বরিশাল প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৪, ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম
বরিশাল প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৪, ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম
পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি খাদ্যের অপচয় বন্ধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তিনি সোমবার (২৪ অক্টোবর) বরিশাল সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতিনিয়ত দেশের মানুষ বাড়ছে কিন্তু জমি কমছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করে কৃষক ফলন বাড়িয়েছেন। দেশে ৪ কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয় যদিও এর থেকে এখন বেশ কিছু খাদ্যশস্য ননহিউম্যান কনজামশনে চলে যায়---যা হিসাবে ধরা হয়না।
চকচকে সিল্কি চাল খাওয়া থেকে জনসাধারণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ধান থেকে চাল তৈরি করতে মিলাররা ৪/৫ বার মেশিনে দেন, এতে চালের পুষ্টিকর অংশ চলে যায়; থাকে শুধু কার্বোহাইড্রেট। বারবার চাল মেশিনে পালিশ করতে বিদ্যুতের খরচও যোগ হয়। চালের দাম বেড়ে যায় যা পরবর্তীতে ভোক্তার পকেট থেকে পরিশোধ করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, সারা পৃথিবীতে খাদ্য সংকট হতে পারে এমন সতর্কবার্তা বিভিন্ন সংস্থা হতে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়ে খাটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের উর্বর মাটিতে বছরব্যাপী শস্য ফলে। প্রকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট হবে না।
সাইলো নির্মাণ সংশ্লিষ্ট যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও যথাযথ মান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বব্যাংককেও ধন্যবাদ জানান তিনি ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষির উন্নয়নে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। বরিশালে রাইস সাইলো নির্মাণের ফলে দূর্যোগকালে এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।
খাদ্য সচিব বলেন, খাদ্য নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। খাদ্যের অপচয় যেন কোনভাবে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বিশেষ অতিথির হিসাবে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে খাদ্যমন্ত্রী নির্মাণাধীন বরিশাল রাইস সাইলোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল রাইস সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। সাইলো নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান CIL-GSI JV (Joint Venture of Confidence Infrastructure limited, Bangladesh and The GSI Group LLC, USA)। সাইলোর নির্মাণে চুক্তিমূল্য ৩৩০.৮৬ কোটি টাকা এবং নির্মাণকাল ২৪ মাস। অদ্যাবধি সাইলোর কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৫২ শতাংশ।
সাইলোর ধারণক্ষমতা ৪৮,০০০ মেট্রিক টন। এতে প্রতিটি ৩০০০ মে. টন ক্ষমতার মোট ১৬ টি সাইলো বিন রয়েছে।
এ সমস্ত সাইলো বিনে কীটনাশক ব্যবহার ব্যতিরেকেই অত্যাধুনিক চিলার যন্ত্রের মাধ্যমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মজুত চাল প্রায় ২ (দুই) বছর সংরক্ষণ করা যাবে। সড়ক ও নৌপথে এ সাইলোর সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বরিশাল অঞ্চলের আটো রাইস মিলগুলোর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও আশুগঞ্জ সাইলো হতে উদ্বৃত্ত চাল এই সাইলোতে বাল্ক আকারে সরবরাহ করা হবে। অপরদিকে ৫০ কেজির বস্তা, ৩০ কেজির ব্যাগ এবং ৫ কেজির প্যাকেট করে সড়ক ও নৌপথে বিভিন্ন এলএসডি ও সিএসডিতে এই সাইলো হতে চাল বিতরণের জন্য প্রেরণ করা হবে ।
৫ কেজির প্যাকেটে চালের সাথে পুষ্টি উপাদান মিশ্রিত করে বিতরণ করা হবে। ফলে এই সাইলো জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখবে।
টিএইচ