Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৪,

সরকার হটানোই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ: খন্দকার মোশাররফ

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ১৭, ২০২২, ০৭:২৬ পিএম


সরকার হটানোই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ: খন্দকার মোশাররফ

সরকারকে হটানোই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক উম্মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

তিনি বলেন, এখন আমাদের মূল দাবি- সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে মুক্তভাবে রাজনীতি করতে দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা।

মোশাররফ বলেন, বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রসমাজকে ব্যাপকভাবে ভুমিকা রাখতে হবে। বর্তমান স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে সরাতে হলে ছাত্রদলকে সামনের কাতারে থেকে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে। তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে ব্যর্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেখানেই সফল। ৭ নভেম্বর দিনকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিতর্কিত করছে। অথচ সেই দিনটি বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আকাক্সক্ষা পুনরুদ্ধার হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তৎকালিন রাজনৈতিক নেতারা দিকনির্দেশনা দিবেন।

কিন্তু সেটা হয়নি। পরে ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। দেশে সমাজান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাটের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। দেশে রক্ষী বাহিনী তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্য ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দেশে পরিবর্তন এসেছিল। সেই পরিবর্তনকে আবারো একটি পাল্টা অভ্যুত্থান করে থামাতে চেয়েছিল খালেদ মোশাররফ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৭ নভেম্বরের আগে ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিলো না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিলো। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিলো। ঠিক সেসময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থাৎ দুইটি বিশেষ দিনে জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

একটি স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি ৩-৬ নভেম্বর যখন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা তখনো জিয়াউর রহমান জাতিকে পথনির্দেশনা দিয়েছেন। সিপাহী জনতা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই দিনকে গুরুত্ব না দিয়ে "মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস" পালন করছে। আসলে তারা পরিবর্তন সহ্য করতে পারেনা।

তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতার ফসল। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধেও ইতিহাস বিকৃত করে জিয়াউর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করতে চায়। সেজন্য তারা ৭ নভেম্বরকে পছন্দ করে না।

তিনি আরো বলেন, গায়ের জোরের সরকার বার বার দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। এজন্যই সরকার জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে ভয় পায়। আজকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছে বারবার। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। চাপাবাজি দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তারা আইএমএফ’র প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। তাদেও লুটপাটের কারণে দেশে ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আজকে নতুনভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। বিদুৎ-এর লোডশেডিং, জ¦ালানি ও নিত্যপণ্যেও মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারের অপশাসনের জনগণ আজ অতীষ্ঠ। তারা আজ এই সরকারের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের সমাবেশগুলোতে প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সরকার ভয় পেয়ে বিএনপির গণসমাবেশে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু জনগণ কোনো বাধা বিপত্তিতে ভয় পায় না। তারা স্বতস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশ নিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশও সফল হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৭ নভেম্বরের পর দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রবর্তন হয়েছিল। লুটপাটের অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বার পরিচয় হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন দিয়েছেন। ৭৪ সালে দেশের দুর্ভিক্ষ হলেও জিয়াউর রহমান তার আমলে বিদেশে চাউল রপ্তানি করেছিলেন।

পূর্বঘোষিত এ সমাবেশ বেলা দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসা শুরু করেন। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। ছাত্রদলের সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনের একটি সড়ক বন্ধ হওয়ায় রাজধানীর শান্তিনগর, কাকরাইল মোড়, পুরানা পল্টনের বিজয়নগর, দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলে পরিচালনায় উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মো: আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, মীর সরফত আলী সপু, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, শহীদুল ইসলাম বাবুল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক।

এবি

Link copied!