ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০১:৪৪ পিএম
জীবন থাকতে বাংলাদেশের এতোটুকু স্বার্থ নষ্ট হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে না পারলে এই স্বাধীনতাই বৃথা। স্বাধীনতা যাতে ব্যর্থ না হয়। স্বাধীনতার সুফল যেন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায় এটাই ছিলো আমার একমাত্র লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে, তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যাতে কেউ ভোট চুরি করতে না পারে ও আগেই সিল মেরে ব্যালট বক্স ভরে রাখতে না পারে, সেজন্য স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েছি। তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ আমরাই করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা মানুষ মানেনি। আন্দোলনের কারণে তখন খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল আবার ভোট দিতে। এরপর আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসি। তারপর আজকের এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যদি ভোট চুরির নিয়ত থাকতো, তাহলে তো খালেদা জিয়ার মতো আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলাম, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করেছিলাম, পুল, ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অনেক কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০০১ এ আমরা সরকারে আসতে পারিনি।
নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে টানা তিন বারের সরকার প্রধান বলেন, অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে আগে অনেকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ, অনেক দিক নির্দেশনা, অনেক কিছুই শুনতে হতো। আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। এটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সহায়তায় করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও মোকাবিলা করব।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
এ সময় করোনাকালে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন–ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন যানবাহনের শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন, সংস্কৃতি কর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বস্তিবাসী, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ যাঁরা অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না, হটলাইনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘরে চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি।
টিএইচ