আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ১৩, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ১৩, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট তার দেশ ত্যাগের পর থেকে গা ঢাকা দেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। এমন অবস্থায় আগামী ১৫ আগস্ট শোক দিবসকে কেন্দ্র করে আবারও প্রকাশ্যে আসতে চায় দলটি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকায় শোক ও শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের এই কর্মসূচিতে নিরাপত্তা দিতে নতুন সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শোক দিবসের আবেগকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ মাঠে নেমে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে অপতৎপরতা চালাতে চায় বলে আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি। এমন কিছুর চেষ্টা হলে আমরা বসে থাকবো না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন— এত বড় একটা রাজনৈতিক দল এক সপ্তাহ পালিয়ে থাকার পর নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্যই শোক দিবসের কর্মসূচিকে বেছে নিয়েছে। তাদেরই একজন মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ওইদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যেতে চাইবে। অন্যপক্ষও সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এতে হয়তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও ক্লিপের। ভাইরাল ওই ক্লিপটিতে শোনা যায়, দলীয় নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এই অডিও কলটি ভ্যারিফাই করা যায়নি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। নেটিজেনরা বলছেন— শোক দিবসের অযুহাতে আবারও সামনে আসতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কর্মসূচি ঘিরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকা দলটি আসলে কী করতে চায়?
শোক দিবসে প্রকাশ্যে আসতে চায় আওয়ামী লীগ?
চলতি মাসের ৫ তারিখ দুপুর পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে ওই দিন দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র অবস্থানেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার পালানোর খবরে হঠাৎ আত্মগোপনে চলে যান দলটির নেতাকর্মীরা।
অবশ্য এর আগে থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরসহ, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরেও হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়। সেদিনের পর থেকে গোপালগঞ্জ ও হাতে গোনা দুয়েকটি জায়গায় সারাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এমনকি শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন আত্মগোপনে। এমন অবস্থায় দলটি ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি ঘিরে প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন।
দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে আসার জন্য প্রচার সম্পাদক এরই মধ্যে জানিয়েছে বলে শুনেছি।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা, উপজেলার দলীয় কর্মী-সমর্থক ও নেতাদের ঢাকায় আসতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে তারা কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণবিদ্রোহের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তো তাদের নিষিদ্ধ করা হয়নি। ১৫ আগস্ট তো শোক দিবসও আছে, সুতরাং সেই সুযোগ নিয়ে তারা হয়তো সমাবেশ করার চেষ্টা করছে।
‘শেখ হাসিনা অডিও কলে নির্দেশ দিয়েছেন’
আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ আগস্ট দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকা এসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে আসতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার এমন একটি অডিও কলের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন অনেকে। ওই অডিও কলের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ করেছে। সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, ‘সবাইকে ঢাকা আসতে হবে। মৌন মিছিল করে বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুল দিতে হবে।’
শুক্রবার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মোবাইল ফোনে এই নির্দেশনা দেন তিনি। যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘নেতাকর্মী যাদের ওপর হামলা হয়েছে, যাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে, তারা যেন থানায় গিয়ে অভিযোগ (সাধারণ ডায়েরি-জিডি) করেন।’
ওই কলে পুলিশ কর্মক্ষেত্রে (থানায়) ফিরেছে কি না— সে বিষয়টিও জানতে চান তিনি।
যা বলছেন সজীব ওয়াজেদ
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর এখন পর্যন্ত দুই বার ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দেন সজীব ওয়াজেদ। রোববার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আগামী ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
যেখানে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িটি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই মব, জাতির পিতার সেই বাসাকে পুড়িয়ে ফেলেছে। যে বাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও আমাদের পরিবারকে হত্যা করা হয়।’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসাটি ধ্বংস করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেই বাসা ১৯৭৫ সালের খুনিরাও ধংস করার সাহস পায়নি, যেই বাসা এতদিন মিউজিয়াম ছিল, সেই বাসাকে তারা পুড়িয়ে ফেলেছে।
১৫ আগস্ট ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমার আহ্বান আপনাদের প্রতি, শান্তিপূর্ণভাবে ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে আসবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য, স্বাধীনতার চেতনার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
নিরাপত্তার চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি
গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে। এমন অবস্থায় ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা নিয়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
তাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দলের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলে আমি জেনেছি।
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। ক্ষমতাচ্যুতরা আবার সংগঠিত হচ্ছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) লোক জড়ো করুক আর যাই করুক, এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। এদেশের মানুষ এখন আর আপনাদের গ্রহণ করছে না।
সতর্ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এর তিন দিনের মাথায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন হয় নতুন অন্তর্র্বতী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক।
মাঠ পর্যায়ে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি।
আগামী ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, দলটির কাছে থাকা বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে বলে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর আছে।
সোমবার এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে সংগঠনটির সমন্বয়করা। সেই বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিন্তু এখনো মাঠে আছে। আমরা মাঠ থেকে এখনো সরে যাইনি। ছাত্র সমাজ যেকোনো ধরনের অপচেষ্টা চালানোর প্রতিরোধ করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন— পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঐদিন একই জায়গায় একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে তাতে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘ছাত্ররা যদি মনে করে এটার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ আপার হ্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছে, রাজনৈতিকভাবে যদি তারা এটা প্রতিহত করতে চায়, তাহলে হয়তো সেখানে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
ইএইচ