সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৯:০২ পিএম
সরকার হটানোর এবারের আন্দোলনই ‘শেষ লড়াই’ বলে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানান।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের এবার হচ্ছে শেষ লড়াই। এবার আমাদের জীবনমরণ লড়াই করতে হবে। এবার সেই জাগপার কথায় বলতে চাই, হয় জীবন না হয় মরণ।
‘আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে একটা দূ্র্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি যা ওই উত্তাল সমুদ্রে যে সুনামি হয় সেই সুনামির মতো এই সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করব, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব, এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমারা আজকের এই ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অত্যন্ত সংকটময় মুহুর্তে পালন করছি। আমাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সর্তকতার সাথে নিতে হবে যেন কোনো মতে তারা সুযোগ না পায় আমাদেরকে তারা ভেঙে দিতে, গুড়িয়ে দিতে।
পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নই, আমরা কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নই। আমার ট্যাক্সের পয়সায় তাদের বেতন হয়, তাদের সংসার চলে, তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া শিখে, তাদের বউ-বাচ্চাদের কাপড় দেয়-তাই না। তারা আমাদের লোকজনকে গুলি করে মেরে ফেলতে এটা কী আমরা মেনে নেবো?
‘আমরা বলতে চাই, আপনাদেরকে আমরা কখনো প্রতিপক্ষ বানাতে চাই না। আপনারা দয়া করে জনগনের প্রতিপক্ষ হবেন না। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু সাহেব বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা কি চান পুলিশের ওপর এভাবে সেনশন আসুক, আপনারা কি চান এই বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ওপর সেনশন জারি করুক। আমরা এটা চাই, নিশ্চয় চায় না। আমরা সবাই আশা করব, পুলিশ জনগনের যে ন্যায্য অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার সেজন্য তারা সহযোগিতা করবে এবং যারা অন্যায় করছে, অবিচার করছে, যারা গুলি করে হত্যা করছে, যারা জোর করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মতো জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের বিরুদ্ধে জনগন জেগে উঠেছে, লড়াই শুরু করেছে, সেই লড়াইয়ে তারাও শরিক হবেন- এই আশা আমরা করতে পারি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেক চরাই উতরাই পার হতে হয়েছে। বার বার আঘাত এসেছে বিএনপিকে ধবংস করবার জন্যে, বার বার বিএনপিকে শেষ করে দেয়ার কাজ হয়েছে। কিন্তু বিএনপি কখনো দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, বিএনপি প্রতিবারই ধবংস স্তুপের মধ্যে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে এবং এদেশের মানুষকে সামনে নিয়ে আবারো তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে গেছে বার বার।
‘১/১১। ওরা ভেবেছিলো বিএনপিকে শেষ করে দেয়া যাবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের প্রতীক, আমাদের আশা-ভরসার স্থল তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে তাকে মিথ্যা সাজা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে, আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, গুম-খুন করে ভেবেছিলো বিএনপিকে ধবংস করে দেয়া যাবে। কিন্তু এই ১৫ বছরেও বিএনপিকে ধবংস করা যায়নি।’
তিনি বলেন, আজকে আবার ওই গ্রামের আইলের মধ্যে, সেই ধানের ক্ষেতের মধ্যে, গ্রামে-গঞ্জে বিএনপি জেগে উঠতে শুরু করেছে। ধানের গুচ্ছে আবার রক্ত জমেছে। সেই রক্তকে অবশ্যই আমাদের ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে।
‘আমরা যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম শুরু করেছি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাহেবের নেতৃত্বে, সেই গণতন্ত্রকে যুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতে হবে।’
‘আবার তারা আগের মতো গুলি করছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যখন বিএনপি আন্দোলন শুরু করেছে মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, চাল-ডাল-তেলের দাম মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তখন তারা সেই আগের মতো গুলি করে হত্যা করছে আমাদের সহযোদ্ধাদের-সহকর্মীদের।
‘গতকালকে গুলি করে হত্যা করেছে আমাদের নারায়নগঞ্জের যুব দলের কর্মী শাওনকে। কি লজ্জ্বার কি ধিক্কার যে, কালকে একজন এসপি বলছে যে, শাওন যুব দলের কর্মী নয়। আমি আজ সকালে গিয়েছিলাম নারায়নগঞ্জে। আমাদের দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মী, যুব দলের সব নেতা-কর্মী, শাওনের পরিবার, মা, তার আত্বীয়-স্বজন তারা সবাই বলেছে, অবশ্যই শাওন যুব দল করতো। সে গতকাল মিছিলের অগ্রভাগে ছিলো। সেই ছবি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে।’
‘শাওনের ভাইকে দিয়ে জোর করে মামলা দায়ের’
মির্জা ফখরুল বলেন, ওরা (পুলিশ) কত নোংরা হতে পারে। কি করেছে জানেন। গতকাল রাতে শাওনের মৃতদেহ তার আত্বীয়-স্বজনকে দেয়নি, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের দেয়নি। শাওনের লাশ তারা গোপনে পুলিশ পাহারায় নিয়ে গিয়ে দাফন করেছে।
‘শুধু তাই নয়, শাওনের ইমিডিয়েট বড় ভাই তাকে দিয়ে জোর করে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তারা একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমি হুশিয়ার করতে চাই, যারা এই ধরনের মিথ্যা মামলা করাবেন, যারা এভাবে গুলি করে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করবেন, গণতন্ত্রের নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করবেন তাদের প্রত্যেকের সমস্ত হিসাব কড়ায়-গন্ডায় নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভোলাতে মামলা করেছি। ভোলায় নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের হত্যা মামলা করেছি, আমরা অবশ্যই শাওনের হত্যা মামলা করবো। আপনারা যারা জেলায় জেলায় আমাদের কর্মীদেরকে আহত করছেন তার প্রত্যেকটির হিসাব নেয়া হবে।
‘ভয় পেয়ে গেছে। সেজন্য তারা আবার সেই ২০১৩,২০১৪, ২০১৫, ২০১৮ এর মতো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা শুরু করেছে। এই কায়দায় এটা করছে। সিরাজগঞ্জে করেছে, সেখানে আমাদের এক কর্মীর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, নড়াইলে করেছে, নেত্রকোনায় করেছে, নারায়নগঞ্জে করেছে। তারা ভেবেছে এভাবে আগের মতো গুলি করে, গুম করে যেমন ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, চৌধুরী আলমকে গুম করেছে, আমাদের ছাত্র নেতাদের গুম করেছে সেভাবে গুম করে তারা আবারো ক্ষমতায় টিকে থাকবে- সেই চিন্তা করবেন না।’
কেএস