Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

পদ্মা সেতুতে কঠোর নজরদারি

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ২৮, ২০২২, ০১:৪১ এএম


পদ্মা সেতুতে কঠোর নজরদারি

উদ্বোধনের পর দুই দিনে পদ্মা সেতুতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক জনতার চাপে একাধিক অনিয়ম, দুর্ঘটনা, চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে তরুণরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে আসা যুবকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লগ করার উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি করে প্রথম দুদিন। 

ওই দুদিনে সদ্য চালু হওয়া সেতুতে ঘটেছে দুর্ঘটনা, হয়েছে মৃত্যুও। গতকালও ট্রাক উল্টে আহতের ঘটনা ঘটেছে। যে সেতু জাতির সক্ষমতার প্রতীক, যে সেতু নিয়ে দেশের মানুষ কৌতূহলী হয়ে উঠছে সেই সেতুতেই ঘটেছে চুরির ঘটনাও। 

এছাড়া জরিমানার ঘটনাও ঘটছে। যদিও জরিমানাতেও থামছে না অতি উৎসাহীদের চাপাচাপি। বাইকারদের সড়ক আটকে দিতেও দেখা গেছে সেতু এলাকায়। এতসব অনিয়মে জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিন ব্রিজের নাট খোলার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয় যুবক বায়েজীদকে। 

গতকাল আদালতে তোলার পর বায়েজীদকে সাত দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। এছাড়া সেতুতে প্রস্রাব করা যুবক, নাট-বোল্ট খোলা অন্য যুবক ও টিকটকারদের খুঁজছে পুলিশ। এরই মধ্যে সেতুর ওপর দুর্ঘটনায় নিহত দুই যুবককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেনাবাহিনীকে চিঠি দেয়ার পর নিরাপত্তা বিষয়ে টহল জোরদার করেছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি নির্দেশনা অমান্য করে সেতুতে অনিয়মে জড়িতদের জরিমানা করছে ম্যাজিস্ট্রেট। রয়েছে পুলিশের সদস্যরাও। 

সরেজমিন দেখা গেছে, নির্ধারিত আইন মেনে সেতুতে চলাচল নিশ্চিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যানবাহন থামিয়ে সেতুর ওপর কেউ যেন নামতে না পারেন সেজন্য টহল দিচ্ছে সেনা সদস্যরাও। মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ এবং কাউকে হেঁটে উঠতে দেয়া হচ্ছে না সেতুতে। 

গতকাল সেতু এলাকার চিত্র ছিল আগের দিনের (রোববার) চেয়ে ভিন্ন। সেতু উন্মুক্তের প্রথম দিন লোকারণ্য ছিল সেতুর ওপর। উচ্ছ্বসিত মানুষ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলে উদ্বোধনের দিনকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেতু দিয়ে বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। 

এছাড়া হেঁটে সেতু পারাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। পারাপারের সময় পদ্মা সেতুতে না নামার জন্য টোলপ্লাজা এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিন সেতুর ওপর কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে দিতে দেখা যায়। পুরো সেতু এলাকাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। 

এদিকে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করার পর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা টোলপ্লাজায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। গতকাল সকাল থেকে জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে কোনো যানবাহনের জট চোখে পড়েনি। ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়েই বাধাহীনভাবে সেতু পার হতে পারছে।

এদিকে সেতুতে অবৈধভাবে পার্কিং করার অপরাধে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তে এক প্রাইভেটকার চালককে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল কবীর প্রাইভেটকার চালক ফখরুল আলমকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। 

আশরাফুল কবির জানান, কুমিল্লা থেকে প্রাইভেটকারে চালকসহ ছয় যুবক পদ্মা সেতু দেখতে আসেন। মাওয়া টোলপ্লাজায় টোল দিয়ে সেতুতে ওঠেন। মাঝ সেতুতে প্রাইভেটকার থামিয়ে সেলফি তুলছিলেন। তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতুতে গাড়ি পার্কিং অবৈধ, তাই চালককে জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে সেতুতে গাড়ি পার্কিং না করার জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছে। 

এছাড়া স্বপ্নের সেতুতে আনন্দের আবহে শোক নামিয়েছে বাইক দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু এবং গতকালের ট্রাক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় আবার উঠে আসছে সেতুর মাঝখানে পুলিশি সীমানা নিয়ে নতুন দুই থানার ঠেলাঠেলি।

রোববার ভোরে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনভর পুরো এলাকায় ছিল মোটরসাইকেলের দাপট। শত শত মোটরসাইকেল সেতুর দুই প্রান্তের টোলপ্লাজায় ভিড় করেছিল পার হওয়ার অপেক্ষায়। সেতুর ওপরও দল বেঁধে, আনন্দ-উল্লাস আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ছিলেন মোটর বাইকের আরোহীরা। 

এর মধ্যে সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার খবর আসে ফেসবুকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণ সেতুর মাঝখানে বিভাজকের পাশে পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। ভিডিওতেই আশপাশে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে দেখা গেল। কিন্তু ওই এলাকা কোন থানার এখতিয়ারে পড়েছে, তা নিয়ে দুই থানা পুলিশের ঠেলাঠেলির তথ্য উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে গতকাল ভোর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেতু বিভাগ।

এদিকে গতকাল বিকেলে টোলপ্লাজায় প্রেস ব্রিফিংয়ে পদ্মা সেতু ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট ও সেফটি টিমের সমন্বয়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রবিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি (বিবিএ) ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। সবাইকে জানাতে চাই, পদ্মা সেতু আমাদের দেশের সম্পদ। এই সেতুর ওপর যানবাহন থামানো ও যানবাহন থেকে নামা বন্ধ করতে হবে।

Link copied!