প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন
সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮, ০৬:৩২ পিএম
যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষাই সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রত্যেক দেশের সরকারই চায় তার জনগণ বেশি শিক্ষিত হোক, দেশ এগিয়ে যাক। এরই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে সাক্ষরতার হার। এ বছর আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সাক্ষরতা অর্জন করি, দক্ষ হয়ে জীবন গড়ি’। শুধু সাক্ষর করতে পারলেই ওই জাতি শিক্ষিত হয় না। আগের যুগে নিজের নাম লিখতে পারলেই সাক্ষর বলা হতো। কালক্রমে এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে সাক্ষরতা হিসেবে তাকে ধরা হয় যে তিনটি শর্ত পালনে সক্ষম। এগুলো হলোÑ যে ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাবনিকাশ করতে পারবে তবেই তাকে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন বলা হবে। বিশ্বে এখন এই সংজ্ঞাকেই ভিত্তি করে সাক্ষরতার হিসাব করা হচ্ছে । গত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির দৌড়ে অনেকখানিই এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৫০ সালের দিকে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সাক্ষরতার হার ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই সময় তিনটি দেশে সাক্ষরতার চিত্র একই রকম থাকলেও পরবর্তী সময়ে এ হার সবচেয়ে বেশি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ইউনেস্কো প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার বলা হয়েছে ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে এ হার যথাক্রমে ৬৯ ও ৫৭ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ২০০০-২০১৫ সালের মধ্যে তরুণ (১৫-২৪ বছর বয়সি) জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় নিজের অবস্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতা লাভ করি তখন বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ১৬.৮ শতাংশ। ১৯৭৪ সালে এই হার উন্নীত হয় ২৫.৯ শতাংশে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৫.৩ ও ৪৭.৯ শতাংশ। এরপর থেকে শুধু বেড়েই চলেছে সাক্ষরতার হার। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হারের ওপর ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্স (ইউআইএস) ২০১৬ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেতে পেতে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক দশকে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পরিমাণ যথাক্রমে ৭৫ দশমিক ৬২ এবং ৬৯ দশমিক ৯০। এই তথ্যে দেখা যায়, গত ১০ বছরে শিক্ষিত যুবক ও যুব মহিলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সালে যে হার ছিল ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, তা বেড়ে ২০১৬ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৯২ দশমিক ২৪ ভাগ। ইউআইএসের তথ্য অনুযায়ী, পার্শ্ববর্তী দেশের সাক্ষরতার হারের চেয়ে বাংলাদেশে হার বেশি। ভারত ৬৯ দশমিক ৩০ ভাগ, নেপাল ৫৯ দশমিক ৬৩ ভাগ, ভুটান ৫৭ দশমিক ০৩ ভাগ ও পাকিস্তান ৫৬ দশমিক ৯৮ ভাগ। ইউআইএস অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ৪,৩৯৯.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০০৮ সালে ছিল ১,৯৯৩.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ৭ হাজার ৮৮৫ মিলিয়নেরও বেশি (৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা) বরাদ্দ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০ প্রণয়ন করেছে। শিক্ষা খাতে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়া কমেছে অনেকাংশেই। প্রাথমিকের এক কোটি ৩০ লাখ শিশু উপবৃত্তি পাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর হার ১৪ শতাংশ। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় চার কোটি শিশু বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই পায়। শিক্ষা অবকাঠামোতেও বিপ্লব সাধিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের ৮ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোর উদ্যোগে ইরানের তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে প্রতিবছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয় এবং ওই বছরের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আর ১৯৬৬ সাল থেকে ইউনেস্কো প্রথম দিবসটি উদযাপন করে। আর স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে।