আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো
নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:৫৯ পিএম
আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো
নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:৫৯ পিএম
আগামীকাল শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। আর এই সমাবেশ ঘিরে অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে বরিশাল নগরী সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। তবে সমাবেশের দুই দিন আগেই বিভাগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও লঞ্চ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সাথে সারাদেশের সড়ক ও নৌপথে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবশেষ শনিবার ভোর থেকে বরিশালের খেয়া নৌকায় যাত্রী পারাপারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে বন্ধ করে দেয়া হয় ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস চলাচল। যেকারণে সারাদেশ থেকে এখন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে বিভাগীয় শহর বরিশাল। এর আগে মহাসড়কে নসিমন, করিমন, থ্রি-হুইলার সহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে পরিবহন এবং মহাসড়কে চলাচলের দাবিতে থ্রি-হুইলার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে ৪ ও ৫ নভেম্বর দুইদিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
তবে কোন কারণ ছাড়াই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচল। ফলে পথে পথে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন সাধারণ জনগণ। সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। যেকারণে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৩৬ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।
সরজমিনে আজ শুক্রবার সকালে নগরীর রূপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস র্টামিনাল, লঞ্চর্টামিনাল ও খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সকাল ছয়টার পর বরিশাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং অন্য কোন বিভাগ থেকে ছেড়ে বরিমালেও আসেসি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পরিবহন বন্ধ থাকায় মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিকল্প উপায়ে কেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে গন্তব্যে গেলেও তাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বরিশাল বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ। স্ট্যান্ডে সব বাস সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। সমাবেশের আগের দিন বাস বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ দলটির নেতাকর্মীরা।
পরিবহন বন্ধের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, গণসমাবেশের যেন মানুষ আসতে না পারে সেজন্য সরকার এমন কাজ করেছে। তবে সরকার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে সরকারের কোনো হাত নেই। বাস বন্ধের বিষয়টি জানার পরও যাদের খুবই জরুরি কাজ ছিল তাদের অনেককে বরিশাল বাস টার্মিনালে আসতে দেখা যায়।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, রাতে উদ্যানেই ঘুমান দূর থেকে আসা নেতাকর্মীরা। কারণ আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘সব ধরণের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে। তবে তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। জনগণের জন্য আন্দোলনে সব বাধা অতিক্রম করে দুই দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপল টানিয়ে। খাবারের জন্য রান্না করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলেই বৃহস্পতিবার থেকে নামাজ আদায় করেছেন এবং জুম্মার নামাজও আদায় করেছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, সড়ক ও নদীপথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা অনুযায়ী নেতাকর্মীরা আগেই সমাবেশস্থলে এসেছেন। তারা বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশস্থলের মাঠে রাত কাটিয়েছেন। আর নেতাকর্মীদের থাকার জন্য মাঠের মধ্যে সামিয়ানা ও ত্রিপলের ছাউনি দেয়া হয়েছে। গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মীর জন্য দুই রাত মাঠে কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে তাঁবু টানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব নেতাকর্মীদের খাবারের জন্য মাঠেই বিশেষ ব্যবস্থায় রান্না করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মাইনকা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন সিকদার বলেন, অসম্ভব দুর্ভোগ-দুর্দশা সহ্য করে বৃহস্পতিবার রাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছি। সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ট্রলার ভাড়া করে কয়েক হাজার মানুষ এসেছি। এতো কষ্ট করছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারিনা। অথচ দেশ স্বাধীন হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
যুবদল নেতা মনির আকন বলেন, একাধিকবার হামলা ও মামলার স্বীকার হয়েছি, কষ্ট করছি, আরও করবো। কিন্তু ভোট না দিয়ে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও এমপি নির্বাচনের খেলা আর দেখতে চাই না। পাথরঘাটার বিএনপি কর্মী সাইদুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশে আমাদের সমাবেশস্থলটি বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, লাভ হয়নি। আমরা চলে এসেছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পেতে চাই। বিনাভোটের জনপ্রতিনিধি আর দেখতে চাই না।
জেলা উত্তর বিএনপির সিনিয়র সদস্য এসএম মনির-উজ জামান মনির বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো মুহুর্তে এই সরকারের পতন ঘটবে। বাংলাদেশের জনগণ এ সরকারের পতন চায়, নিজের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্যই সমাবেশের দুইদিন আগেই সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্নস্থানে গুলিতে দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গণসমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থায় নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসার সময় সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের বাঁধা সম্মুখীন হয়েছেন। তারা আরও বলেন, ধর্মঘটসহ যতো বাঁধাই আসুক না কেন বরিশাল বিভাগের কয়েক লাখ মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত হবেন। গণসমাবেশে যে জনস্রোত হবে তা কোন কিছুর বিনিময়েই আটকানো যাবে না।
সমাবেশের মাঠেই দুটি জামাতে জুমার নামাজ পড়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা
সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) মাঠেই পৃথক দুটি প্যান্ডেলে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজে একসাথে হাজারো নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা যায় জুমার নামাজে। নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন নামাজ পরিচালনা করেন। এছাড়া সমাবেশস্থলে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করতে মাঠের চারপাশে গাছতলা, তাবুর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে যার সামর্থ অনুযায়ী খাবার কিনে খাচ্ছেন।
সবশেষে বন্ধ হলো খেয়া নৌকা
বাস-লঞ্চ, মাইক্রোবাস এবং থ্রি হুইলার দুইদিন বন্ধ ঘোষণার পর এবার বরিশালের বিভিন্নস্থানের খেয়া নৌকা চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে নগরীর চরকাউয়া খেয়া এবং কাটাদিয়া খেয়া চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিনিয়ত দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এসব খেয়া নৌকায় চলাচল করেন হাজার হাজার মানুষ। আকস্মিক খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছেন যাত্রীরা। রোগী পরিবহনও রয়েছে বন্ধ। এ বিষয়ে খেয়াঘাট কর্তৃৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বন্ধ হলো মাইক্রোবাস
বরিশাল জেলায় দুইদিন (৪ ও ৫ নভেম্বর) ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। শুক্রবার রাতে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুজ্জামান জলিল বলেন, ৪ ও ৫ নভেম্বর আমাদের তেমন কোনো ট্রিপ হবেনা। এজন্য আমরা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জরুরি সেবা যেমন কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে তাদের সেবা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বরিশাল নগরীতে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকায় মাইক্রোবাস চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, যদি হামলা হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতির মুখে যেন না পরতে হয় সেজন্যই আপাতত না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। তিনি জানান, জেলায় সমিতির আওতায় প্রায় সাতশ’ গাড়ি চলাচল করে। উল্লেখ্য, এর আগে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার বাস, থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন মালিক-শ্রমিকরা। বুধবার রাত থেকে বন্ধ করা হয় স্পিডবোট সার্ভিস। বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হয়।
সমাবেশস্থল যেন পিকনিক স্পট
নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যেন পিকনিক চলছে। বড় বড় হাঁড়িতে বসানো হয়েছে রান্না। মাঠের মধ্যে তাবু টানিয়ে চলছে আড্ডা ও শ্লোগান। মধ্যরাতের পর ওই তাবুর নিচেই ঘুমিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশস্থলে। গণসমাবেশ আজ শনিবার হলেও নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, সমাবেশ যেন সফল না হয় সেজন্য শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেকারণে আগেভাগেই তারা চলে এসেছেন। সমাবেশের আগের দুই রাত তারা এখানেই কাটাবেন। জেলা ও উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীতে বৃহস্পতিবার রাতেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক)। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে পারে। তাই উদ্যানেই রাতে ঘুমিয়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এজন্য আগেই তাদের জন্য ত্রিপল টানিয়ে মাঠেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাবেশস্থলেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলসিক জাহান শিরিন বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে আসা নেতাকর্মীদের বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপরেও কোনো কিছুতেই বরিশালের গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেটে, বাই সাইকেলে, ট্রলার ও নৌকায় চেপে আসবেন।
রাতেই ভরে গেছে উদ্যান
সমাবেশের একদিন আগে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের ভেন্যু বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জড়ো হয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী। মাঠের একটি অংশ নেতাকর্মীদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বরিশালের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে ভিড় করছেন। জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা নিজেদের কর্মীদের দিয়ে ব্যানার টানানোর কাজ করছেন। শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে এসে পৌঁছেছেন আরও কয়েক হাজার নেতাকর্মী। তারা বলছেন, ধর্মঘটের সাথে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের বাঁধা ও পুলিশি হয়রানি। এ কারণে আগেভাগে তারা বরিশালে এসে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশকে ঠেকাতে দুইদিন পরিবহন ও লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ যাতে সমাবেশস্থলে না আসতে পারে তাই সরকারের এতো তোরজোড়। জনগণের এমন ভোগান্তির রায় জনগণই দেবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি নয়টি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। যার প্রথমটি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষ সমাবেশটি হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। ওই সমাবেশকে ‘মহাসমাবেশ’ ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ঘোষিত এ কর্মসূচির অন্য সমাবেশগুলোর মধ্যে গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর বিভাগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৫ নভেম্বর বরিশাল, আগামী ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
নৌকায় এসেছেন নেতাকর্মীরা
নৌকায় চরে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনে এসেছেন আমতলী উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোররাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে তারা পাঁচটি ইঞ্জিন চালিত কার্গো নৌকায় চরে বরিশালে এসে পৌছেছেন।
সব পথেই বরিশাল ঢোকা বন্ধ
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেরদিন (শুক্রবার) ভোর থেকে সব পথেই বরিশালে ঢোকা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পরেছেন সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনে বরিশাল ছাড়তে পারছেন না কেউ, আবার প্রবেশও করা যাচ্ছেনা। সার্বিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য।
সমাবেশস্থলে পৌঁছেছে হাজার হাজার নেতাকর্মী
গণসমাবেশে যোগ দিতে বিভাগের ৬ জেলা থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। এছাড়া শুক্রবার এবং শনিবার আরো নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেবেন। আত্মীয়-স্বজন এবং আবাসিক হোটেলে তারা অবস্থান নিয়েছেন। তারাও সময় মত সমাবেশে যোগ দিবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে কোনো লাভ হবেনা। ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী ইতোমধ্যে বরিশাল শহরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রয়োজনে নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে আসবেন।
একমাঠে বিএনপি-প্রশাসনের পৃথক দুইটি মঞ্চ
ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপি ও প্রশাসনের পৃথক দুটি মঞ্চ। তৈরি ও প্যান্ডেল সাজানোর হয়েছে ভিভিন্ন রূপে। উদ্যানের পূর্বপ্রান্তে স্থায়ী মঞ্চ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। এর বেশ খানিকটা দূরে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে বিএনপির বিভাগীয় মহা সমাবেশের মঞ্চ। শুক্রবার (৪ ফেব্রæয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। যেখানে প্যান্ডেল করা হচ্ছে সেখানে দায়িত্বশীল কেউ নেই। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠে আগামী ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাই বালু ফেলে মাঠ ঠিক করা হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেলের কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে বরিশালের ১৬টি সেতু রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূলমঞ্চ ঘিরে চলছে তার প্রস্তুতি।
হেঁটে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসছেন নেতাকর্মীরা
সড়ক ও নৌ-পরিবহনের ধর্মঘট উপেক্ষা করে হেঁটে সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এভাবেই অনেকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ প্রবেশদ্বারে এসে পৌঁছেছে সমাবেশে যোগ দিতে। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলসিক জাহান শিরিন বলেন, কোনো কিছুতেই বরিশালের গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবেনা। প্রয়োজনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে, বাইসাইকেলে আসবেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, শো-ডাউন করে বরিশালে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বেপরোয়া হয়ে গেছেন বিএনপির জনসমর্থন দেখে। তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদেরকে যদি হোটেলে থাকতে দেয়া না হয়, তাহলে তারা সমাবেশস্থলে থাকবেন।
এআই