অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০২:০৮ এএম
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা সাগর সরকার। গত তিন দিন ধরে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগে ভুগছেন। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে কাবু হয়েছেন তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ কিনতে গিয়ে বাসার আশেপাশে কোনো ফার্মেসিতে পাননি।
এরপর তিনি চোখের ড্রপ খুঁজতে কলাবাগান থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যান। সেখানে খোঁজ পান মক্সিফ্লক্সাসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের। ধানমন্ডি ফার্মেসি-২ থেকে যখন তিনি ড্রপটি কিনছিলেন, তখনই কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে।
তিনি জানান, কলাবাগান এলাকার ওষুধ দোকানদাররা তাকে জানিয়েছেন, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো। খোঁজ নিয়ে মিলেছে এ তথ্যের সত্যতা। গত সেপ্টেম্বর থেকে কনজাংকটিভাইটিস বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অপটিমক্স আইড্রপের সংকট বেশি বলে জানিয়েছেন ওষুধ বিক্রেতারা।
রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকার মা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, কোম্পানি অপটিমক্স আইড্রপ চাহিদামতো সরবরাহ করতে পারছে না। আমার দোকানে প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী এ ড্রপের জন্য আসছেন। একই কথা শোনা গেছে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলার ফার্মেসিতে।
গতকাল শরীয়তপুরের গোপাল ফার্মেসির বিক্রেতা বিশ্বজিৎ রায় মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, হঠাৎ চোখ ওঠা রোগী বেড়ে যাওয়ায় ১৪০ টাকা দামের অপটিমক্স আইড্রপের চাহিদা অনেক বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ কম। চাহিদা বেশি থাকায় ড্রপের অতিরিক্ত দাম হাঁকানোরও অভিযোগ আছে ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
চিকিৎসকদের মতে, চোখ ওঠা একটি অত্যন্ত সংক্রমিত রোগ। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহই চোখ ওঠা রোগ। এ রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে। এ রোগের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দায়ী। সাধারণত যে মৌসুমের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। গত জুলাই মাস থেকে কনজাংকটিভাইটিস রোগী বাড়তে শুরু করে। তবে সেপ্টেম্বরে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। চক্ষু হাসপাতালগুলোর আউটডোরের অধিকাংশ রোগীই এখন কনজাংটিভাইটিসের।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্যমতে, দৈনিক ১৫-২০ শতাংশ রোগী আসছেন এই রোগ নিয়ে। চিকিৎসকেরা আরও জানান, ভাইরাসজনিত রোগ কনজাংকটিভাইটিসে ওষুধের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। এমনিতেই তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এ রোগ সেরে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এসময় চিকিৎসকরা চোখের যত্ন নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেন। রোগী আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়েছে এই ওষুধ সরবরাহের ওপরে।
এছাড়া এ রোগের জন্য হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করাই ভালো। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করলে পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওষুধ না থাকায় অনেক রোগীকেই ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ওষুধ বাজারে একেবারেই নেই। ওষুধের তুলনায় রোগী অনেক বেশি, তাই অনেককেই আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি।
মিটফোর্ড এলাকার পাইকারি ওষুধ ব্যবসাীয় সবুজ আলম ফিরোজ আমার সংবাদকে জানান, গত ১৫-২০ দিন ধরে ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে, সে তুলনায় সরবরাহ নেই। যা-ই থাকছে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই এই ড্রপের সরবরাহ কম।
একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সেলস এক্সিকিউটিভ জানান, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের চাহিদা সারা বছরই কম থাকে। আমরা সে অনুযায়ী উৎপাদন করে বাজারজাত করি। আগাম তো বলা যায় না কখন চাহিদা বাড়বে। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই চাপ তৈরি হয়েছে। তবে এ সংকট শিগগিরই কেটে যাবে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. আতিকুল হক বলেন, বর্তমানে যে চোখ ওঠা রোগ হচ্ছে, সেটাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই; কারণ ভাইরাসজনিত এ রোগ এমনিতে ঠিক হয়ে যায়। মক্সিফ্লক্সাসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের বেশি ব্যবহার হয় বলে এখন এর সংকট দেখা দিচ্ছে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, চোখ ওঠা রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এজন্য হাত ভালো করে ধুতে হবে। যাদের চোখ উঠেছে এবং তার আশেপাশে যারা অবস্থান করবেন, তাদের ব্যক্তিগত হাইজিন প্রতিপালন করতে হবে।