Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, নেই প্রতিরোধের সুব্যবস্থা

হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান

এপ্রিল ৬, ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম


বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, নেই প্রতিরোধের সুব্যবস্থা

দৈনন্দিন চলাফেরা করার সড়কগুলো যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুর ফাঁদ। শিশু, বৃদ্ধ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী কেউ বাদ যাচ্ছে না দুর্ঘটনা থেকে। বেপরোয়া যান চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, নিয়ম না মেনে রাস্তা পার; মোটাদাগে এগুলোই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যত মানুষ মারা যায়, তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩ শতাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী।

সবার জন্য সড়ক নিরাপদ করতে চার বছর আগে ২০১৮ সালে দেশকাঁপানো আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। তখন সরকার দুর্ঘটনা কমানো নিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরেছিল। তাদের আন্দোলনের ফলে নতুন সড়ক পরিবহন আইনও হয়। তবে সড়ক নিরাপদ হয়নি। বর্তমানে সড়কগুলোকে ভয়াবহ মৃত্যুকূপ হিসেবে দেখছেন অনেকে। সরকার সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ করলেও, নিশ্চিত হচ্ছে না নিরাপদ সড়ক। এসব সড়ক দিয়েই জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষ চালছেন তাদের নিত্য দিনের কাজে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, জনসচেতনতা সৃষ্টির পরও কী কমছে সড়ক দুর্ঘটনা? দিন শেষে এমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে প্রশাসন ও সুশীল সমাজের কাছে।

গত বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে  দেখা গেছে, ২০২১ সালে সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ছয় হাজার ২৮৪ জনের মধ্যে ৮০৩ জনই শিক্ষার্থী। এই হিসেবে গত বছরে মোট মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। যেখানে এদের বেশিরভাগ মৃত্যুই হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। গণমাধ্যমে যে পরিমাণ তথ্য প্রকাশিত হয়, প্রকৃত দুর্ঘটনা তার চেয়ে চার বা পাঁচ গুণ বেশি।

বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বিআরটিএ’র হিসাবে প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন প্রাণ হারায়। সে হিসাবেও বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮০০ জন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বছরে ১২ হাজার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০ হাজার মানুষ প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।

চলতি বছরেই দুর্ঘটনার হার বেড়েছে কয়েক গুন। এর মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনা ছিল- গত ১৬ই মার্চ পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরে বাস দুর্ঘটনায় প্রায় ১৬ জনের মতো নিহত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে চালকেরা নিয়ম মানছেন না। চালক ও আরোহীরা হেলমেট পরেন না। এক মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি না ওঠার নিয়মটিও মানা হয় না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও অহরহ চলে। অনেকেরই মোটরসাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না।

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বিশ্লেষণ অনুসারে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের শিকার ব্যক্তিদের বড় অংশই বয়সে তরুণ ও শিক্ষার্থী।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু কারণ হলোঃ- বেপরোয়া গতি, বিপদজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, লেভেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বে-দখলে থাকা।  

শিক্ষার্থীদের চলাচল বেশি থাকায় দুর্ঘটনায় নিহতের পরিসংখ্যানে তাদের সংখ্যা বেশি। পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা বদলাতে উদ্যোগ না নেওয়া হলে এই বিশৃঙ্খলা থেকে বের হওয়া যাবে না। শৃঙ্খলা শুধু টাকা পয়সার বিষয় না, সুশাসনের বিষয়। তাই সড়ক খাতে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী
বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ
চরফ্যাশন, ভোলা

Link copied!