Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৪,

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষা, একটি প্রস্তাবনা

মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া

মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া

অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষা, একটি প্রস্তাবনা

চলতি বছরের ২৯ জুলাইয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ‘প্রাথমিক নিয়োগ পাবেন সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫৮৩ টি ক্লাস্টারে একজন করে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। তারা ওই ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই দু’টি বিষয়ে শিক্ষা দিবেন।

পরে সরকার প্রয়োজন মনে করলে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই দুই বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করবে।

এই সংবাদটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে সচেতন মহলকে অনুপ্রাণিত করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক যেহেতু নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, সেহেতু ধর্ম শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক কেন প্রয়োজন সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।

২০২১ সালের জনশুমারি অনুসারে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১.০৪ শতাংশ মুসলমান। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলমান জন-অধ্যুষিত এ দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীগণ যথাযথ ধর্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক সহযোগিতা ও পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের সিলেবাস যথেষ্ট সমৃদ্ধ। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। ফলে সমৃদ্ধ সিলেবাস থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীগণ সহীহ-শুদ্ধ করে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না বা নামাজসহ ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে পারেন না।

অনেক ধর্মপ্রাণ অভিভাবক পবিত্র কুরআন ও ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান দানের তাগিদে সন্তানকে নূরানী বা অন্যান্য মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাদ্রাসায় ভর্তি দোষের কিছু নয়। কিন্তু দেখা যায়, নূরানী পর্যায়ের পড়াশোনা শেষে অনেক অভিভাবক সন্তানকে পুনরায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী সহপাঠীদের সাথে পড়াশোনায় তাল মিলাতে পারেন না এবং অচিরেই স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়ে পড়েন।

এই লিখার শুরুতে আলোচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগের মতো করে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলে বর্তমান পাঠ্যক্রমের অধীনেই শিক্ষার্থীগণ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়া, সারাদেশে ৬৫ হাজারের অধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলে আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার নির্দিষ্ট ডিগ্রিধারী আলেমগণের অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৫ হাজার পদ সৃজন কিছুটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষায় কার্যকরভাবে সংযুক্ত করা যেতে পারে। সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত অঞ্চলে মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

এছাড়া, প্রত্যেক ‘স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নিজ নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় একজন করে আলেম নিয়োগ করতে পারে। সকালে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে কিছুটা সময় ধর্ম শিক্ষক শিক্ষার্থীগণকে সহীহ-শুদ্ধ করে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শিখাতে পারেন এবং নামাজসহ ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদান করতে পারেন।

 

লেখক:

মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া

ইউএনও, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Link copied!