Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি

এই বাজেট কল্পনার ফানুস, গণবিরোধী ও দেশবিরোধী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৯, ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম


এই বাজেট  কল্পনার ফানুস, গণবিরোধী ও দেশবিরোধী

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই বাজেট একটা কল্পনার ফানুস, এটি গণবিরোধী ও দেশবিরোধী।

রোববার (৯ জুন) বিকেলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং ‌র-মেটারিয়ালস আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু নেই বাজেটে।

তিনি বলেন, শূন্যের ওপর দাঁড়ানো এই বাজেট কর ও ঋণনির্ভর। এই বাজেট লুটেরাবান্ধব। আওয়ামী লীগ নিজেদের চুরি হালাল করার জন্য এই বাজেট প্রস্তাব করেছে।

ফখরুল বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তি নেই। বর্তমান লুটেরা সরকারের এ বাজেট কেবল গুটিকয়েক অলিগার্কের জন্য। যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই নীতি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই দেশ চালাচ্ছে।

দেশ দেউলিয়াত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিজার্ভ ও ডলার বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো রোডম্যাপ বাজেটে নেই।

বিএনপি আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রতি বাজেটের আগে ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরতেন— আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট দেখেই বোঝা যায় কারা ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরছে। পুরো বাজেটই ভিক্ষার, তার মধ্যে নিজস্ব কিছুই নেই। ঘাটতি বাজেট মেটানো হবে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, আরেক দিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ। দেশের মানুষ ইতোমধ্যে খাদে পড়ে গেছে, তাদের ওপর চেপে বসেছে বাজেটের হাতি। তাদের কাছ থেকেই আরও ঋণ নেওয়া হবে।

বাজেট গণমানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে নিষ্ঠুর তামাশা দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, অসহনীয় মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে তার কোনো পথনির্দেশনা নেই। সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কিছু সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাজেটে সে আলোচনা নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বাজেট কালো টাকা সাদা করার বাজেট। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ ও বৈধ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে। দুর্নীতিকে এখানে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতি করার এই লাইসেন্স দেওয়া অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক।

সরকারের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠা আজিজ-বেনজীরদের মতো দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

বাজেটে ঋণ করে তা পরিশোধের ফন্দি করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। সরকার কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণের দিকে আরও ঝুঁকবে। দেশ আটকা পড়বে আরও গভীর ঋণের ফাঁদে। যার বোঝা চাপবে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশুকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিতে হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেট শুধু গণবিরোধী না, বাংলাদেশবিরোধী। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প বন্ধ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু সেটা করলে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, তাই পুরো বাজেট করা হয়েছে মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য।

তিনি আরও বলেন, বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে বেতন-ভাতা, প্রণোদনা, ভর্তুকির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। পুলিশ ও প্রশাসনের একমাত্র কাজ বিরোধীদলকে নির্যাতন করা। তাদের খাতেই বেশি খরচ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লা প্রমুখ।

আরএস

Link copied!