জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন,জনগণ কি চায় সেটা তো কোন বিষয় নয়, ক্ষমতাই আমাদের (আওয়ামী লীগ) জমিদারি। কিছু কিছু আওয়ামী লীগের পাতি নেতার ইদানিং কালে বলেন, স্বাধীনতা যেহেতু আমরাই এনেছি তাই লুটপাট করলে আমরাই করব আর উন্নয়ন করলে আমরাই করব। সবই আমরাই করব। এসব পাতি নেতাদের মাথায় এসব এমনেই আসে না। এমন চিন্তা অনেক বড় বড় নেতাদের মাথায়ও এসেছে। এমন কি সংবিধান প্রণয়ন কারীদের মাথাও।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে `সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন ১৪ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন জোরদার করুন` শিরনামে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গনতন্ত্র মঞ্চের আয়োজিত সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।
জুনায়েদ সাকি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের আত্মহুতি দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়ে আজ পর্যন্ত তাদের কোন তালিকা হলো না। শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ কিনা এ নিয়ে নানা রকম রাজনৈতিক বক্তব্য দেখি। কিন্তু এদের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে আমরা সরকারের কোন উদ্যোগ দেখি না। কিন্তু কথা হচ্ছে যারা এই নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের রাজনৈতিক চেতনা, তার দেশ ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা এ সমস্ত কিছুর মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু ৭২ সালে যখন নতুন রাষ্ট্র গঠন হয় তখন সাত কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে সময় তা করা হয় নাই।
সাকি বলেন, ৭০ সালের গণপরিষদকেই ৭২ সালের গণপরিষদ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলো। এর এর মধ্য দিয়ে ৭১ সালের সাধারণ মানুষের যে রাজনৈতিক চেতনা তা অস্বীকার করা হয়েছে। ওইখানেই বাংলাদেশের গোড়ায় গলদ। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সেজন্য যদি জনগণের মতামত নেয়া হতো তাহলে আরেকটা নতুন নির্বাচন করে গণপরিষধ গঠন করার দরকার ছিল। সমস্ত শ্রেণী পেশা তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে গণপরিষদ গঠনের দরকার ছিল। সেটাও করা হয় নাই।
তিনি বলেন,শুধু কি তাই, ওই গণপরিষদে যারা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ছিল তারাও স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারে নাই। গণপরিষদ বসার আগেই রাষ্ট্রপতির প্রেসিডেন্টশিয়াল অর্ডারে আজকে যেটা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সেটা ঘোষনা করা হল। যে গণপরিষদে সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন না। আর তদের যদি কোন মতামত থাকে তাহলে পার্টির ফোরামে বলতে হবে। সেখানে পার্টি যে সদ্ধান্ত দিবে তাদেরকে কেবল হাত তুলে সমর্থন করতে হবে। দুনিয়ার কোন দেশে গণ পরিষদের এই অবস্থা হয় কিনা জানা নেই। কারণ গণপরিষদ তো সংবিধান তৈরি করে এবং সেখানে নানা ভাবে মানুষের মতামত, চিন্তা এসব প্রতিফলনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেখানে তা করা হয় নি। বরং সংবিধান এমন ভাবে করা হয়েছে যে এক ব্যাক্তি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং সারাজীবন যেন ক্ষমতায় থাকতে পারে৷ এই রকম চিন্তাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। আর ৭২ সালে তারা সেই সংবিধানই তৈরি করেছেন। যেখানে সমস্ত ক্ষমতা তার হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। কাজেই ৭২ সালের সংবিধান হচ্ছে স্বৈরাচারী ক্ষমতা কাঠামোর সংবিধান।
তিনি আরও বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে কর্তৃত্ব মূলক শাসনের যত ধরনের উদাহরণ আছে সবগুলো থেকে একটা একটা করে উপাদান ভাবনা তিনি (প্রধান মন্ত্রী) সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো এদেশে প্রয়োগ করেছেন। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ এই গুলো কি আপনি মনেকরেন আওয়ামী লীগের আবিষ্কার। এগুলো সব বিদেশীদের কাছ থেকে ধার করা। ভারতের নরেন্দ্র মদি যখন গুজরাটের মূখ্য মন্ত্রী ছিলেন তখনও কিন্তু তিনি ডিজিটাল এবং স্মার্ট গুজরাটের কথা বলেছিলেন। এসকল শ্লোগান আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করেন।
নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদের চর্চা করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন মোড়ক আকারে থাকবে। নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রার্থী বাছাই হবে এমন কি টেলিভিশনে তা নিয়ে ডিবেট হবে। কিন্তু ভোটের দিন মানুষ নির্ধারণ করবে না যে কে নির্বাচিত হবে। বরং যারা ক্ষমতায় আছে তারা নির্ধারন করবে যে কারা কার ক্ষমতা পাবে৷ যা আওয়ামীলীগ ১৮ সালে করেছেন এবং এখন বাজারে কথা শুনতে পাই যে, তারা বলেছে আসেন আপনারা আমরা সিট ভাগাভাগি করি। এটা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের মডেল।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
এবি