জানুয়ারি ২, ২০২৩, ০৫:৩৬ পিএম
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বিদেশ গিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। সাইবার স্পেসে অসত্য তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তিনি ফেঁসে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার ছড়ানো ভিডিওর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি নুর কাতার যান। এরপর তিনি দুবাই যান। সেখানে তিনি দেশ থেকে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই থেকে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করেছেন।
তার ফেসবুক লাইভ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুবাই থেকে জেদ্দা যাওয়ার পথে নুর গত ২৯ ডিসেম্বর বিমানবন্দরে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে ভিডিও বার্তা দেন। ১৮ মিনিট ধরে চলা ওই ফেসবুক লাইভে নুর সরকারের এমপি, মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। নিজের দুবাই ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে নুর ফেসবুক লাইভে দাবি করেন, ‘এই সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা দুবাইয়ে কালো টাকা ইনভেস্ট করে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে।’
একজন মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘তার কয়েক হাজার কোটি টাকা এখানে ইনভেস্ট রয়েছে। একটা এক জায়গায় একই রঙের একই ডিজাইনের বিল্ডিং, এগুলো দেখে এসেছি। ভিডিও আছে, ডকুমেন্ট আছে। বিস্তারিত ডকুমেন্ট প্রকাশ করা হবে।’
নুরের দাবি, এরকম অনেক আছেন, অবৈধভাবে টাকা-পয়সা ইনভেস্ট করে হোটেল-শপিং মল করেছেন। তিনি বলেন, ‘...২০ জনের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। হাজার হাজার কোটি টাকা এখানে পাচার করেছেন। তাদের বিষয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। ইতোমধ্যে তাদের ভিত নড়ে গেছে। গণআন্দোলন শুরু হলে তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন।’
এদিকে নুরের ওই মিথ্যা তথ্যে ভরা ভিডিও ছড়ানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এর প্রতিবাদ করছেন। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তার বিচারও দাবি করেছেন অনেকে।
মো. রাসেদুল ইসলাম রাসেল নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দুবাইয়ে কোনো মানুষ বেড়াতে গিয়ে জায়গা-জমি কিনতে পারে না। যে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নুর মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন তিনি গত ১০ বছরে দুবাইয়ে অবস্থান করেননি। একবার মাত্র ৮ ঘণ্টা ট্রানজিট নিতে গিয়ে দুবাই এয়ারপোর্টে ছিলেন। অথচ নুর মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা এক বিতর্কিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে নুর বৈঠক করেন। এর পরই ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন। তা ছাড়া নুরের হঠাৎ এ ধরনের মিথ্যাচার ছড়ানো নিয়ে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে পুলিশের উদ্দেশ্যে নুরকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশকে বলব, জনতাকে অত্যাচার করছেন— আপনাদের পরিণতি ভালো হবে না। এখন কোথায় বেনজীর (সাবেক আইজিপি), আজিজ সাহেব কোথায়?’
ভিডিও বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। বাংলাদেশে জালিমদের জুলুম চলছে। এখানে দ্বীন, ধর্মকর্ম করে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে।’
বিদেশ ঘুরে ভিপি নুর ফান্ড সংগ্রহের নামে প্রবাসীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন— বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সমালোচনা চলছে। এ বিষয়েও ভিডিওতে কথা বলেন ভিপি নুর। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আরে ভাই... এই দেশে এসেছি ফান্ড অবশ্যই সংগ্রহ করব। লুকোচুরির কিছু নাই। স্পষ্ট বলছি, ফান্ড কালেক্ট করছি। কাকে হিসেব দেব না দেব, এটা আমাদের বিষয়।’ তবে অর্থ সংগ্রহ নিয়ে হঠাৎ করে নুরের এ ধরনের কথাবার্তা নিজের সংগঠনের কর্মীদের মধ্যেও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
ওই ভিডিওতে নুরকে দেশে থাকা লোকজনকে সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নামার অনুরোধ করে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কাতার ছিলাম, এখন দুবাই। আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার চেষ্টা করব। আমার একার জন্য তো সবকিছু থেমে থাকে না। আমি যতদিন দেশে ছিলাম, আন্দোলন-সংগ্রামে কখনই পিছু হটিনি। হামলা মামলা উপেক্ষা করেও আন্দোলন চালিয়ে গেছি। এখন যারা দেশে আছে, তারা করবে। দেশের বাইরে থাকলেও মনটা পড়ে আছে দেশে।’
রাজনৈতিক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেন। প্রথম কর্মসূচিতেই নূর অনুপস্থিত ছিলেন। বিদেশ বসে তিনি আন্দোলন নিয়ে কথা বলায় রাজনৈতিক মহলের অনেকেই তা ভালোভাবে নিতে পারেনি।
নুরের এ ধরনের বক্তব্যের পর তিনি দেশে ফিরবেন কিনা, তা নিয়েও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে নুরের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে ফোন দিলেও তাকে এসব মাধ্যমে সক্রিয় পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন গতকাল রোববার বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে গেছেন। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আমাদের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিদেশে যেতে পারছিলেন না। তার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও নুরুল হক নুর সার্বক্ষণিক দলের খোঁজখবর রাখছেন। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশে অবস্থান করে নুরুল হক নুরের উসকানিমূলক ও গুজব ছড়ানোর বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে কত টাকার ফান্ড সংগ্রহ করেছেন, এসব টাকা কীভাবে দেশে আনা হচ্ছে বা হবে— এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাইবার স্পেসে দেশের বিরুদ্ধে, সরকার, এমপি, মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়ে গুজব ও উসকানির অভিযোগে নুরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাইবার টহলের অংশ হিসেবে নুরুল হক নুরের বেশ কয়েকটি ভিডিও তাদের নজরে এসেছে। এসব ভিডিও যাচাই করা হচ্ছে।
কেএস