Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

দখলদারিত্ব ও র‌্যাগিং ঠেকাতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধই সমাধান নয়: সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৫, ২০২৪, ০৮:৪৮ পিএম


দখলদারিত্ব ও র‌্যাগিং ঠেকাতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধই সমাধান নয়: সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

দখলদারিত্ব ও র‌্যাগিং ঠেকাতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধই সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

শুক্রবার প্রগতিশীল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ সাম্প্রতিক সময়ে বুয়েটে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক যৌথ বিবৃতি এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন- আবরার ফাহাদ হত্যার পর তার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রেরণাদায়ক। গোটা ক্যাম্পাস একত্রিত হয়ে এ ধরনের আন্দোলনের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন। তাদের এই সংগ্রামী মনোভাবের কারণে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের এই ভয়ঙ্কর সময়ে, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই উদাহরণ সৃষ্টিকারী লড়াইকে আমরা অভিবাদন জানাই।

এই সময়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেমন প্রেরণা জুগিয়েছে, তেমনি তাদের ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ব্যাপক মাত্রায়। একথা ঠিক যে, বর্তমান প্রজন্মের বুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বলতে ছাত্রলীগের রাজনীতিকেই দেখেছেন, তাদের গেস্টরুম, র্যা গিং, তোলাবাজি, ফাও খাওয়া, জুনিয়রদের নির্যাতন— এগুলোই প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি এসেছিল ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধের আকাঙ্ক্ষা থেকেই। সম্প্রতি রাতের আঁধারে সদলবলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির মহড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে বিষয়টি আবার সামনে আসে।

প্রথমত, এ প্রসঙ্গে শুরুতেই একটা বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি। ছাত্ররাজনীতি কিংবা ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে ছাত্রলীগের বক্তব্য রাখার কোন নৈতিক অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি না। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন কিংবা গত এক দশকের মধ্যে পাশ করে বেরিয়েছেন, তারা জানেন ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। গেস্টরুম, র্যা গিং, তোলাবাজি, ডায়নিংয়ের টাকা চুরি, টেন্ডার নিয়ে মারামারি— কিসে নেই ছাত্রলীগ! বাস্তবে ক্যাম্পাসগুলো এককভাবে তারা দখল করে আছে, সেখানে অন্য কোন সংগঠনের কাজ করার কোন পরিবেশ তারা রাখেনি। গোটা দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়—ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার পূর্বশর্তই হচ্ছে সেখানে থেকে ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের উচ্ছেদ ঘটানো। সেই ছাত্রলীগ যখন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য লড়াইয়ের হুংকার দেয়, তখন তারা কী গণতন্ত্র চাইছে সেটা বুঝতে কারও সমস্যা হয় না। 
একই কারণে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরও এই নৈতিক অধিকার রাখে না। ২০০২ সালের জুন মাসে টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সেদিনও এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। বিএনপি—জামায়াত জোট সরকার এই আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেছিল। ছাত্রদলের সে সময়ের ভূমিকা সকলেই জানেন। শুধু বুয়েট নয়, প্রায় সবগুলো ক্যাম্পাসে সরকার বদলের সাথে সাথে হলের মালিকানা বদলে যায়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন প্রায় সকল ক্যাম্পাসের অঘোষিত প্রশাসনে পরিণত হয়। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যদিও আজ তারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা ভীষণভাবে নির্যাতিত।  

দ্বিতীয়ত, বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ শক্তি রাজত্ব করছে বলে যে আশঙ্কার কথা বারবার ছাত্রলীগ ব্যক্ত করছে এবং এর মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ডে দেশের গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষের সমর্থন আদায় করতে চাইছে— সেটা ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের রাজনীতির একটি কৌশল মাত্র। ছাত্রলীগ এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ও ছাত্রস্বার্থবিরোধী ছাত্রসংগঠন। এই ছাত্রলীগই ২০১০ সালে বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের ক্যান্টিনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি গৌতম কুমার দে—কে বেধড়ক পিটিয়ে মৃত মনে করে ফেলে রেখে যায়। গৌতমের হাত ও পা ভেঙে গিয়েছিল। ছাত্রফ্রন্টের ‘দোষ’ ছিল তারা ক্যাম্পাস ও তার আশেপাশে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। এই ছাত্রলীগ যখন প্রতিক্রিয়াশীল, অন্ধকারের শক্তিকে রুখে দেয়ার কথা বলে— এটাকে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।  

তবে কিছু বিষয় বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আমরা ভেবে দেখতে বলব। আন্দোলনের একটা জটিল ও কঠিন মুহূর্তে দখলদারিত্ব রুখতে আপনারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তুলেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে আপনারা ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের দখলদারিত্বকে সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষমও হয়েছেন। ক্যাম্পাস আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাক, সেটা আপনারা কেউ—ই চান না।

নাঈমুল/ইএইচ

Link copied!