অক্টোবর ৯, ২০২২, ০১:৩৫ এএম
কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে ব্যস্ত বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপে রেখে ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে কূটনৈতিক ও বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে দলটি। তাদের এমন বিদেশমুখী রাজনীতিতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির ওপর বাড়ছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপ। যদিও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির এমন অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীনরা।
তাদের দাবি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের ক্ষমতার উৎস জনগণ। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো শক্তি কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয় কারা? যাদের মাজায় শক্তি থাকে না;রাজনৈতিকভাবে যারা দুর্বল এবং দেশীয় রাজনীতিতে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই— তারাই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। বিদেশি শক্তি কখনও কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারে না।
কাউকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতেও পারে না। কাজেই বিদেশে নালিশ দিয়ে কাজ হবে না। বিরোধীদের উচিত নালিশ বা অভিযোগের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি শুরু করা এবং নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে অংশগ্রহণ করা।
বিএনপির নালিশে আওয়ামী লীগ কখনোই অস্বস্তিতে পড়েনি, আগামীতেও পড়বে না উল্লেখ করে আব্দুর রহমান আরও বলেন, যারা বিদেশে গিয়ে নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নালিশ দেয়, অপপ্রচার করে, মিথ্যাচার করে, তাদের সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা আছে। তারা জানে, যারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া, যারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, তারাই ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত পুঁজি করে অভিযোগ দিচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, আর মাত্র ১৪ মাস পর দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন যেন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়— সে জন্য কূটনীতিকপাড়া ও বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি। চেষ্টা করছে সরকারবিরোধী বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার। বিএনপি হাইকমান্ড চায় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে দলের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। এতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারলেও মাঠের রাজনীতিতে যেন শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে। দলটির শীর্ষ নেতাদের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বিদেশমুখী রাজনীতিতে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ। এতে দলটিতে বাড়ছে বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে— তা সম্পূর্ণ এই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিদেশিদের মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আশার আহ্বান আওয়ামী লীগের। তারা মনে করে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। আশা করি আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা এবং অপরাজনীতির পথ পরিহার করবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, যে কোনো দেশের নির্বাচন সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে বিদেশিদের মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। কাজেই বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে কেউ যদি বিদেশি ও কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেয়, তা শোভন নয়। এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে— তা সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই অনৈতিক অভিযোগ কোনো কাজে আসবে না। এছাড়া বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা আছে। কাজেই অভিযোগ দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হয়, তাহলে দেশের সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তারা যেসব অভিযোগ দিচ্ছে, এসব অভিযোগ নিজেদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্য বলছে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কাজেই সংবিধানের বাইুরে গিয়ে কথা বলে লাভ হবে না। আশা করি বিএনপি এসব বিষয় বিবেচনা করবে। বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করবে। গণতান্ত্রিক দেশে তারা রাজপথে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনের নামে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ করছে— এগুলো করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।