নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৮, ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৮, ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৫ আগস্টের পরপরই প্রথমত দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, মন্দির বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে পাহারা দেয়ার জন্য। শুধু মন্দির নয়, কোনো ব্যক্তিও যদি নিরাপত্তাহীন মনে করেন, তার পাশেও দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কোনো সহিংসতা সৃষ্টি করতে দিবো না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংকট তৈরি হলে দুষ্কৃতিকারীরা অপকর্ম করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। সংকটকালে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কাপুরুষতা মাত্র। তবে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কারো বাহবা নেয়া বা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াইনি। মানুষ হিসেবে, নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে, আমাদের কেউ কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এ ধরনের ঘটনা দূরতম প্রশ্রয় দিবো না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষ, পূজা কমিটি ও পুরোহিতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করেন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কমার দেব, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, সাধারণ সম্পাদক ডা. তাপস পাল, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সিআর মজুমদার, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাশিস বিশ্বাস, ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিএল চ্যাটার্জি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র নাথ বসু, শিক্ষক সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু, গিরিদারী সাহা, সুভাশি বিশ্বাস প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই দেশ আমাদের সকলের। আমরা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু মানি না। বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তারা সবাই দেশের গর্বিত নাগরিক। নাগরিক সুবিধা পেতে ধর্ম কোন বাধা হতে পারে না। কারো ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, যে যেই দলই করুক না কেন সবাই নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন সংকট তৈরি হলে দুষ্কৃতিকারীরা অপকর্ম করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি। কে কোন দল করলো সেটা বিষয় না, সবাই মানুষ।
২০২২ সালে পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে আমরা সেখানে যাই। তবে সেটা আমরা দরদ দেখাতে নয়, নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ভারতে বাবরী মসজিদ যখন ভাঙ্গা হয়, সে সময় এদেশে জামায়াতে ইসলামী হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছিল।
ডা. শফিক বলেন, ৫ আগস্টের পরপরই প্রথম দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, মন্দির বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে পাহারা দেয়ার জন্য। শুধু মন্দির নয়, কোন ব্যক্তিও যদি নিরাপত্তাহীন মনে করেন, তার পাশেও দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কোন হিংস্রতা সৃস্টি করতে দিবো না।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশ প্রশাসন মাঠে নেই, ট্রাফিক নেই। আমাদের সন্তানরা ট্রাফিকিংয়ের দায়িত্ব পালন করছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমরা জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমরা খুব শীঘ্রই ইমার্জেন্সি হেল্প লাইন চালু করবো। এই নাম্বার সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, সংকটকালে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কাপুরুষতা মাত্র। তবে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, কারো বাহবা নেয়া বা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াই নি। মানুষ হিসেবে, নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে, আমাদের কেউ কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এ ধরনের ঘটনা দূরতম প্রশ্রয় দিবো না।
তিনি বলেন, আমরা যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন রাখঢাক না রেখেই কথা বলতে হবে।
শ্রী বাসুদেব ধর বলেন, বিজয়ের মুহূর্তে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাজনীতিবিদদের পেয়েছি। জাতীয় দুর্যোগ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামী আমাদের মন্দির রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন এজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিএল চ্যাটার্জি বলেন, আজকের ঐতিহাসিক মুর্হুত। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ আমাদের এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংকটের মুখোমুখি। এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। এই মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জয়ন্ত কমার দেব বলেন, বারবার সরকার পরিবর্তন হলে আমরা আক্রমণের শিকার হই। আমরা এই দেশের নাগরিক। তাহলে কেন আমরা অত্যাচারিত হবো? তিনি জামায়াত নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা বিপদে আপদে সুখে দুখে পাশাপাশি থাকবো।
ইএইচ