নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৬:১৯ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৬:১৯ পিএম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, একমাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিম উম্মাহ ঈদের খুশি উৎযাপন করেছে। ঈদ মানে খুশি, আর আল্লাহর বান্দা সত্যিকার খুশি হবে তখন, যখন মানুষ সব ছেড়ে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীনকে বিজয়ী করবে। কেবল মাত্র আল্লাহর গোলামী করার মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে ঈদের প্রাপ্তি পূর্ণ হবে।
যতদিন পর্যন্ত সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন কুরআন ও সুন্নাহর বিধান উপেক্ষা করে মানুষের তৈরি আইন দ্বারা পরিচালিত হবে সেখানে আর যায় হোক সত্যিকার ঈদের খুশি থাকতে পারে না। নতুন কাপড় পরার জন্য ঈদ আসে নাই, ঈদ এসেছিল মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত রেখে কুরআন সুন্নাহর সৌন্দর্য্য সমাজে বাস্তবায়ন করতে।
মুসলমানদের সত্যিকারের ঈদ তখনই হবে যখন আমরা মানবরচিত সকল মতবাদকে মুছে দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর দেওয়া আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রসহ সকল কিছু পরিচালনা করবো। তখন প্রশান্ত আত্মাদেরকে ডেকে মহান রব বলবেন তোমরা প্রবেশ করো আমার গোলামদের সাথে এই সুসজ্জিত জান্নাতে। আমাদের জীবনের সকল ইচ্ছাকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেওয়ার পুরস্কারই হচ্ছে সেই প্রিয় জান্নাত।
মুসলিম উম্মাহ ঈদের ময়দানে মিলিত কণ্ঠে ১২ বার আল্লাহু আকবারের ধ্বনি প্রদান করেছে। এই তাকবিরের অর্থ-ই হলো আল্লাহ মহান, আল্লাহ সবার চেয়ে বড়, আল্লাহর বিধানই বড়, সমাজ রাষ্ট্রে আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করতে হবে সেই ঘোষণা ঈদের মাঠে করা হয়েছে। সেজন্য আমাদের সকলকে সচেতনভাবে আল্লাহর দ্বীনকে সমাজে বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনীতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে হামিদুর রহমান আজাদ, এ এইচ এম আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যথাক্রমে সাইফুল আলম খান মিলন, মো. ইজ্জত উল্লাহ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মু. আব্দুল জাব্বার, মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির, এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মো.দেলওয়ার হোসেন, মো. কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহ এর সন্তান মামুন আল আজামী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এর সন্তান ব্যারিস্টার নাজিব নিজামি, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এর সন্তান মাসুদ সাইদি, আলী আহসান মুজাহিদ এর সন্তান আলী আহমদ মাবরুর, আব্দুল কাদের মোল্লা এর সন্তান হাসান জামিল, মীর কাসেম আলী এর সন্তান মীর মুহাম্মদ, কামারুজ্জামান এর সন্তান আব্দুল্লাহ ওয়াফি প্রমূখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের জান ও মালের মাধ্যমে চেষ্টা করতে বলেছেন। সুতরাং হুকুম দেওয়ার একমাত্র হকদার কেবল মহান আল্লাহ তা`আলা। যতদিন সেই হুকুম অমাদের দেশে কায়েম না হচ্ছে ততোদিন সত্যিকারভাবে ঈদ অর্থহীন। কেউ কেউ বলেন আমাদের দেশে দু’টো ঈদ একটা মিষ্টি খাওয়ার ঈদ ও অন্যটা গোস্ত খাওয়ার ঈদ।
ঈদের মূল অর্থ কিন্তু সেটা নয়, ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যক্তির মালকে বিলিয়ে দিয়ে ফিতরা আদায় করে দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা। অথচ ঈদুল ফিতরের এই সন্ধিক্ষণেও বাংলাদেশের সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে রেখেছে।
সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে আদালত থেকে জামিন দেওয়া হলেও জেলগেট থেকে তাদেরকে বার বার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বারবার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নেতৃবৃন্দকে নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে যে, সরকারের কাছে বিচারকদের রায়ের এক পয়সাও মূল্য নেই। দুনিয়ার কাছে বাংলাদেশের সম্মান আজ চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
দেশের অর্থ পাচার হচ্ছে, মানুষ খুন হচ্ছে, গায়েবী ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার মাধ্যমে সরকারের চরম ফ্যাসিস্ট আচরণ আজ গোটা পৃথিবীর সামনে দৃশ্যমান হয়ে গেছে। আজ জনগণের ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, ভাতের অধিকার নেই, আজকে মানুষ ভালো মতো লেখাপড়া শিখবে তার অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। এই জালেম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এদেশের মানুষ আজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ফরিয়াদ করছে।
এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, তাদের মুক্তির জন্য দুর্বার গণআন্দোলনের বিকল্প নেই। তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, জুলুম নির্যাতনের দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে বাংলাদেশের এই সবুজ জমিনে আমরা ঈদ উদযাপন করছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি দ্রুত এই জনপদকে নিরাপদ করে দিন। এখনো দেশে অন্যায় জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে এদেশের ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার কাজ করছে। আমাদের কাছে রমজানের তাকওয়া অর্জনের মানেই হচ্ছে।
এইচআর