জুলাই ১৮, ২০২২, ০১:১৪ এএম
হুদা কমিশনের অধীনে হওয়া কোনো বিতর্কিত নির্বাচনের দায় নেবেন না আউয়াল কমিশন। গণমাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৮ মাস। গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ চেষ্টা। বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসির আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় চাপ রয়েছে বহু। কূটনৈতিক মহলেও অভিযোগ তোলা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। রাজনীতি পাড়ায়ও উত্তাপ রয়েছে।
তবে নয়া কমিশনের (ইসি) চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আস্থা অর্জনে সর্বমহলের মতামত নেয়া হচ্ছে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞদের পরামর্শকে। বিশিষ্ট নাগরিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাংবাদিক, বিদেশি কূটনীতিক ও ইভিএম বিশেষজ্ঞদেরও ইসির দরবারে ডাকা হয়েছে।
গতকাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও শুরু হয়েছে সংলাপ। ইভিএম নিয়ে আলোচনার পর দ্বিতীয় দফায় ৩৯টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) কে দিয়ে মতবিনিময় শুরু হয়। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ দেয়া হয়েছে,তবে ব্রিফিং করে দলটি জানিয়ে দিয়েছেন ইসির কোনো সংলাপে তারা যাবেন না। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ গ্রহণের মাধ্যমে ইসির স্বচ্ছতা নির্ভর করছে। কুমিল্লা সিটির ভোটে শেষবেলায় বিশৃঙ্খলা নিয়ে আউয়াল কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম টেস্ট কেইসে হোচট খেয়েছেন তিনি। আগামীতে রয়েছে আরো বড় পরীক্ষা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। এবার বিএনপিসহ বেশ কিছু দল নির্বাচনে না যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও অংশ নিচ্ছে না তারা।
এর মধ্যে নয়া ইসি ইভিএমে নির্বাচনের কথা বলছেন। আওয়ামী লীগসহ দুই-তিনটি দল ব্যতীত কেউ ইভিএমে ভোট চায় না। এর মধ্যে যদি ইভিএমে ভোট করতে হয় কোন যুক্তি ও পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে এ নিয়ে ইসিতে পর্যবেক্ষণ ও কর্মপরিকল্পনা চলছে। সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে বিশ্বাস করছে না। বিএনপির অভিযোগ ইসি সরকারের প্রেসক্রিপশনে চলছে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনোভাবেই অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যমূলক নির্বাচন হতে পারে না। বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিকদের দরবারেও অভিযোগ করা হচ্ছে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। তবে চলমান কমিশন চায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। এ জন্য সব নিবন্ধিত দলের মতামতকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে হিসাবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে।
সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধান অনুসারে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচনের জন্য ইসির হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ ১৮ মাস। এর আগেই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছু করতে হবে।
আউয়াল কমিশনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আউয়াল কমিশনের (ইসি) অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না । এখন দেশের মানুষ চায় না, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক বা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক। সেই কারণেই আমরা এই কমিশনের কোনো সংলাপই বলেন বা তাদের কোনো আলোচনা বলেন বা ইভিএম বলেন, আমরা কোনো কমেন্টই করছি না। কারণ উই ডোন্ট বিলিভ যে, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকার যদি ওরা থাকে এবং শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন তাহলে কোনো মতেই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা আমরা দেখেছি গতবার, তার আগে দেখেছি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ তো আলোচনা করার সুযোগই রাখেনি। তারা তো সরকারে। তারা ড্রাইভিং সিটে। স্টিয়ারিং তাদের হাতে। পুরোটাই তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগই বলছে, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাই না, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই। তিনি (আওয়ামী লীগের প্রধান) তো উদ্যোগ নিচ্ছেন না বরং তিনি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, ওইভাবে নির্বাচন হবে। তাহলে আপনি সুযোগ রাখছেন কোথায়? স্পেস রাখছেন কোথায়? আপনি পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে স্পেস দিচ্ছেন কোথায়? মিটিং করতে গেলেই এবং কি মিলাদ পড়তে গেলেও বাধা দিচ্ছেন পুলিশ দিয়ে। গতকালও মুন্সিগঞ্জে আমাদের একটা দোয়া মাহফিল করতে দেয়নি পুলিশ। এই সমস্ত ভণ্ডামির মানে হয় না। এটা তো হিপোক্র্যাসি। আমরা আপনাদেরকে আশা জাগাতে চাই এদেশের মানুষ অবশ্যই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে।’
গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত : বিএনএফ
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে লিখিত বক্তব্যে এ কথা জানায় দলটি। সংলাপে বিএনএফ জানায়, দেশে সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ অনেক কঠিন হবে বলেও জানিয়েছে বিএনএফ। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দলটি জানায়, বর্তমানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ বেশ কয়কটি দল নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। অন্যদিকে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে যে সব দল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে তাদের প্রতি ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আন্তঃদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুসরণে পিছিয়ে আছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পরিচালিত হয়।
খেলবে রাজনৈতিক দলগুলো, আমরা শুধু রেফারি : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠের ‘খেলোয়াড়’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না; আপনাদেরকে (রাজনৈতিক দল) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব। আগের জাতীয় নির্বাচনে নানা সমালোচনার দায় নতুন ইসি নিতে চায় না জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সব দায় তারা নেবেন। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দায় বর্তমান কমিশনকে দেবেন না। আমাদের নির্বাচনের দায় আমরা বহন করব। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও নিরপেক্ষ করতে।’ সিইসি বলেন, ‘আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকেও কিন্তু রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করব? কাজেই আমরা সাহায্য করব। পুলিশের ওপর, সরকারের ওপর আমাদের কমান্ড থাকবে।’