এপ্রিল ১৪, ২০২৩, ০৩:৪৫ পিএম
রোজা সর্বাধিক সওয়াবপূর্ণ একটি আমল। এ আমলের ও তার সওয়াবের প্রতি মুমিনদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। রমজানের ফরজ রোজার পাশাপাশি এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে নফল রোজারও সওয়াব পাওয়া যায়। তাই এই রমজানে রোজার ফজিলতপূর্ণ সেসব আমলেও আমরা গুরুত্ব দিতে পারি। নিম্নে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা পালনে রোজা রাখার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।
রোজাদারদের সহযোগিতা করা
অনেকে রোজা রেখে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে তার কাজগুলো তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি যদি তার সেই কাজে তাকে সহযোগিতা করে, তবে সে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করতে পারবে। আনাস (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না। যারা রোজা রাখছিল না, তারা উটের দেখাশোনা করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী (সা.) বললেন, ‘যারা সাওম পালন করেনি তারাই আজ সওয়াব নিয়ে গেল।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯০)
রোজাদারকে ইফতার করানো
যার যার সাধ্য অনুযায়ী রোজাদারকে ইফতার করানো গুরুত্বপূর্ণ আমল ও অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)
দরিদ্র ও বিধবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
এতিম, দরিদ্র ও বিধবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া সামাজিক কর্তব্যবোধের একটি। প্রথমদিকে পরিবার ও সমাজ তাদের প্রতি একটু দয়াপরবশ হলেও একপর্যায়ে চরম অবমূল্যায়নের শিকার হয় তারা। পরিবার ও সমাজে নিগৃহীত হতে হয় তাদের। অথচ তাদের দেখাশোনা ও প্রয়োজন পূরণের সহযোগিতাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, রাতের বেলায় নফল নামাজ আদায় ও দিনের বেলায় রোজা রাখার সমতুল্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)
খাবার শেষে দোয়া পড়া
খাবার শেষে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা নবীজি (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে দোয়া পড়ে শুকরিয়া জানাতেন। আহার শেষে মহান রবের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতায় দোয়া করলে রমজানের বাইরেও রোজাদারের সমান মর্যাদা পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোজাদারের সমান মর্যাদাশীল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৬)
জুমার দিনের আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
জুমার দিন সপ্তাহের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন। যারা বরকতময় এই দিনের সুন্নাহ ও আদবের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করবে তারা রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে এবং সকাল-সকাল জুমা আদায়ের জন্য যাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, সে (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর সিয়াম পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের (সমান) সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
সীমান্ত পাহারা দেওয়া
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে এক দিন বা এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া, এক মাসের সাওম পালন ও সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর ওই প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তার আমলের সওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিজিক (জান্নাত থেকে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯১৩)
আরএস