নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বন্য বিচার আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, একজন জন্মান্ধ ব্যক্তিও কতিপয় পুলিশের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি। অথচ এতো করিৎকর্মা পুলিশ গত একযুগেও আদালতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর—রুনি হত্যা মামলার একটি প্রতিবেদন পর্যন্ত দাখিল করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আদালতে সাগর—রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ এ পর্যন্ত ১০৫ দফা পেছানো হয়েছে । আর গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাতের বেলা পর্যন্ত আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, নিষ্ঠুর একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার সেই ২৫ জানুয়ারি আজ। এই গণবিরোধী চতুর্থ সংশোধনীটি মাত্র ১১ মিনিটে পাশ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য বিশুদ্ধ, প্রাণবন্ত, গতিশীল বহুদলীয় গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা এবং যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ১৯৭৫ সালে একদলীয় ডিক্টেটরশিপ বাকশাল কায়েমের কালো দিন।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখলের পর শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় নকলের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ছিলো বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে ‘টকস অব দ্য ডিকেট’। এবার যোগ হলো নতুন শিক্ষানীতি ও দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বিরোধী কারিকুলাম। দেশবিরোধী ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী নতুন এ শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। কথায় আছে কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে নতুন প্রজন্মকে তাবেদার বানানো যায়। সর্বজনীন নয়, বরং কোন একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে। এই শিক্ষা সিলেবাস জাতি ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। চলমান কারিকুলামে বাংলাদেশে উৎকর্ষতর শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকুল সমাজভূমি কখনোই নির্মাণ হবে না।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, যোগ্য, নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে তারা বার বার শিক্ষাখাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যার ফলে দেশের মানুষ শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শংকিত। চলমান শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয়ভার অনেক বেশি।
অনলাইন নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির একটি বড় অবদান। কিন্তু প্রযুক্তির ওপর অতিনির্ভরতা প্রযুক্তি দানবে পরিণত হতে পারে। অনলাইন ব্যবহার সীমিত করার পরিবর্তে ব্যাপক করা হয়েছে। কোমলপ্রাণ শিশু—কিশোররা বিভিন্ন ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব) ইত্যাদি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিষিদ্ধ গেমস, অনলাইন জুয়া, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, পর্ণ সাইটসহ নানা অপকর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে কিশোর গ্যাং যারা ছিনতাই, খুনে জড়িত হয়ে পড়ছে। তরুণীদের হয়রানি, ইভটিজিং, কিশোর—কিশোরীর অবৈধ সম্পর্ক, নেশা, মাদকসহ নানা কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও আপোদকালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অনলাইনের ব্যবহার হতে পারে, তাও সেটি ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে। কিন্তু প্রাইমারি ও হাইস্কুলে অনলাইন নির্ভরতা শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ায় ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।
রিজভী বলেন, অতিমাত্রায় অনলাইন নির্ভরতায় পড়াশোন ইন্টারঅ্যাক্টিভ হবে না। আর দরিদ্র মানুষের সন্তান শিশু—কিশোরদের উন্নত মানের মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য নেই। বেশীর জনগোষ্ঠী এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট একদলীয় সরকার বিজ্ঞানবিরোধী, নীতি—আদর্শহীন, অনৈতিক ও মেধাহীন যে শিক্ষা কারিকুলাম চালু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের মতো বর্তমানেও দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে আবারো অভিশপ্ত একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। একদলীয় সরকার, একদলীয় সংসদ, একদলীয় আইন—কানুন, বিচার আচার, প্রশাসন—সমস্তকিছু একদলীয় বাকশালময়।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জনপ্রশাসনের একটি চিহ্নিত অংশকে ব্যবহার করে দেশে যে দখলদার সরকার এবং ডামি সংসদের জন্ম দেয়া হয়েছে, এটি দেশের জন্য বড় লজ্জার।’ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দল `ডামি নির্বাচন` বর্জন করে নাগরিক হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে জনগণ যে ঐক্যবদ্ধ, এর প্রমাণ তারা দিয়েছে।
মসনদ দীর্ঘায়িত করতে লোক দেখানো ‘আমরা ও মামুরা’ নির্বাচনের যে রং—তামাশা করা হয়েছে তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোথাও নেই। বাংলাদেশের মর্যাদা এবং সম্মানকে হাস্যকর বানানো হয়েছে। এখন তারা অভিনন্দন ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন রিজভী। ডামি সরকার এখন বলে বেড়াচ্ছে, তাদের নাকি আমেরিকা, ইউরোপ, জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে। অথচ দুই দিন আগে জাতিসংঘ বলেছে, তারা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে যায়নি।
এআরএস