ক্রীড়া ডেস্ক
এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
ক্রীড়া ডেস্ক
এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বেশ কিছু কাজে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, বিপিএল আয়োজনে অপেশাদারিত্ব, টিকিট বিক্রিতে গড়মিল, জাতীয় দলের বাজে পারফরম্যান্স- সবমিলিয়ে বেশ চাপেই আছেন ফারুক। এমন সমালোচনার মাঝেই তার বিরুদ্ধে বিসিবির আর্থিক লেনদেনে অস্পষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি দেশের প্রথমসারির একটি পত্রিকার খবরে দাবি করা হয়, বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ১২০ কোটি টাকা সরিয়েছেন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ। প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ আনা হয় যে, বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা না করেই এই টাকা সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। এমন সংবাদ জনসম্মুখে আসার পর থেকেই ক্রিকেট পাড়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরে খোদ বিসিবি সভাপতি নিজেই জানিয়েছেন, ১২০ কোটি নয়, ফিক্সড ডিপোজিট থেকে মোট আড়াইশ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ১৪টি ব্যাংকে মোট আড়াইশ কোটি টাকার এফডিআর স্থানান্তরের ব্যাখ্যা দিয়েছে বিসিবি। বিবৃতিতে বিসিবি বলেছে, `জাতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশে বোর্ডের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নজরে এসেছে। বিসিবির মতে এসব প্রতিবেদন ভুল তথ্যভিত্তিক এবং বোর্ড ও এর সভাপতি জনাব ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।`
বিবৃতিতে এফডিআরের টাকা স্থানান্তরের ব্যাখ্যাও বিসিবি বলেছে, `গত ২০২৪ সালের আগস্টে বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর জনাব ফারুক আহমেদ বিগত বছরগুলোর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণআন্দোলনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বোর্ডের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিসিবি তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত `গ্রীন` ও `ইয়েলো` জোনভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথেই বোর্ড আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিসিবি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং এর মধ্যে ২৩৮ কোটি টাকা গ্রীন ও ইয়েলো জোনভুক্ত ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করে। অবশিষ্ট ১২ কোটি টাকা বিসিবির বিবিধ পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।`
মূলত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ আর অধিক মুনাফার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কেবল যে ইন্টারেস্ট রেট বেড়েছে এমন নয়, নতুন ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে স্পন্সরশিপ। এছাড়াও আছে ৩০ কোটি টাকার অবকাঠামোগত ইনভেস্টমেন্ট পাবার কমিটমেন্ট। বোর্ডের বাকি পরিচালকদের অনুমতি ছাড়াই যে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এই গুঞ্জনও সত্যি নয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয় পুরো প্রক্রিয়া সভাপতি ফারুক আহমেদের একক সিদ্ধান্তে নেয় হয়েছে। মূলত বিসিবির দুজন পরিচালক পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, `প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বোর্ড সভাপতি কোন একক সিদ্ধান্তবলে বোর্ড এর পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাংক পরিবর্তনের অথবা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না। পার্টনার ব্যাংকগুলোর সাথে বিসিবির আর্থিক বিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষরপ্রদানকারী হিসাবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন বোর্ডের ফিন্যান্স কমিটি চেয়ারম্যান জনাব ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান জনাব মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরদাতা নন।`
`বিসিবি অবগত যে, কিছু সুবিধাভোগী মহল এবং ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, যারা ক্রিকেট প্রশাসনের ভিতরেও সক্রিয়, বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিবির আর্থিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করার এটিও অন্যতম কারণ। সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তার অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকের হাতে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিসিবির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ প্রতিযোগিতামূলক মুনাফা প্রাপ্তির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বিসিবির স্থায়ী আমানত থেকে ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।`
`গত ছয় মাসে বিসিবি তার বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার স্পনসরশিপ পেয়েছে। এছাড়াও, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিসিবির অংশীদার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা এই আর্থিক সম্পর্কগুলোর দৃঢ়তা ও গভীরতা নির্দেশ করে।`
`বিসিবি সর্বোচ্চ মানের আর্থিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রকৃত ও তথ্যভিত্তিক উৎস থেকে তদন্ত ও পর্যালোচনাকে স্বাগত জানায়। পাশাপাশি, বোর্ড গণমাধ্যমকে ভিত্তিহীন অথবা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও এর সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, এমন কোনো ভুল তথ্যসম্মলিত প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে।`
আরএস