আগস্ট ১৪, ২০২২, ০৩:২৪ পিএম
আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ভয়াবহ সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভারত ভাগ হয়েছিল৷ সেই সহিংসতার তীব্রতা ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেটেও বিদ্যমান৷
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ তৈরি হয়েছিল হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷
বিশ্বের যে-কোনো খেলার চেয়ে ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ সবচেয়ে বেশি দেখা হয়৷ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যারা জেতে তারা মনে করে জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্ব করছে ৷
দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা এতটাই বেশি যে দেশভাগের তারিখটাও একদিনে পালন করা হয় না৷ অর্থাৎ দুই দেশে স্বাধীনতা দিবস দুটো ভিন্ন তারিখে৷ পাকিস্তান পালন করে ১৪ই আগস্ট আর ভারত ১৫ই আগস্ট ৷
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার ওয়াসিম আকরাম সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে লাখো মানুষের আবেগ জড়িয়ে থাকে৷ আপনি ভালো খেললে নায়ক আর তারপরও দল হেরে গেলে আপনি খলনায়কে পরিণত হবেন৷``
তবে কেবল ক্রিকেট দ্বৈরথ নয়, সামরিক উত্তেজনাও রয়েছে দু`দেশের মধ্যে৷ দেশভাগের পর এ পর্যন্ত চারটি যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে তারা ৷
১৯৮৭ সালে যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে, দুই দেশের সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থায়, সে সময় কোনো পূর্বনির্ধারিত সূচি ছাড়াই পাকিস্তানের সামরিক শাসক মুহাম্মদ জিয়াউল হক ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে পৌঁছে যান দিল্লিতে ৷ এর ফলে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সেই উত্তেজনা নিরসন হয়৷
তবে ক্রিকেট নিয়ে এখনো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে স্বাভাবিক হয়নি৷ ২০০৭ সালের পর এখন পর্যন্ত একটাও টেস্ট ম্যাচ হয়নি তাদের মধ্যে৷ বিদেশের মাটিতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় হয়ত মুখোমুখি হয়েছে দুই দল৷ কিন্তু কেবল দুই দেশের মধ্যে হয়নি কোনো সিরিজ ৷
এ মাসের শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপে খেলবে দুই দেশ৷ সেসময়ের অপেক্ষায় আছেন বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তরা৷ এই খেলা প্রচারের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি চ্যানেলগুলো ৷
২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানম্যাচ দেখেছিল ২৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ৷ গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দু`দেশের দ্বৈরথ দেখেছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৷
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্কাই স্পোর্টসের তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কোনো বিকল্প নেই৷ কারণ এই দুই দেশের খেলায় যে উত্তেজনা, চাপ এবং আনন্দ তা অন্যরকম ৷``
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ফয়সাল হাসনাইন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলাকে ‘‘সব ম্যাচের সেরা ম্যাচ বলেছেন৷`` তিনি জানান, ভক্তরা এই দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত ম্যাচ হোক সেটাই চায়৷ কিন্তু দুদেশের মধ্যে বরফ না গললে সেটা সম্ভব না৷ আমরা কেবল অপেক্ষা করতে পারি এবং আশা করতে পারি এমনটা যেন হয় ৷``
১৮ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালে উপমহাদেশে প্রথম ক্রিকেটের সূচনা হয়৷ সেসময় কেবল ব্রিটিশদের এটি খেলার অধিকার ছিল৷ কিন্তু স্থানীয়দের নিয়ে যখন নেট প্র্যাকটিস করা হত, সেখান থেকে এই খেলা শেখেন তারা ৷
১৯৩২ সালে ভারত টেস্ট স্ট্যাটাস পায়৷ কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জাতীয় দলের তিনজন মুসলিম খেলোয়াড়সহ আরো অনেক ক্রিকেটার পাকিস্তান চলে যান ৷
১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট ম্যাচ ছিল ভারতের বিরুদ্ধে৷ সেখানে পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেয়া আব্দুল হাফিজ কার্দার দেশভাগের আগে ছিলেন ভারতের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ৷
এরপর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৫৯টি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে৷ ১২টিতে পাকিস্তান জিতেছে, ভারত জিতেছে ৯টিতে৷ বাকিগুলো ড্র হয়েছে৷ ওয়ানডেতেও পাকিস্তান এগিয়ে৷ তবে টি-টোয়েন্টিতে ৯টি ম্যাচের মধ্যে ভারত জিতেছে ৭টিতে৷
প্রমিলা ক্রিকেটে ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১১টি ম্যাচেই ভারতের কাছে হেরেছে পাকিস্তানের মেয়েরা৷ আর টি-টোয়েন্টিতে ১২টির মধ্যে ১০টিতে জিতেছে ভারতের মেয়েরা৷
দুইদেশের একদিনের ম্যাচগুলো যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ তা এক ধারাভাষ্যকারের একটি কথাতেই বোঝা যায় ‘ওয়ার মাইনাস শ্যুটিং`৷ অর্থাৎ ‘গুলিবিহীন যুদ্ধ` মানে যে যুদ্ধে কেবল গোলাগুলি হয়নি, বাকি সবধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
১৯৯১ সালে আকিব জাভেদের হ্যাট্রিকসহ সাত উইকেট শিকার পাকিস্তানকে শারজাহতে উইলস ট্রফি জিততে সাহায্য করেছিল৷ ওই ম্যাচকে ঘিরে ভারতীয় ভক্তদের ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে৷ যার জের টানতে হয়েছিল মাসের পার মাস৷
তবে পাকিস্তানের ভক্তরাও কম যান না৷ একবার চোটের কারণে ওয়াসিম আকরামকে একটি ম্যাচ থেকে উঠিয়ে নেয়া হলে তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ভক্তরা৷
ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মাঞ্জরেকর এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাকে ভীষণ মিস করেন৷ তিনি জানান, ‘‘পাকিস্তান তার সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ৷ এছাড়া তারা ভালো খেলোয়াড়, তাই তাদের সাথে খেলেও আনন্দ ৷
আমারসংবাদ/টিএইচ