরমধ্য দিয়ে তারা জাতির সুরক্ষক এমন একটি অবস্থান নিয়ে নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করে। সাবেক স্বৈরশাসকের চেয়ে এটা তাদের এক ভিন্ন কৌশল। কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে জনগণ চালিত তৃণমূল আন্দোলনগুলো গণতান্ত্রিক সংস্কার, মানবাধিকার, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা এবং চরম দারিদ্র্যের অবসানের জন্য লড়াই করেছে। এ আন্দোলনগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, যা নব্য উদারপন্থি ‘রোড টু সার্ফডম-এর বিকল্প হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে। যার সঙ্গে অঞ্চলটির অনেক অংশ আগে থেকেই সহাবস্থান করে আসছে। দুর্ভাগ্যবশত সামপ্রতিক দশকের কঠিন লড়াইয়ের অর্জন এখন হুমকির মুখে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতার অবক্ষয় আগের অবস্থার দিকেই নিয়ে যাবে, যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, ব্যাপক দুর্নীতি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক অভিজাতদের মুনাফাখোরী, মিডিয়া দমন এবং সমাবেশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা।
এরসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ব্যাপক অভিবাসন, ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো যুক্ত করলে ঝুঁকিগুলো আরও তীব্র হবে। ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদের উত্থান এবং মুক্ত সমাজের পতন ক্রমেই সম্ভাব্য হয়ে উঠছে; প্রকৃতপক্ষে এটা এরই মধ্যে ঘটছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সুশাসন এবং জবাবদিহিতার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার এ শক্তিগুলোকে মোকাবিলা করার একমাত্র উপায়।
গণতান্ত্রিক সূচকে পিছিয়ে যাওয়া একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ রাষ্ট্রগুলোও এর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। তবে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি বিশেষভাবে দৃশ্যমান। এ বছরের শুরুর দিকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে কর্তৃত্ববাদ তুঙ্গে উঠেছে। থাইল্যান্ডে একটি রাজকীয় সামরিক ব্লক ক্ষমতায় তার দখল সুসংহত করেছে। ফিলিপাইনে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ পপুলিস্ট দণ্ড স্থান পেয়েছে। অঞ্চলজুড়ে দুর্নীতি বেড়ে চলেছে।
নাগরিকদের মানসম্পন্ন চাকরি, অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নষ্ট হচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের হিসাব মতে, বিশ্বের ১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ পূর্ণমাত্রার গণতন্ত্রের তালিকায় আছে। ৫৫টি দেশ ত্রুটিপূর্ণ তালিকায়। ৩৯টি দেশ হাইব্রিড রেজিমের তালিকায় এবং ৫৩টি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় রয়েছে। সবচেয়ে কম গণতন্ত্র থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, লাওস, চীন, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল এবং হংকং। জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং অন লাইন ডেস্ক ২৪-০৩-২০১৮ এর প্রতিবেদনে দেয়া সূচকে গণতন্ত্রের মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে উরুগুয়ে, দুইয়ে আছে এস্তোনিয়া, তিন নম্বরে আছে তাইওয়ান এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে চীন ১০৯ নম্বরে, এর পরের অবস্থান যথাক্রমে ইয়েমেন, সিরিয়া এবং সোমালিয়ার দখলে। রাশিয়ার অবস্থান ৮১ নম্বরে।
বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। সূচকে ভারতের অবস্থান ২৪ এবং শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৪২ নম্বরে। উক্ত প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদ- পূরণ করছে না। দেশগুলো হলো লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা। এই পাঁচটি দেশ বিগত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ মানের নির্বাচন পদ্ধতি মেনে চলছে, যা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না। এই দেশগুলোতে বছর পরিক্রমায় গণতন্ত্রের ভিত ক্রমাবনতিশীল হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর একাধিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন মূলত একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু আছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে বহু বছর ধরে সামরিক শাসনব্যবস্থা চালু আছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো, জর্দান, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, কুয়েত, মিশর, কাতার, ওমান, বাহরাইন, ব্রুনাই এবং এছাড়া সোয়াজিল্যান্ড, মোনাকো, ভ্যাটিকান সিটি, ভুটানসহ আরও বহু দেশে গণতন্ত্র নেই।
এসব দেশে রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকর আছে। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা, নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে আক্রান্ত করা ও সেনাবাহিনীর অব্যাহত প্রভাবের মতো এসব সমস্যা উদার গণতন্ত্রের জন্য অনেক দিক দিয়েই সুবিধার নয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতা বলে যে, অগ্রগতি ও পশ্চাদ্ধাবনকে আলাদা করা খুব কঠিন। দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, কিছু দেশে গণতন্ত্র এখনো আছে, যেমন হাঙ্গেরি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একই নয়। সর্বোপরি গণতন্ত্রের বিতর্কিত প্রকৃতি এখানে নজরদারির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট