Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪,

কোরআনের ভূল ধরতে গিয়ে মুসলমান হলেন মার্কিন লেখিকা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২, ০৭:১৮ পিএম


কোরআনের ভূল ধরতে গিয়ে মুসলমান হলেন মার্কিন  লেখিকা

ইউরোপিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী। নাম ড্যানিয়েলে লোডুকা। ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ধর্মের প্রতি ছিল তার তীব্র বিতৃষ্ণা। স্রষ্টা বিষয়ে কোনো প্রশ্নই কখনো তার মনে জাগেনি। খারাপ লাগলে বই পড়ে সময় কাটাতেন। কিন্তু এই মানুষটিই একসময় বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। চলুন শুনে আসি তার ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ ঘটনা তার মুখ থেকেই-

ড্যানিয়েলে লোডুকা বলেন, ধর্মের প্রতি যেহেতু আমার বিতৃষ্ণা ছিল তাই আমি খ্রিস্টানও হতে চাইনি কখনো। কেউ যদি আমাকে কয়েক কোটি ডলার দিয়েও কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে বলত, আমি সরাসরি অস্বীকার করতাম।

আমার প্রিয় লেখক ছিলেন বার্টান্ড রাসেল। তার মতে ধর্ম হলো- কুসংস্কারের চেয়ে একটু ভালো, সাধারণভাবে লোকজনের জন্য ক্ষতিকর, যদিও এর ইতিবাচক কিছু বিষয়ও আছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্ম ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি জ্ঞানের পথ বন্ধ করে দেয়, ভীতি আর নির্ভরতা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া আমাদের বিশ্বের যুদ্ধ, নির্যাতন আর দুর্দশার জন্য অনেকাংশে দায়ী ধর্ম।

আমার মনে হতো, ধর্ম ছাড়াই তো ভালো আছি। আমি প্রমাণ করতে চাইতাম, ধর্ম আসলে একটা জোচ্চুরি। ধর্মকে হেয় করতে আমি পরিকল্পিত কাজ করার কথা ভাবতাম। হ্যাঁ, সেই আমিই এখন মুসলিম। আমি ঘোষণা দিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর সেটা না করে উপায়ও ছিল না। আমি অনুগত হয়েছি, ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি।

মজার ব্যাপার হলো- যখন ধর্মাবলম্বনকারীদের সাথে বিশেষ করে মুসলমান হিসেবে পরিচয়দানকারীদের সাথে কথা বলতাম, আমি প্রায়ই লক্ষ করতাম, তারা বিশ্বাস করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। তারা দ্বিধাহীনভাবে ধর্মকে আঁকড়ে ধরে। তারা জানে, তারা কী বিশ্বাস করে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো আল্লাহকে খুঁজকে চাইনি, সেই ইচ্ছাও আমার কখনো হয়নি। একদিন আমার এক বন্ধু ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে বোঝাতে চাইল, আমি ক্ষুব্ধ হলাম।

কোনো মানুষ যখন কিছু বিশ্বাস করতে চায়, তখন তার মধ্যে অনেক সময়ই এমন একটা বোধ সৃষ্টি হয়, যার ফলে সেটা গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ তার মধ্যে তৈরি হয়। ধর্মের ব্যাপারেও আমার মধ্যে তেমন একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। আমি ধর্মকে স্রেফ একটা বাজে জিনিস হিসেবে বিশ্বাস করতে চাইতাম।

এমন বিশ্বাস কিন্তু কোনো দৃঢ় প্রমাণের ভিত্তিতে হয়, এমন নয়। স্রেফ অনুমানের ওপর গড়ে ওঠে এ ধরনের বিশ্বাস। আমি যখন কোনো ধর্মীয় বই পড়তাম, তখন সেগুলোর প্রতি আমার কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকত না, তবে আমার উদ্দেশ্য থাকত তা থেকে ভুল-ত্রুটি বের করা। এর ফলে আমি আমার উদ্দেশ্যের প্রতি অটল থাকতে পারতাম।

আমার কুরআনের পেপারব্যাক অনুবাদটি পেয়েছিলাম বিনামূল্যে। একদিন দেখলাম, এমবিএ’র কিছু ছেলে কুরআন বিলি করছে। আমি জানতে চাইলাম, এগুলো কি ফ্রি? তারা হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে আমি একটা নিয়ে রওনা দিলাম। এসব বইয়ের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। কেবল ফ্রি পেয়েছিলাম বলে নিয়েছিলাম। তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল, বইটা পড়ে আরো কিছু খুঁত যদি পাওয়া যায়, তবে ধর্মটির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।

আমি যে কপিটা পেয়েছিলাম, সেটির পাতাগুলো মলিন হয়ে গিয়েছিল, অনেক পুরনো ছিল সেটি। কিন্তু আমি যতই পড়তে থাকলাম, ততই বশীভূত হতে লাগলাম। আমি আগে যেসব ধর্মীয় গ্রন্থ পড়েছি, তা থেকে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি অর্থ সহজেই বুঝতে পারছিলাম। সবকিছুই ছিল স্পষ্ট।

আমার মনে পড়ল, আমার এক বন্ধু যখন আমাকে ইসলামে আল্লাহ কেমন তা বোঝাচ্ছিল, আমি রেগে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার পাতার পর পাতা উল্টে অনেক জায়গায় দেখতে পেলাম তাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।’

মনে হলো, পবিত্র কুরআন সরাসরি আমার সাথে কথা বলছে, আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। এটা একটা ‘পুরনো গ্রন্থ’ কিন্তু পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক। এর কাব্যিকতা, কল্পনাশক্তি এবং যেভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়, তা আমাকে অন্তর থেকে নাড়া দিল। এর অভূতপূর্ব সৌন্দর্য আমি আগে কখনো টের পাইনি। মরুভূমির দমকা হাওয়া যেন সবকিছু উল্টে দিল। মনে হলো আমি যেন কিছু একটার জন্য দৌড়াচ্ছি।

কুরআন আমার বোধশক্তিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। নিদের্শনাবলী দেখে তারপর আমাকে চিন্তা করতে, ভাবতে, বিবেচনা করতে বলল। এটা অন্ধ বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে উৎসাহিত করে। কুরআন মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, স্রষ্টাকে স্বীকার করে নিতে বলে, সেই সাথে আধুনিকতা, মানবিকতা, সহমর্মিতার কথা বলে।

অল্প সময়ের মধ্যেই আমার জীবনকে বদলে দেয়ার আগ্রহ তীব্র হয়। আমি ইসলাম সম্পর্কে অন্যান্য বই পড়তে শুরু করলাম। আমি দেখতে পেলাম, কুরআনে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, অনেক হাদিসেও তেমনটা আছে। আমি দেখলাম, পবিত্র কুরআনে অনেক স্থানে নবী মোহাম্মদকে সংশোধন করা হয়েছে। আমার কাছে অদ্ভূত লাগল। এতেই বোঝা যায়, তিনি গ্রন্থটির লেখক নন।

আমি নতুন পথে হাঁটতে শুরু করলাম, পবিত্র কুরআনের জ্যোতি আর নবী মোহাম্মদের দেখানো রাস্তায়। এই লোকটির মধ্যে মিথ্যাবাদির কোনো আলামত দেখা যায়নি। তিনি সারা রাত নামাজ পড়তেন, তাঁকে নির্যাতনকারীদের ক্ষমা করে দিতে বলতেন, দয়া প্রদর্শনকে উৎসাহিত করতেন। সম্পদ আর ক্ষমতা তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন, কেবল আল্লাহর দিকেই নিবেদনের বিশুদ্ধ বার্তাই প্রচার করতেন। আর তা করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন।

সব কিছুই সরল, সহজেই বোঝা যায়। আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই মহাবিশ্বের জটিল আর বৈচিত্র্যময় কোনো কিছুই ঘটনাক্রমে ঘটেনি। তা-ই সাধারণ বিষয় হলো, সেই একজন- যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাকে অনুসরণ করতে হবে।

আমার অ্যাপার্টমেন্টের কৃত্রিম লাইটিং এবং বাতাসের ওজন নিয়ে ভাবতে ভাবতে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি পড়লাম- ‘কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, এরপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সূরা: আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)।

এই আয়াত পড়ে আমার মাথা যেন দুই ভাগ হয়ে গেল। এটাই তো বিগ ব্যাং তত্ত্ব (এটা স্রেফ একটা তত্ত্ব নয়)… সব জীবন্ত সত্তাই পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে, বিজ্ঞানীরা মাত্র এটা আবিষ্কার করেছে। এটা ছিল অবাক করা বিষয়। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তেজনাকর এবং সবচেয়ে ভীতিকর সময়।

আমি বইয়ের পর বই অধ্যায়ন করতে লাগলাম, তথ্যগুলো যাচাই করতে থাকলাম। এক রাতে আমি প্র্যাট ইনস্টিটিউট লাইব্রেরিতে বসে খোলা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার মুখটা হয়তো কিছুটা ফাঁক হয়ে গিয়েছিল। কী ঘটতে যাচ্ছে, আমি বুঝতে পারছিলাম না। তবে এটুকু অনুভব করলাম, আমার সামনে যা রয়েছে, তা হলো সত্য। আগে আমি যেটাকে সত্য ভাবতাম, সেটার আর কোনা অস্তিত্ব ছিল না।

এমনকি আমার সামনে দুটি বিকল্প ছিল। একটা আসলে কোনো বিকল্পই ছিল না। আমি যা আবিষ্কার করেছিলাম, তা অস্বীকার করতে পারছিলাম না, অগ্রাহ্য করতে পারছিলাম না। আগের মতোই চলব, এমনটাও ভাবছিলাম সামান্য সময়ের জন্য। সেটাও সম্ভব ছিল না। আমার কাছে পথ খোলা ছিল কেবল একটাই। ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না আমার সামনে। অন্য কিছু করা মানেই ছিল সত্যকে অস্বীকার করা।

সূত্র : ইসলামিক সিটি ও রাহয়া-ফাতহা

আমারসংবাদ/আরইউ

Link copied!