আমার সংবাদ ডেস্ক
নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে জানিয়ে শক্তহাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বলেছেন, সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে।
বুধবার রাতে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতি একথা বলেন তিনি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
নিম্নে তারেক রহমানের বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
১। দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি বিষয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি কথা বলতে চাই। বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে একদিকে, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অধিকার বঞ্চিত মানুষের চাওয়া পাওয়ার হিসেব অপরদিকে পলাতক স্বৈরাচারের প্রতিশোধের আগুন সবমিলিয়ে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজমান।
২। পলাতক স্বৈরাচার গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়মের পাহাড় তৈরি করেছিল। কেড়ে নিয়েছিল জনগণের সকল অধিকার। সেই হারানো অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা আর অনিয়মের পাহাড় ভাঙতে স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে।
৩। অবৈধ ক্ষমতা আর অবৈধ সুবিধা হারানো পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে জনগণের দাবি আদায়ের এই আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
৪। জনগণের অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে। সারাদেশে একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। জনগণের মনে অসহিষ্ণুতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
৫। গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে এসব ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে।
৬। প্রিয় দেশবাসী, মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনতার আন্দোলনে যেই শিক্ষার্থীরা সামনের কাতারে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলো, হঠাৎ করেই এখন তারা কেন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠলো? জনমনে এই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
৭। ছাত্র-জনতার এমন একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরিয়ে দেবে? এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। জনগণের যৌক্তিক আন্দোলন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ `সাবোটাজ` করছে কিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে হবে। পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
৮। বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কিনা সরকারকে এ বিষয়টিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
৯। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।
শক্তহাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন: সরকারকে তারেক রহমান
১০। আমি বারবার বলেছি, জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবে `করণীয় নির্ধারণ`ই হোক সরকারের প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে মনে রাখা দরকার, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের কোটি কোটি পরিবারকে প্রতিদিন সাধ এবং সাধ্যের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। পারিবারিক খরচ মেটাতে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে অনেকের কাছেই `সংস্কারের চেয়ে সংসার` অগ্রাধিকার হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
১১। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এই স্পর্শকাতর ইস্যু ব্যবহার করার সুযোগ নিতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সেই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।
১২। আমি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন। জনগণকে আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় থাকুন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথা যেন ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
১৩। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি দেশবাসীর প্রতি বিনীত আহবান জানিয়ে বলতে চাই, দাবি আদায়ে আন্দোলন করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং অবশ্যই জনগণের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে এই আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি এবং পলাতক স্বৈরাচার যাতে গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্যচ্যুত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার।
১৪। স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা যাতে জনগণের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা জরুরী। দেশে-বিদেশে পালিয়ে কিংবা লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা যাতে জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নাশকতা করতে না পারে সেই ব্যাপারে সরকার ও জনগণকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
১৫। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই এ সরকার পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের যেকোন অভাব অভিযোগ যথানিয়মে সরকারের কাছে উপস্থাপন করলে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে না। হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশে সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার কায়েম করতে হলে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি।
১৬। দেশের চলমান পরিস্থিতি দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমার আহবান, সরকারকে আরেকটু সময় দিন। আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিন। শান্ত থাকুন। পরিস্থিতির উপর সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখুন। দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে।
ইএইচ