নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২০, ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২০, ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুপক্ষের সংঘর্ষের হতাহতের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন উভয়পক্ষ। এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ইজতেমা মাঠে মাদরাসার শিক্ষার্থী কী করছে?
এমন প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের (জুবায়েরপন্থি) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেছেন, ‘টঙ্গী মাঠের ভেতরে কাকরাইল মাদরাসার একটি শাখা (হেফজ বিভাগ) রয়েছে। এসব কোমলমতি ছোট ছোট শিশুদের কেন্দ্র করে তারা (সাদপন্থি) বারবার মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে ভুল মেসেজ (বার্তা) দিচ্ছে।’
শুক্রবার তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ী নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।
বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন, ইজতেমার সময় ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ইজতেমার জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজে মাদরাসার ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করে থাকে। এসব সত্য সকলেরই জানা। কিন্তু সাদপন্থিরা তা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে তাবলিগের মেহনতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
ইতোমধ্যে সাদপন্থিরা তাবলিগের বর্তমান সংকটে হেফাজত ও ইসলামি দলগুলোর যুক্ততার সমালোচনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এর জবাব দিয়ে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘তাবলিগের কাজের প্রকৃত জিম্মাদার হযরত ওলামায়ে কেরাম। তাবলিগের মেহনতের তিন হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ.), মাওলানা ইউসুফ সাহেব (রহ.) ও মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব (রহ.) সবাই আলেম ছিলেন। মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ.) শুরু থেকেই ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে এই মেহনতের (তরতিব) পথ ও পদ্ধতি কী হবে, তা ঠিক করেছেন। তাবলিগে আলেমরা কোথা থেকে আসলো, এ প্রশ্ন করা সাদপন্থিদের গোড়ামি ছাড়া আর কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘সাদপন্থিরা বারবার এ কথা বলে যাচ্ছে, তাবলিগের মেহনতে তৃতীয় পক্ষ আলেমদের কারণে আজকের এই সমস্যা। আমরা তাদের স্পষ্ট বলে দিতে চাই, তাবলিগের মেহনত দ্বীনের অন্যতম একটি মেহনত এবং দ্বীনের ধারক-বাহক হচ্ছেন হযরত ওলামায়ে কেরাম। মাওলানা সাদ সাহেব বারবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দ্বীনের মেহনতকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন, আর ওলামায়ে কেরাম বসে থাকবেন; এটা কখনোই হতে পারে না।’
হাবিবুল্লাহ রায়হান উল্লেখ করেন, ‘১৯৯৫ সালে বিভিন্ন দেশের তাবলিগের মুরুব্বিরা মিলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, দাওয়াত ও তাবলিগের এই মেহনত এখন থেকে একক আমিরের পরিবর্তে শুরায়ি নেজামের অধীনে পরিচালিত হবে। সেই অনুযায়ী ১০ জনের একটি শুরার জামাত গঠন করা হয়, যার মধ্যে মাওলানা সাদ সাহেবও ছিলেন। হঠাৎ করেই ২০১৭ সালে মাওলানা সাদ সাহেব নিজেকে আমির হিসেবে ঘোষণা করেন। তাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক তাবলিগের মূল মেহনত থেকে আলাদা হয়ে যান। যারা বর্তমানে সাদপন্থি হিসেবে পরিচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বারবার মাওলানা আরশাদ মাদানী সাহেবের কথা বলছিলেন। এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রিন্সিপাল সাহেব বলেছিলেন, মাওলানা আরশাদ মাদানী সাহেব মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে কিছু বলে থাকলে এটা একান্ত তার নিজস্ব অভিমত। মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন আসেনি।’
সাদপন্থিদের উদ্দেশ করে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, আপনারা দীর্ঘ ২০ বছর (১৯৯৫-২০১৫) শুরায়ি নেজামের অধীনে থেকে তাবলিগের মেহনত করেছেন। যেটা আমাদের আকাবিদের সিদ্ধান্ত ছিল। মাওলানা সাদ সাহেব নিজেকে আমির ঘোষণা করার পর, আপনারা আকাবির মুরুব্বিদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তার অনুসরণ করা শুরু করেন। আপনারা সেখান থেকে ফিরে আসুন। আপনাদের আমিরকে তার এমারত থেকে ফিরে এসে তার ভুলগুলো স্বীকার করে তওবা করতে বলুন।’
মামলার বিষয়ে তিনি জানান, সাদপন্থিদের নামে ইতোমধ্যে হত্যা মামলা করা হয়েছে। আরও বিভিন্ন মামলা শিগগিরই দায়ের করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের একজনকে (মুয়াজ বিন নূর) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল, তারা খুব শিগগিরই এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন।’
ইএইচ