আদালত প্রতিবেদক
জুলাই ৯, ২০২৩, ১১:৫২ এএম
আদালত প্রতিবেদক
জুলাই ৯, ২০২৩, ১১:৫২ এএম
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ ফুটবল ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে ফিফার টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের আদেশে স্থিতাবস্থা জারির আদেশও বহাল রেখেছেন আদালত।
এছাড়া এ বিষয়ে জারি করা রুল তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। রোববার (৯ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী। রিটের পক্ষে আইনজীবী মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানি করেন।
এর আগে বাফুফে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার আদেশ স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত। বাফুফে সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থপাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
গত ২৫ জুন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ ফুটবল ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখেন চেম্বার আদালত। তবে ফিফার টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের আদেশে স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত।
একইসঙ্গে এ আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৯ জুলাই দিন ঠিক করেন আদালত। বাফুফের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৫ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ওইদিন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম বলেন, এর ফলে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলবে। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার দেওয়া অর্থের বিষয়ে কোনো তদন্ত চলবে না।
আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ সংস্থার অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ বহাল রাখেন চেম্বার জজ আদালত। শুধু (পার্টিকুলারলি) ফিফার দেওয়া অর্থের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের আদেশে স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করেন আদালত।
এর আগে বাফুফেতে ফিফা ও সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থপাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানের আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে গত ২২ জুন আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।
বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চেয়ে গত মে মাসে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৫ মে হাইকোর্ট রুল জারি করাসহ আদেশ দেন।
রুলে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ফিফা ও সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থপাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে যুব ও ক্রীড়া সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
চারমাসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে। ১৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট লিটন আহমেদ, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার খুররম শাহ মুরাদ ও অ্যাডভোকেট পিয়া জান্নাতুল। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। বাফুফে কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন ও ব্যারিস্টার মারগুব কবির।
হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ২২ জুন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী আবেদনটি (লিভ টু আপিল) করেন।
আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী সাঈদ আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশের অনুসন্ধান সংক্রান্ত অংশটুকু স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের কার্যতালিকায় লিভ টু আপিল আসলে রোববারই শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী লিটন আহমেদ বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বাফুফের সভাপতি ও সিনিয়র সহ-সভাপতি করা লিভ টু আপিলের কপি তারা পেয়েছেন।
এর আগে বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চেয়ে ৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। এতে ফল না পেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। সায়েদুল হক সুমন জানান, ফিফা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা ফৌজদারি অ্যাক্টিভিটিজ। এজন্য অনুসন্ধান চেয়ে রিট করেছি।
এর আগে আর্থিক অনিয়ম ও কাগজ জালিয়াতির দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা দুই বছরের জন্য সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে। এছাড়া তাকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ফিফার দেওয়া অর্থ বাফুফের খরচ দেখাতে তিনি ভুল ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন। ফিফা শুনানি ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই এ শাস্তি দিয়েছে বলে তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সোহাগের বিরুদ্ধে সাধারণ আর্টিকেল ১৫ (দায়িত্বে অবহেলা), ১৫ (সততা) ও ২৪ (মিথ্যা তথ্য দেওয়া) ভঙ্গের অভিযোগ দেখিয়েছেন তারা। এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে আবু নাঈম সোহাগকেও। অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বাফুফে ও এএফসিতে। এরপর ১৭ এপ্রিল ইমরান হোসেন তুষারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে সোহাগকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে বাফুফে।
এইচআর