Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

কোরবানি একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ৩০, ২০২২, ১১:৪০ এএম


কোরবানি একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত

কোরবানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। নির্ধারিত দিনে কোরবানি না করে এর মূল্য সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না।  তাই মুসলিমদের জন্য কোরবানির কোনো বিকল্প নেই। তবে হ্যাঁ, বিশেষ কোনো কারণে কোরবানির নির্ধারিত দিনে কোরবানি করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করে নিবে। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম: ১৫/৪৯২-৫১৩)

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটিতে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কোরবানি করেন। অত্যন্ত আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় এই দিনটি।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, 'সুতরাং তুমি নামাজ আদায় কর এবং কোরবানি কর।' (সূরা কাউসার: ০২)

কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যারা কোরবানি করে না, তাদের ব্যাপারে হাদিসে শরীফে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যার কোরবানির সামর্থ্য আছে, তবুও সে কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ‘মুসল্লা’ (ঈদগাহ)-এ না আসে।' (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)

উক্ত আয়াত এবং হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কোরবানি একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত, এর কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেকটি ইবাদতকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি ও ত্বরিকা অনুযায়ী করতে হবে। এর বাহিরে নিজস্ব কোনো সিস্টেম বা পদ্ধতিতে আদায় করার সুযোগ ইসলামি শরিয়তে নেই।

করোনাসহ বন্যা ও ইত্যাদি বিপর্যয়ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই খারাপ যাচ্ছে। এতে জনগণ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সুযোগে অনেকে কোরবানির পরিবর্তে গরিব দুঃখীদের মাঝে "অর্থ দান" এর পরামর্শ দিচ্ছে।

যদিও আর্তমানবতার সেবা করা উত্তম কাজ ও প্রকৃত ধর্ম।  কিন্তু কোরবানির মত একটি ওয়াজিব বিধান এর জন্য ছেড়ে দেওয়া যায় না। সুতরাং কোরবানি না করে, কোরবানির টাকা গরিব-মিসকিনদের মাঝে দান করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম: ১৫/৪৯০-৯১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রত্যেক বছর কোরবানি করতেন। হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ বছর মদিনা শরীফে অবস্থান করেছেন, প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৪৯৫৫, সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ১৫০৭)

কোনোদিন তিনি একথা বলেননি যে, এই বছর আমরা কুরবানী না করে, অর্থ দান করবো। গরীব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াবো। কারণ, কোরবানি একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত। এর কোনো বিকল্প নেই। কোরবানির নির্ধারিত দিন বাকী থাকতে অর্থ দানের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হবে না। তবে সময় চলে গেলে অবশ্যই কাজা আদায় করতে হবে।

তাছাড়া আল্লাহর রাস্তায় এই রক্ত প্রবাহিত করার বিষয়টিকে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের একটি মৌলিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কুরআনে কারিমের সূরা হজে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই কোরবানি মুসলিম উম্মার জন্য একটি নিদর্শন হিসেবে আমি করে দিয়েছি, এই নিদর্শন তোমরা বাস্তবায়ন করবে।’ (সূরা হজ: ৩৪-৩৭)

এক হাদিসে এসেছে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিবাহের জন্য নিজেকে সোপর্দ করে দিলেন , একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই মহিলার সঙ্গে আমার বিবাহ পরিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মহর দেওয়ার মতো তোমার কাছে কী অর্থ আছে? সে বলল, আমার কাছে মহর দেওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তালাশ করো, লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। তালাশ করে এসে সাহাবী বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে লোহার আংটিও নেই। তবে একটি চাদর আছে, আমি এর অর্ধেক তাকে দিয়ে দেবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অর্ধেক চাদর দিয়ে সে কী করবে? তুমি পরিধান করলে, সে পারবে না আর সে পরিধান করলে তুমি পারবে না। 

ওই সাহাবী অনেকক্ষণ নিশ্চুপ বসে ছিলেন। যখন চলে যেতে লাগলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কুরআনের কোন কোন সূরা তোমার মুখস্ত আছে? সে বলল, কুরআনে কারিমের অমুক, অমুক সূরা আমার ইয়াদ আছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওইগুলো তুমি ভালো করে পড়তে পারো? সে বলল জ্বি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে কুরআনে কারিমের সূরাগুলো শিক্ষা দিবে, এর বিনিময়ে তাকে তোমার কাছে বিবাহ দিলাম। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৫০৩০, মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ১৪২৫)

হজরত সাহাবায়ে কেরাম রাযি. তায়ালা আনহুমের মাঝে দরিদ্রতার এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলেননি যে, এই বছর আমরা কোরবানি না করে, এর বিনিময়ের মাধ্যমে দরিদ্র সাহাবীদের বিবাহ সম্পাদন করবো, তাদের সাহায্য করবো।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, "অর্থ দান" এর নামে, কোরবানি না করা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। যারা এগুলো বলছে, তাদের উদ্দেশ্য গরিব অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের একটি স্বতন্ত্র ওয়াজিব ইবাদত ও ইসলামের একটি ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

মুফতি মোজ্জাম্মেল হক রহমানী
সিনিয়র শিক্ষক: মদিনাতুল উলুম বসুন্ধরা,  ঢাকা।

Link copied!