আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এরআগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।
তারেক রহমান বলেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে পুনর্গঠন করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিএনপিই একমাত্র দল যেটি নিজ দলের দোষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন দেওয়া জরুরি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু। সম্মেলনের কেন্দ্র, জেলা , উপজেলা ও পৌর ইউনিটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর শনিবার যশোর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচিত হবেন।
সম্মেলনের শুরুতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত দলের নেতাকর্মীদের স্মরণে মঞ্চে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পরে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।
এদিকে এ সম্মেলন ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। শহরজুড়ে সাজসজ্জার বাহার—প্রধান সড়কগুলোতে ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি, জাতীয় নেতাদের নামে নির্মিত তোরণ বাড়িয়েছে উৎসবের আমেজ। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকেই ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জেলা উপজেলা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে উপস্থিত হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে কয়েকদিন ধরেই দিনরাত কাজ করেছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী।
১৬ বছর পর এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুটি পদে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দেলোয়ার হোসেন খোকনের জয় নিশ্চিত। অন্যদিকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দলের সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল বারী রবু। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তবে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারাই জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা।
আরএস