Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

আওয়ামী দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: রিজভী

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুলাই ২, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম


আওয়ামী দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কাজে ব্যবহার ও নির্বিকার ভূমিকার জন্যই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

আজ দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত করার জন্যই শুধু সাধারণ মানুষ নয় পুলিশ সদস্যদেরও জীবন যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, প্রতি পদে পদে মানুষের জীবন বিপন্ন। এই ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩৫ জন মানুষের জীবন হানি ঘটেছে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফলোতির কারণে। তারা বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

আজ সকালে সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ঈদের প্রাক্কালে মানুষ ঘরমুখি হলেও নিজ জেলা বা গ্রামে তারা নিরাপদ ছিলোনা। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ এদের নানা সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে জনপদের পর জনপদ গঠিত রক্তাক্ত সন্ত্রাসের পরিকাঠামো এক আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছিলো।

মানুষ বাড়িতে ফিরেও স্বস্তিতে ছিলো না। সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ আজ বিপন্ন অশুভ রাষ্ট্রশক্তির দৌরাত্বে। আওয়ামী অবৈধ শাসনের তীব্র কষাঘাতে আজ জনগণের জীবন মরনের প্রশ্ন। ওরা হিংসা-প্রতিহিংসার পথে এগোতেই ভালোবাসে।

তিনি বলেন, বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ক্ষমতার আশ্রয়প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা দানবদের আক্রমণে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে এই সমাজে নারীদের জীবনের যেন কোন মূল্যই নেই। এমনই এক দু:সময় চলছে যখন বোনকে উতক্ত্য করার কারণে বিচার চাইতে গিয়ে তরুণ খুন হয়। 

পিতা-মাতা নিজের মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কবলে পরে জীবন হারায়। প্রতিনিয়ত নিজের বোন বা কন্যা সন্তানের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে প্রচন্ড নাজেহালসহ জীবন দিতে হয়। জেলায় জেলায় গড়ে উঠেছে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বখাটেদের উৎপাত। কয়েক বছর আগে বরগুনায় নয়ন বন্ডের কথা আমরা জানি, এবারে ভোলায় শুনছি ০০৯ নামে এক ভয়াল গ্যাং এর নাম (ছবি সংযুক্ত)। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সংবাদপত্রে যে কাহিনী ছেপেছে তা লোমহর্ষ। সর্বত্র মানবাধিকার আজ বিপন্ন।

রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু বিরোধী দলের কর্মসূচিকে বানচাল করা, সহিংস আক্রমণ চালানো, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও স্বাধীন মতপ্রকাশ কারীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলেই আজ সমাজে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কাজে ব্যবহার ও নির্বিকার ভূমিকার জন্যই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত করার জন্যই শুধু সাধারণ মানুষ নয় পুলিশ সদস্যদেরও জীবন যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, প্রতি পদে পদে মানুষের জীবন বিপন্ন। 

এই ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩৫ জন মানুষের জীবন হানি ঘটেছে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফলোতির কারণে। তারা বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

তিনি আরও বরেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় অবৈধ দখলদাররা কর্তৃত্ব করার কারণে চারদিকে গড-ফাদার, মাফিয়া আর সিন্ডিকেট-বাজদের জয়-জয়কার। যদি জনসমর্থিত ও জবাবদীহি মুলক সরকার থাকতো তাহলে বর্তমান খাদ্যপণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটতো না। দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের প্রতি সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই আজ জনগোষ্ঠির অধিকাংশ মানুষকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে।

অস্বাভাবিক দাম দিয়ে নূন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না। অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও প্রভাবশালী দলের নেতাদের জড়িত থাকার কারণে সিন্ডিকেট প্রচন্ড শক্তিশালী। যে কারণে ভারতে কাচা মরিচের কেজি ২৫ টাকা অথচ কাচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি থেকে কোথাও কোথাও ১১০০/১২০০ টাকা কেজি। এহেন সিন্ডিকেশন শুধুমাত্র দূর্বৃত্তপরায়ণ অনাচার মূলক সরকার থাকলেই সম্ভব। এরা মানুষের ক্ষুধা নিয়ে তামাশা করে।

বিএনপি নেতা বলেন,  শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি। তার কথায় রয়েছে বিদ্বেষের শক্তি। এরা দেশের রাজনীতিতে জীবনীশক্তি ও সহমর্মিতার শক্তিকে নি:শেষ করে ঠেলে দিয়েছে এক ব্যর্থ ও সীমাহিন অপচয়ের দিকে। ওরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন না দিয়ে তৈরি করছে ক্রমবর্ধমান বিনষ্টির পথ। 

গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক সার্থকতার প্রতি তারা বিদ্বেষপরায়ণ। এজন্য গণতন্ত্রকামী মানুষের কন্ঠ চাপা দেয়ার জন্য তারা বিগত ১৪ বছর ধরে লক্ষ মানুষকে কারাবন্দি  ও অসংখ্য মৃতদেহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, কোথাও স্তুপিকৃত করে গনতন্ত্রের পথকে করেছে জনশূণ্য। তবে এবারের আন্দোলন হবে আওয়ামী প্রভূত্ববাদের অধীনতা থেকে মুক্তির আন্দোলন।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশ নায়ক তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবীর আন্দোলনে দেশবাসী আজ স্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ। এবারের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আদায়ের সংগ্রামে হবে ‘স্মরণীয় জয়’।

এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা ও মামলার বিবরণ তুলে ধরে বলেন,  গত ১ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় বিএনপি’র মাননীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট ফজলুর রহমান বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ পরবর্তী গণসংযোগকালে অষ্টগ্রাম বাজারে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। 

হামলায় গুরুতর আহত হয় উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মকুল, পল্লী বিষয়ক সম্পাদক আকছার মিয়া, যুবদল নেতা বাবুল মিয়া, খাইরুল মিয়া, সামাউন মিয়া, হোসেন মিয়া, টুটুল মিয়া, মোসাব্বির মিয়া, সাইফুল মিয়া সহ প্রায় ৩০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। 

এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিনা কারনে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-মানবাধিকার সম্পাদক মাহাবুব আলম আক্তার, অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙালপাড়া ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর হোসেন আলমকে গ্রেফতার করেছে। 

Link copied!