অবহেলিত ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের অজানা কিছু তথ্য
ক্রীড়া ডেস্ক
ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০১:২৫ পিএম

জাতীয় দলের তথাকোথিত অবহেলিত ক্রিকেটার এবং সবার প্রিয় প্রাণভোমরা ইমরুল কায়েসের জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ সালে মেহেরপুরে।
অনেকে হয়তো জানেন না বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্টাইলিশ এই স্ট্রোক মেকারের আসল বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার সাহেবপাড়া গ্রামে।
দেশ সেরা মারদাঙ্গা এই অবহেলিত ওপেনার বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও ভারতের নদিয়ার সাহেবপাড়া গ্রাম হচ্ছে তার পৈতৃক ভিটা মাটি। কোলকাতার জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আনন্দবাজার ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট ইমরুল কায়েসকে নিয়ে একবার শিরোনাম করেছিলো!
শিরোনামটি ছিলো ‘শিকড়ের টানে ইন্ডিয়ার বাড়িতে বাংলাদেশি ওপেনার’!
আনন্দবাজার পত্রিকার দেওয়া ইমরুল কায়েসের সেই শিরোনামের প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো।
বাপ-ঠাকুর্দার মুখে ‘ইন্ডিয়ার বাড়ি’র কত যে গল্প শুনেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। সেই গল্প শুনতে শুনতে যেন চোখের সামনে দেখতে পেতেন সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম, গ্রামের পুকুর পাড়, খেলার মাঠ। কিন্তু বেশ কয়েকবার ভারতে এলেও নদিয়ার করিমপুর ২ ব্লকের সাহেবপাড়া গ্রামের সেই বাড়িটায় যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঁ-হাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের।
অবশেষে মিটল সে সাধ। বাবা, মা ও এক বন্ধুকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে গেলেন ইমরুল। মায়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন বাংলাদেশের ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেট-তারকা। মায়ের চিকিৎসার পরে কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সপরিবার সাহেবপাড়ায় যান তিনি।
ইমরুলের ঠাকুরদা কায়েম বিশ্বাসের জন্ম সাহেবপাড়াতেই। পাঁচের দশকে কায়েম চলে যান পূর্ব পাকিস্তানের মেহেরপুরে।
ইমরুলের বাবা বানি বিশ্বাসের জন্ম অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু ১৯৭১ সালে যুদ্ধ বাঁধলে কায়েম বিশ্বাস সপরিবার ফিরে আসেন সাহেবপাড়ায়। বছরখানেক বাদে পরিবারটি ফেরে বাংলাদেশে। তারপর থেকে ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হলেও আর এ দেশে আসা হয়নি তাঁদের।
সাহেবপাড়াতেই থাকেন ইমরুলের কাকা বজলুর রহমান বিশ্বাস। বজলু বলেন, ‘কলকাতায় এসে সাগর (ইমরুলের ডাকনাম) ফোনে বলল গ্রামে আসতে চায়।’
সেই মতো বৃহস্পতিবার বাড়িতে হইহই শুরু হয়ে যায়। বিশেষ পদ বলতে দেশি মুরগির মাংস আর শেষ পাতে রসগোল্লা। কিন্তু ইমরুল একটি রুটি, সামান্য মাংস ছাড়া আর কিছুই খাননি। রাতেও তাই। তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকের খাওয়ার বহরে হতাশ তাঁর সম্পর্কিত বৌদি রিমা বিবি।
তাঁর কথায়, ‘অত বড় মাপের খেলোয়াড়। অথচ খাওয়ার বেলায় লবডঙ্কা! কথায় কথায় শুধু বলে, ‘বৌদি জমিয়ে আর এক কাপ চা কর দেখি’।’
ইমরুলের আসার খবর শুনে শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে বজলুর রহমানের বাড়ির সামনে। করিমপুর জামতলা নবারুণ সঙ্ঘের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠে ব্যাট হাতে স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতেও নেমে পড়েন তিনি। বেশ কিছু পরামর্শও দেন।
ইমরুলের কথায়, ‘সেই ছেলেবেলা থেকে করিমপুর, সাহেবপাড়ার নাম শুনে আসছি। এই প্রথম এখানে আসার সুযোগ হল। দাদু বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। এই এলাকার মানুষের আন্তরিকতা, ক্রিকেট নিয়ে এমন উন্মাদনার কথা আমারও মনে থাকবে।’
২০১৫ সালে আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ইমরুলের বয়স ছিলো ২৮ বছর। সেই ২০১৫ সালের পর থেকে প্রায় ৫ বছরে বর্তমানের ৩৩ বছরের ইমরুল কায়েস টেস্ট ম্যাচে আর কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি! টেস্ট ম্যাচের গড় কমতে কমতে এখন ২৪ এ ঠেকে গেছে।
ইমরুল ক্রিকেটে কুমার সাঙ্গাকারাকে আদর্শ হিসেবে মান্য করেন এবং তার মতোন খেলার চেষ্টাও করে থাকেন। অথচ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইমরুলের মধ্যে গুরু কুমার সাঙ্গাকারার ছিটে ফোটা গুণও পরিলক্ষিত হয়নি।
গুরু সাঙ্গাকারা ১৩৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩৮ সেঞ্চুরি এবং ৫২টা ফিফটির সৌজন্যে ৫৭.৪০ গড়ে ১২৪০০ রান করেছিলেন!
প্রক্ষান্তরে শাগরেদ ইমরুল কায়েস ৩৯ টা টেস্ট ম্যাচ খেলে তিন সেঞ্চুরি এবং ৪ ফিফটির সৌজন্যে ২৪ গড়ে ১৭৯৭ রান করেছেন!
গুরু এবং শিষ্যের মধ্যকার ওয়ানডে এবং টি২০ ম্যাচের পরিসংখ্যান দিয়ে কায়েস ভাইকে আর সম্মানিত করতে চাই না।
লেখাটি ক্রিকসেল গ্রুপে লিখেছেন সর্দার পিকে
আরআর