ক্রীড়া ডেস্ক
ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ০৮:৩৯ পিএম
ক্রীড়া ডেস্ক
ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ০৮:৩৯ পিএম
আর মাত্র একদিন, এরপরই ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে এ মহারণে কে জিতবে, কারা সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে- এ নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই ফুটবল সমর্থকদের। ইতোমধ্যে এ ফাইনাল নিয়ে অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বাদ যায়নি কুকুর, বিড়াল, কচ্ছপ, ঈগল, মাছ এবং আরও অনেক প্রাণি। ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো শেয়ার করেছেন টিকটক ব্যবহারকারীরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরে শিরোপা জিতবে আর্জেন্টিনা।
তবে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে তো আর ফলাফল নির্ধারণ করা যায় না। মাঠে যে দল ভালো খেলবে তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন। কাতার লুসাইলে যে দু’দল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে উভয় দলই দুইবার করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এবার তাদের প্রতিযোগিতা জার্সিতে থ্রি স্টার লাগানোর। মরুর দেশের সে ফাইনালে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি ইতোমধ্যে ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে। অতীত রেকর্ড ভেঙ্গে লেখা হতে যাচ্ছে নতুন সব কীর্তি। আসুন দেখে নেব সেই কীর্তিগুলো-
ফাইনালে মেসি ম্যাজিকে ৩৬ বছর পর শিরোপা ঘরে তুলতে চায় আর্জেন্টিনা। দলটির সমর্থকরাও মেসিকে ঘিরে সে স্বপ্ন দেখছে।
আর্জেন্টিনা যদি মেসি ম্যাজিকে শিরোপা জয় করে তাহলে যেসব রেকর্ড হবে তা হলো-
* ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাবে আলবিসেলেস্তেরা। এর আগে দেশটি শেষ বার ট্রফি জিতেছিল প্রয়াত কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার হাত ধরে ১৯৮৬ সালে।
* ফুটবল ক্যারিয়ারের ১৭ বছরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন পূরণ হবে ৩৫ বছর বয়সী বিশ্বসেরা ফুটবলার মেসির। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার অপর দুই অধিনায়ক ড্যানিয়েল প্যাসারোলা এবং দিয়াগো ম্যারাডোনার পর তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়বেন এলএমটেন।
* ফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামলে বিশ্বমঞ্চে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়বেন মেসি। বর্তমানে জার্মানির কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউজ ও আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন। উভয়ের বর্তমান ম্যাচ সংখ্যা ২৫। ফাইনালে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মেসি ম্যাথিউজকে ছাড়িয়ে ২৬তম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলবেন।
* ফাইনালের মঞ্চে একটি গোলে অ্যাসিস্ট করাতে পারলেই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে ও প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার রেকর্ড ভাঙবেন ক্ষুদে জাদুকর। দুই কিংবদন্তির রেকর্ড ভেঙ্গে একমাত্র ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টে রেকর্ডধারী হবেন এলএমটেন।
* চলতি আসরে আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে ৫টি এবং আর্জেন্টিনার হয়ে জুলিয়ান আলবারেজ, ফ্রান্সের হয়ে অলিভিয়ার জিরুদ ৪টি করে গোল করে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে রয়েছেন। মেসি যদি বাকি তিনজনের চেয়ে একটি গোল বেশি করতে পারেন তাহলে গোল্ডেন বুটের জন্য সবচেয়ে বেশি দাবিদার হবেন তিনি। একই সঙ্গে সেরা ফুটবলার হওয়ার জন্য সোনার বলও পেতে পারেন এলএমটেন। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপেও যদি এই ট্রফি জয় করেন তাহলে বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসাবে এই ট্রফি দুইবার জিতবেন তিনি।
* কাতার বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে ৬ ম্যাচ খেলে চারবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন লিওনেল মেসি। ফাইনালেও যদি মেসি এ পুরস্কার পান তাহলে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়ার নজির গড়বেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
* আর্জেন্টিনা শিরোপা ঘরে তুললে চতুর্থ দল হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়বে আলবিসেলেস্তেরা। আর্জেন্টিনা ছাড়াও অবশ্য এই রেকর্ডটি গড়েছে আরও তিন দল। তারা হলো ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালি। যেখানে ব্রাজিল পাঁচবার আর জার্মানি ও ইতালির শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে চারবার করে।
এমবাপ্পে জাদুতে মেসিদের কাঁদিয়ে ফ্রান্স যদি আবারও শিরোপা জিতে তা হলে যেসব রেকর্ড হবে-
* ৬০ বছর পর টানা দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়বে ফ্রান্স। এর আগে এই সাফল্যতা আছে কেবল দু্টি দলের। প্রথম দলটি হলো ইতালি। তারা ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ বিশ্বকাপ ঘরে তুলে। আরেকটি দল হলো ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। তারা ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পরপর দুই বিশ্বকাপে শিরোপা ঘরে তোলে।
* লুসাইলে শিরোপা ফ্রান্সের হাতে উঠলে দ্বিতীয় কোচ হিসেবে পরপর দুই বিশ্বকাপে জেতার কৃতিত্ব অর্জন করবেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম। এখন পর্যন্ত ইতালির সাবেক কোচ ভিক্টোরিয়ো পোজোই একমাত্র এই রেকর্ড গড়েছেন। তিনি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে আজ্জুরিদের টানা দুইবার বিশ্বকাপ জেতান।
* দিদিয়ের দেশম বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হবেন যিনি ফুটবলার হিসেবে একবার ও কোচ হিসেবে দুইবার ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করবেন। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপটি আসে দিদিয়ের দেশমের হাত ধরে। এর মাঝে ২০ বছর কেটে গেলেও শিরোপার দেখা পায়নি লা ব্লুসরা। অবশেষে কোচ হিসেবে ২০১৮ সালে সেই শিরোপা খরা কাটান দেশম। তাই এবার শিরোপা জিতলে তিনি ফ্রান্সের তিনটি বিশ্বকাপের কারিগরই হবেন তিনি।
* আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফ্রান্স বিশ্বকাপে জিতলে টানা পাঁচবার শিরোপা অর্জনের রেকর্ড গড়বে ইউরোপ। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারটি শিরোপা ইউরোপের কোনও না কোনও দেশ নিয়েছে। ২০০৬ সালে ইতালি, ২০১০ সালে স্পেন, ২০১৪ সালে জার্মানি, ২০১৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে।
* ফাইনাল ম্যাচে এমবাপ্পে গোল করলে অনন্য রেকর্ড গড়বেন এমবাপ্পে। ২৪ বছরের আগে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড আছে কেবল তিনজনের। তারা হলেন, ব্রাজিলিয়ান কিংদন্তি পেলে, আর্জেন্টিনার মারিও কেম্পেস এবং কলম্বিয়ার হামেস রড্রিগেজ।
* ফ্রান্স শিরোপা ঘরে তুললে চতুর্থ দল হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়বে আলবিসেলেস্তেরা। আর্জেন্টিনা ছাড়াও অবশ্য এই রেকর্ডটি গড়েছে আরও তিন দল। তারা হলো ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালি। যেখানে ব্রাজিল পাঁচবার আর জার্মানি ও ইতালির শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে চারবার করে।
* ফাইনালে এমবাপ্পে বা অলিভিয়ে জিরুদ মেসির থেকে বেশি গোল পেলে, তাদের মধ্যে কেউ একজন হয়ে যাবেন সোনার বুটের অন্যতম দাবিদার।
তবে এই রেকর্ড গুলো ঠিক কতটা কার্যকর হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য। কার হাতে মরুর দেশে বিশ্বকাপে সোনার ট্রফি উঠবে, সেই দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা ফুটবল বিশ্ব।
এসএম