আগস্ট ১৬, ২০২২, ০৫:৩৫ পিএম
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাস খালেদা জিয়া। তিনি ও গণতন্ত্র, এই দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এটাকে আলাদা করা যাবে না। যিনি একজন গৃহবূধ ছিলেন, জাতির প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজন সেই গৃহবূধ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্যে সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন থেকে সংগ্রাম শুরু তার। সারাটা জীবন এ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য, গণতন্ত্র চর্চা করার জন্যে তিনি সংগ্রাম করেছেন। এখন পর্যন্ত এই গণতন্ত্রের জন্যে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মামলায় তাকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, আমাদের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গণতন্ত্রের মা যিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন, যিনি গণতন্ত্র চর্চা করেছেন তাকে অবশ্যই প্রাথমিক এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এ জন্মদিনে আমরা তার দীর্ঘ আয়ু কামনা করছি, দোয়া করছি তিনি সুস্থ হয়ে, সুস্থ শরীরে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।
খালেদা জিয়া একজন সাধারণ নেত্রী নন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটা ইনস্টিটিউশন। তিনি সারাটা জীবন এ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তার জীবনকে গড়ে তুলেছেন গণতান্ত্রিকভাবে। তার সংসার, তার পার্থিব জীবনের সমস্ত সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে এদেশের মানুষকে একটা সমাজ উপহার দেওয়ার জন্য, মানুষকে মুক্ত করার জন্য তিনি লড়াই করে চলছেন নিরবধি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, যাদের তুলনা করা যায় একমাত্র পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে এদেশের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে, হত্যা করে, খুন করে এদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল, ঠিক একইভাবে আজকের অবৈধ অনির্বাচিত ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ধূলিসাৎ করেছে, ধ্বংস করে দিয়েছে।
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, আমাদের ৬০০ উপরে নেতাকর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে সরকার।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে গুম-খুনের তদন্ত দাবি
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গতকালই স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছে এই যে ভয়াবহ, ভয়ঙ্কর মানবাধিকারের যে চিত্র, এই চিত্র অবশ্যই শুধু নিন্দা নয়, এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা। এই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের যে হাইকমিশনার তাকে বলেছে যে, আপনি এটার নিন্দা করেন এবং এর সম্পর্কে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত অনুষ্ঠান করেন।
তিনি আরও বলেন, এটাকে হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের বহু ভাই চলে গেছেন, আমরা তাদের ফেরত পাইনি, আমাদের বহু নেতা চলে গেছেন তাদের ফেরত পাইনি। আজকে ৬০০ উপরে নেতাকর্মীকে এভাবে গুম করা হয়েছে, অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। এই মিলাদ মাহফিল থেকে আমি দাবি করছি, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
আমারসংগ্রাম/এসএম