জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০২:১০ পিএম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বসির মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাও. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। সম্মেলন ১৩ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবি সমূহ হলো:
সুইডেনে কুরআন অবমাননা: নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে দেশটির উগ্র-ডানপন্থি রাজনীতিবিদ রাসমুস পালুদান তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত উভয় রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিন্দা জানানোর দাবি জানানো হয়।
কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা: ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী অভিশপ্ত মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং বাংলাদেশে তাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকার কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার: জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাসময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে এর অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
শিক্ষা সংস্কার: জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমে অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন কল্পনাপ্রসূত ডারউনের মতবাদসহ যে সকল ঈমান বিধ্বংসী কুশিক্ষা পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে তা বাতিল করে সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামুলক করতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যনিয়ন্ত্রণ: দেশের একদল অসাধু ব্যবসায়ী এবং মধ্যস্বত্বভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের যাতাকলে সাধারণ মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ আছে বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং এ ব্যাপারে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাজার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০২২: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০২২ এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্যকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেয়ার আয়োজন করে দেয়া হয়েছে। যা দেশে খুন-গুম-ধর্ষণ ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এ আইন বাতিল করতে হবে। এবং রাজধানী ঢাকাকে মাদকমুক্ত করতে হবে।
সকল আলেমদের মুক্তি: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রেপ্তারকৃত সকল নিরপরাধ আলেম ওলামাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স ও নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা: ঢাকা সিটিতে বসবাসরত নাগরিকগণ সকল নাগরিক সুবিধা যেমন: গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাসন, টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য সেবা অর্থের বিনিময়ে ভোগ করে থাকে। সেইসঙ্গে জমির খাজনাও প্রদান করে থাকে বিধায় হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে সহনীয় করতে হবে।
অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট নর্দমা- বায়ুদূষণ যানযট ও ট্রাফিক সমস্যা: ঢাকা নগর বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা শহর হিসেবে স্বীকৃত। এ অপরিচ্ছন্নতার কারণে প্রতিনিয়ত ব্যাপকহারে রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পরছে বিধায় যেকোন মূল্যে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আবার বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বে প্রথম। গাড়ির কালো ধোঁয়া ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ থাকার কারণে ঢাকার বাতাস বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যা নাগরিক স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট ঝুঁকি। বিধায় বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
অন্যদিকে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী উঠানামা ও ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ যানযট নগর জীবনের এক অভিাষপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু অসাধু ট্রাফিক কর্মকর্তার কারণে যা আরও দূর্বিষহ হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে যানযট ও ট্রাফিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে।
স্বাস্থ্য সমস্যা: অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে মশা ও অন্যান্য রোগ-জীবানুর বিস্তার ঘটছে। ফলে নাগরিকগণ ডেঙ্গু, ডাইরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল না থাকায় নাগরিকগণ অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এমতাবস্থায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
হকার পুর্নবাসন, ফুটপাতমুক্ত করণ ও চাঁদাবাজি-টোকেনভোগী রোধ: হকারদের নির্দিষ্ট যায়গা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পুর্নবাসিত করে ঢাকার রাস্তার ফুটপাতকে জনসাধারণের জন্য মুক্ত করে দিতে হবে।
অপরদিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সরকার দলিয় ক্যাডাররা বিভিন্ন স্লিপ ও টোকেনের মাধ্যমে পণ্যবাহী গাড়ীসহ সকল যানবাহনে চাঁদাবাজি ও টোকেনবাজি করে থাকে। এ সকল চাঁদাবাজ ও টোকেনভোগীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট: সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেও রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং এর কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। যা রপ্তানি খাতে দেশকে পিছিয়ে ফেলতে পারে। এদিকে লক্ষ্যরেখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অযাচিত বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধ এবং অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ: রাজধানী ঢাকায় খাদ্যে ভেজাল এখন ওপেন সিক্রেট নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একদল অসাধু ব্যবসায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এহেন কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে মানবদেহে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর রোগের সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ তদারকির জোর দাবি জানাচ্ছি।
এইচএস/এআরএস