জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৩:৩৪ এএম
কিয়ামত দিবস কবে সংঘটিত হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এমনকি মহানবী (সা.)-ও কবে কিয়ামত হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। বরং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে কি কি লক্ষণ দেখা যাবে সে বিষয়ে বর্ণনা করেছেন মহানবী (সা.)। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য- ‘আরবভূমিতে যত দিন তৃণলতা ও নদী-নালা ফিরে আসবে না, তত দিন কেয়ামত হবে না।’ (মুসলিম)
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মক্কানগরী ও এর আশাপাশের বেশ কিছু ছবিতে তার প্রমাণ মিলল। এতে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র কাবাঘরের বেশ কাছের কয়েকটি পাহাড়, মাঠঘাট ও সড়কের দুই পাশ সবুজ তৃণলতায় ছেয়ে গেছে।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা নতুন বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আর এ বৃষ্টির কারণে দেশটির পূর্বাঞ্চলের মরুভূমির ধূসর পাহাড়গুলো রূপ নিয়েছে সবুজ রঙে।
সবুজ গাছ, ঘাস ও লতাপাতায় ছেয়ে যাওয়া পাহাড়গুলোর দৃশ্য স্পষ্ট দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্যাটেলাইট থেকেও।
গেল কয়েকদিন ধরে মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরীফ ও এর আশপাশে বৃষ্টিপাত হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার জানা গেল এ বৃষ্টির প্রভাবে মরুভূমির পাহাড়ে সবুজ গাছ-পালা বেড়ে ওঠেছে।
ছবিগুলোর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক বৃষ্টির পর মক্কার সবুজ দৃশ্য’। সৌদি আরবে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশিও তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
পোস্টগুলোতে বেশির ভাগ মন্তব্যকারীকে মহানবী (সা.)-এর উপরে উল্লেখিত হাদিসটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে দেখা যাচ্ছে।
কিয়ামতের আলামত:
আরবী ‘কিয়াম’ শব্দ থেকে ‘কিয়ামত’ শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ হচ্ছে- দাঁড়ানো বা থেমে যাওয়া। প্রচলিত অর্থে ভবিষ্যতের কোন এক সময় অনুষ্ঠিতব্য মহাপ্রলয়কে ‘কিয়ামত’ বলা হয়। মহাবিশ্বের আয়ু যেদিন ফুরিয়ে যাবে, সেদিন ইসরাফিল (আ.)-এর প্রথম ফুঁকের মাধ্যমে নশ্বর জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় ফুঁকের মাধ্যমে সব সৃষ্টি ফের জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে। এটিই ইসলামের পরিভাষায় কেয়ামত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, ফলে আসমান-জমিনের সবাই মূর্ছা যাবে, তবে আল্লাহ যাদের রক্ষা করতে চাইবেন, তারা ছাড়া। এরপর আবার শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে।’ (সুরা যুমার: ৬৮)
কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সম্পর্কে এই হাদিসে ১৩টি আলামতের উল্লেখ রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ১. যখন জিহাদে প্রাপ্ত মালকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, ২. আমানতকে লুটের মালের ন্যায় ও ৩. জাকাতকে জরিমানা বা দণ্ড মনে করা হবে, ৪. বিজাতীয় শিক্ষা গ্রহণ করা হবে, ৫. পুরুষ স্বীয় স্ত্রীর অনুসরণ করবে এবং মাতাকে অমান্য করবে, ৬. বন্ধু-বান্ধবকে নিকটে স্থান দিবে ও পিতাকে দূরে রাখবে, ৭. মসজিদসমূহে উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলে হবে, ৮. ফাসিক (নাফরমান) ব্যক্তি গোত্রের নেতা হবে, ৯. চরিত্রহীন নিম্ন শ্রেণীর লোক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করবে, ১০. কোন ব্যক্তির অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্যই তাকে সম্মান করা হবে, ১১. গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বহুল পরিমাণে প্রকাশ হয়ে পড়বে, ১২. মদ পান করা হবে এবং ১৩. পরবর্তী যুগের লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি লানত করবে।
উল্লেখিত নিদর্শনগুলো দেখা দিলে তোমরা লাল অগ্নিযুক্ত বায়ু, ভুমিকম্প, ভুমি ধ্বসে যাওয়া, লোকের আকৃতি পরিবর্তন হওয়া, পাথর বর্ষিত হওয়া এবং অন্যান্য আরো আজাব ও গজবের জন্য অপেক্ষা করো, যেমন তসবীহর সুতা কেটে দিলে দানাগুলো দ্রুত খসে পড়ে, এমনিভাবে আল্লাহ্র গযবও একের পর এক পৌছবে।"
হাদিস পাঠে জানা যায় যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) ২৪ হাজার বার দুনিয়াতে হুজূরে আকরাম (সাঃ) এর দরবারে এসেছিলেন। এক সাক্ষাতে হুজূরে পাক (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হে জিবরাঈল, আমার ইন্তেকালের পরে আপনি কতবার দুনিয়াতে আসবেন? তিনি বললেন- ১০ বার আসব এবং প্রতিবারই একটি করে জিনিস তুলে নেব। দশম জিনিসটা তুলে নেওয়ার পর ঈসরাফিল (আঃ) সিঙ্গায় ফুঁ দিবেন এবং কেয়ামত আরম্ভ হবে।
দশটি জিনিস হল:-
১) বরকত তুলে নেব
২) এবাদত থেকে মজা তুলে নেব
৩) পরস্পর মহব্বত তুলে নেব
৪) লজ্জা তুলে নেব
৫) হক বিচার তুলে নেব
৬) ছবর (ধৈর্য্য) তুলে নেব
৭) একদল আলেম বের হবে যারা সত্য হক কথা বলবে না
৮) ধনীদের সৎ সাহস উঠিয়ে নেব
৯) ঈমানদার থাকবে না, ঈমান উঠে যাবে
১০) ক্বারীদের কাছ থেকে কুরআনের তিলাওয়াত তুলে নেব, অর্থাৎ কুরআনকে উঠিয়ে নেব।
মহাপ্রলয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-“যখন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, যখন তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে, যখন সমুদ্র উথলে উঠবে, যখন কবরগুলো উন্মোচিত করা হবে, তখন প্রত্যেকে জানবে সে আগে কি পাঠিয়েছিল আর পিছনে কি রেখে এসেছে” (সূরা- ইনফিতার, আয়াত- ১-৫) ।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইস্রাফিল আলাইহিসসালাম -এর সিংগার ফুঁৎকারের মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টি জগত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। তাই পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে কিয়ামত সম্পর্কে যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে মানুষের ভয়াবহ শেষ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষ সাবধান হয় এবং তার প্রভুর অনুগত হয়ে সৎ কর্মশীল হয়।