Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুলাই ৫, ২০২২, ০১:২০ এএম


পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি

ঈদুল আজহায় পশুবাহি গাড়িতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। প্রতি বছরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও চাঁদাবাজি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে সড়ক ও নদীপথে তৎপর হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ চক্র। 

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসার পথে পশু বহণকারী গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে সেসব চক্র। কোথাও কোথাও রীতিমতো পশুবাহি ট্রাকগুলোতে ডাকাতির প্রস্তুতিও চলছে। এমনি একটি চক্রকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করেছে র্যাব। 

এছাড়াও পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে কোরবানির পশুর হাট, কাঁচাবাজার, ফুটপাত, দোকানপাট, ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করেও চলছে চাঁদাবাজি। বছরের অন্যান্য সময়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করলেও ঈদকেন্দ্রিক আদায় করা হচ্ছে বাড়তি চাঁদা। 

পশু বহনকারী পরিবহনে চাঁদাবাজির প্রভাবে এবার পশুর দামও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে চাঁদাবাজি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সে চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসা পশুবাহি ট্রাকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে পোস্তগোলা এলাকায়। এর আগে অন্য কোথাও চাঁদা দিতে হয়নি দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।

তারা বলছেন, অতীতে নদী পার হওয়ার সময় মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গরু পর্যন্ত নিয়ে যেত। 

এবার সেরকমটা না হলেও পোস্তগোলায় গাড়ি প্রতি একশ টাকা করে দিতে হয়েছে। যে কারণে অভিযোগ না করে নীরবেই চাঁদা দিয়ে ঢুকছেন ঢাকায়।

এদিকে র্যাবের অভিযানে রোববার রাতে গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে ঈদকেন্দ্রিক ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ ও ডাকাত চক্র সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তবে এসব চক্রের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

ঈদুল আজহা ঘিরে পশু বহনকারী ট্রাকে কেউ চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন আইজিপি। কেউ যাতে এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হতে না পারে সে জন্য পুলিশকে আগাম সব ধরনের ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

মাঠপর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোববার এক ভিডিও কনফারেন্স এ নির্দেশনা দেন তিনি। একই সাথে পুলিশের কারও বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। 

এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকাসহ দেশজুড়ে ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতেও বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। 

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, আসন্ন ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বাসাবাড়ি ও সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি, নৌ-ডাকাতি এবং ছিনতাই-রাহাজানির বিষয়েও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। গরুবাহী ট্রাকে যেন কেউ চাঁদাবাজি করার সাহস না পায় সে জন্য পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলেছেন। 

এমনকি পুলিশের কোনো সদস্য গরুবাহী ট্রাক থামিয়ে অযথা যেন যানজট সৃষ্টি না করে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। পাশপাশি পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আইজিপি। 

আইজিপির দেয়া নির্দেশনাগুলো ইতোমধ্যে ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিভিন্ন জেলার এসপিরাও সরাসরি নির্দেশনাগুলো শুনেছেন। তারাও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। 

এছাড়া কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা, রাস্তায় যেন গরু নিয়ে কেউ টানাটানি করতে না পারে, পাইকাররা যেন নিজ পছন্দের হাটে গরু নিয়ে যেতে পারেন— সে বিষয়েও আইজিপির নির্দেশে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। 

এরই মধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশুর হাট বসার আগেও দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা রাজধানীর গুলিস্তান, কাপ্তানবাজার, টিকাটুলিসহ বিভিন্ন এলাকায় রিসিট দিয়ে গাড়িভেদে ২০-৩০ থেকে ৬০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হতো। লাঠি হাতে সেই চাঁদা এখনো আদায় করা হচ্ছে। 

অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি এখন পশুবাহি ট্রাক থেকেও আদায় করা হচ্ছে। তাদের দেয়া রিসিটে লেখা রয়েছে— ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এভাবে গুলিস্তান, জয়কালীমন্দির, কাপ্তানবাজার, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কদমতলী, পোস্তগোলা, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, কোনাপাড়া, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, মাতুয়াইল মেডিকেল, মেরাদিয়া, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী থেকেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। 

এসব বিষয়ে ডিএসসিসির মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) শহিদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সিটি টোল বলতে কিছুই নেই। আর সিটি কর্পোরেশনের রিসিট দিয়ে চাঁদা আদায়ের বিষয়টিও সিটি কর্পোরেশনের জানা নেই বলেও জানান তিনি। 

যেহেতু সিটি কর্পোরেশন থেকে এসব টোল আদায়ের অনুমোদন নেই, সেহেতু এসব টোল আদায় অবৈধ এবং অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) হাফিজ আল হাসান আমার সংবাদকে বলেন, এসব টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক (এএসপি) আ ন ম ইমরান খান আমার সংবাদকে বলেন, কোরবানির সময়ে এসব অভিযোগ বেশি পাওয়া যায় এবং চাঁদাবাজ ও ডাকাতদের উৎপাতও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আসন্ন ঈদকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও ডাকাতির ঘটনা রোধে আমাদের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সড়ক-মহাসড়কেও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও ডাকাতির ঘটনা এড়াতে র্যাবের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
 

Link copied!