Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তেইশ জুন

সুমন দাস

সুমন দাস

জুন ২০, ২০২৪, ০১:০১ পিএম


আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তেইশ জুন

যতদিন থাকবে বাংলা ও বাঙালি পৃথিবীটা বহমান,
ততদিন থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
তুমি ছিলে, তুমি আছো, থাকবে চিরদিন 
কখনোও কোনোদিন শোধ হবে না পিতা তোমার এই ঋণ।

 —অর্জুন বিশ্বাস

মহাসাগরের মত বিশ্বাস, বৃক্ষের শিকড়ের মত হাতিয়ার এবং পর্বতের চূড়ার মত স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মঙ্গল প্রদীপ রূপে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন, ২০২৪।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‍‍‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ‍‍’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। ১৯৫৩ সালে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিগ লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‍‍‘মুসলিম‍‍’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ধর্ম নিরপেক্ষতা চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে ‍‍‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ‍‍’ রাখা হয়। পরবর্তীতে, ‍‍‘পূর্ব পাকিস্তান‍‍’ শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ দেশের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং জনসাধারণের আস্থার ঠিকানা এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।

আওয়ামী লীগের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে (৭৫তম বার্ষিকী) তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচিসহ ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা:

১. ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ।  সমাবেশে বিদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।  সুশীল সমাজ ও পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ।

২. কেন্দ্র সহ সমস্ত সাংগঠনিক শাখায় বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ।  তৃণমূলের কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ।

৩. রাজধানী ঢাকায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন।  একই সঙ্গে সব দলীয় কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা। সারাদেশে আলোকসজ্জা, আনন্দ র‌্যালি, সভা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

৪. সারা দেশে এতিমখানা ও হাসপাতাল এবং শ্রমজীবী ​​মানুষ, দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থ মানুষদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ।

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন।  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‍‍`গ্রাফিক নভেল: মুজিব‍‍` এবং ‍‍`অসমাপ্ত আত্মজীবনী‍‍` পুরস্কারে ভূষিত।

৬. বিশেষ স্যুভেনির এবং বই প্রকাশ এবং পোস্টার, ব্যানার এবং ফটোগ্রাফের প্রদর্শনী।  নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য তৈরি পোস্টার, ব্যানার এবং ভিজ্যুয়াল সামগ্রীর প্রচার।

৭. বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

৮. তথ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন দরকারি প্রোগ্রাম গ্রহণ করুন।

৯. দলের সর্বস্তরের প্রবীণ নেতাদের সম্মাননা প্রদান।

১০. দলের প্লাটিনামজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘সবুজ ধরিত্রী’ কর্মসূচি গ্রহণ। এ লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র জেলা/ মহানগর, থানা/ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ। সারা দেশে সড়ক, মহাসড়কের দুই পাশে ও সড়ক বিভাজনে এবং সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণ, বাড়ির আঙিনা, নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের দুই পাড়ে বৃক্ষ রোপণ। একইভাবে মহানগরসহ সকল শহরে ছাদে ও বেলকনিতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বৃক্ষ রোপনে নাগরিক সমাজকে পরিবেশ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধকরণ এবং বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ।

পূর্বের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  দিবসটি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছিলেন। বাণীতে তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সব উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, গত ৭ দশকের বেশি সময় ধরে গণমানুষের প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভাগ্যোন্নয়নে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই পথচলায় অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ সুদৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে এবং জনমানুষের আবেগ ও অনুভূতির বিশ্বস্ত ঠিকানা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের অর্জন পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক মানুষের অর্জন, এই দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে এ দলটি। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ বিরোধীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান এই দলকে মূল্যায়ন করে লিখেছিলেন, আওয়ামী
লীগ ‍‍`পাকিস্তান‍‍` নামের অবৈজ্ঞানিক এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও ‍‍`দাবিয়ে রাখার বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। ‍‍’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‍‍’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ‍‍’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ‍‍’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ‍‍’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।

 ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি। 

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জনসাধারণের আস্থার শিকড় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলটি ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে তাঁর অঙ্গ সংগঠন নিয়ে দেশের মানুষদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি  এবং রক্ষার জন্য সর্বত্র বৃক্ষরোপণ করেছে।

এছাড়াও দলটি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, দল গঠন করেছে এবং সফলতা ও দক্ষতার সহিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষাবান্ধব, জনবান্ধব এবং সময়োপযোগী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকা পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেট পেশ করায় দলটি ও তাঁর অঙ্গ সংগঠন আনন্দ মিছিল করে ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

‘ন্যায়-সত্য-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অগ্রগামী,
জনসাধারণ ও দেশের উন্নয়নে দলটি আলোর দিশারী।’

 

লেখক:

সুমন দাস
রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অনার্স-মাস্টার্স (সম্পন্ন)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বিআরইউ

Link copied!