Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

স্বস্তির ঈদযাত্রায় ভোগান্তি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুলাই ৭, ২০২২, ০১:৫২ এএম


স্বস্তির ঈদযাত্রায় ভোগান্তি

ঈদযাত্রা শুরুর আগে চালকদের অনেকেই বলছিলেন সড়ক ভালো হলেই ঈদযাত্রা স্বস্তির হয় না। খানাখন্দ না থাকলেও সড়কের পাশের বাজারগুলোর কারণে তীব্র যানজট হয়। বাস্তবে হয়েছেও তাই। গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেখানেই বাজার রয়েছে সেখানেই কমবেশি যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

ঢাকা থেকে বের হওয়ার শুরুতেই যাত্রাবাড়ীর কাজলা-শনির আখড়া পশুর হাট পেরুতেই ঘরমুখো মানুষের যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে। মহাসড়ক ঘেঁষে পশুর হাট বসায় এই এলাকা অতিক্রম করতেই সময় লেগেছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তাও আবার সকাল ৬টার দিকে। ঢাকা থেকে বের হতেই সৃষ্ট এই যানজটের বিপরীত পাশেও ছিল দীর্ঘ যানজট। 

নারায়ণগঞ্জ, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ এলাকার অফিসগামী মানুষদেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ হেঁটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ঢালে এসে দাঁড়ান। পরে সেখান থেকে বাসে উঠে ঢাকায় প্রবেশে চেষ্টা করেন অনেকেই। তাতেও নিস্তার মেলেনি যানজটের কবল থেকে। 

ফ্লাইওভারেও ছিল দীর্ঘ যানজট। কাজলা-শনির আখড়ার হাট পেরিয়ে ফের কাঁচপুর-মদনপুর-সোনারগাঁওয়ের মোগড়াপাড়া পর্যন্তও দীর্ঘ ১০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। 

এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঘরমুখী মানুষদের। তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেক কর্মজীবী মানুষকে হেঁটে নিকটবর্তী গন্তব্যে যেতেও দেখা গেছে। 

অথচ সম্প্রতি ঈদে মহাসড়কে পশুর হাট বসানো যাবে না বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সে সিদ্ধান্তেরও কোনো বাস্তবায়ন নেই মহাসড়কে। 

যাত্রীরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগ এড়াতে আজই মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছেন। এ জন্য দুপুর থেকেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে। মানিকনগর-সায়েদবাদ থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত পূর্বের ভাড়া ৩৭০ টাকা হলেও গতকাল ৬৫০ টাকা রাখছে বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। 

যাত্রীরা বলেন, দুপুর ১২টায় কাঁচপুর থেকে গাড়িতে উঠেছি। সেখান থেকে মদনপুর আসতে যেখানে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে সেখানে গতকাল আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। মদনপুর সিগন্যালে এসেও বসে থাকতে হয়েছে ঘণ্টা দুয়েকের মতো। 

এক ব্যবসায়ী বলেন, জরুরি কাঝে মোগরাপাড়ার উদ্দেশে বের হয়েছিলাম। শিমরাইল মোড় থেকে মোগরাপাড়া আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। যে সময়ে এত দিন মোঘরাপাড়া গিয়ে আবারও শিমরাইল মোড়ে চলে আসা যেত। 

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবীর হোসেন বলেন, যাত্রী চাপ বেশি থাকায় এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। 

এদিকে তীব্র যানজটের কারণে গতকাল ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানাতে হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকেও (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এ অনুরোধ করেন। 

ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া রোডে বৃষ্টির কারণে গাড়ির ধীরগতি এবং প্রচণ্ড যানজট হচ্ছে। এ জন্য ওই রাস্তা ব্যবহারকারীদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হলো।

শুধু যানজটের ভোগান্তিই নয়, ঢাকা ও ঢাকার অদূরে সাভারের বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারেও চড়া মূল্যে টিকিট কেনার ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষদের। 

তবুও টিকিট মিলছে না বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। যাত্রীদের অনেকেই বলেছেন, ৬০০ টাকা মূল্যের প্রতি টিকিটের দাম ৯০০ টাকা করেও আদায় করা হয়েছে। 

কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছেন, কাউন্টারে গেলে টিকিট নেই বলেও বলা হয়। টিকিট সংকট দেখিয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন ঘরমুখো মানুষদের কাছ থেকে। 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাউন্টারগুলোতে যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পারে এ জন্য আজ থেকেই সাদা পোশাকে হাইওয়ে পুলিশ নজরদারির শুরু করেছে। 

এছাড়া অতিরিক্ত গাড়ির চাপ হলেও যান চলাচল অষ।বাভাবিক, শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও কোরবানির পশুবাহী যান নিবির্ঘ্নে চলাচল ও পশু ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা নিরাপদে লেনদেনের স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

যানজট কিংবা টিকিট নিয়ে ভোগান্তির মাত্রা আজ থেকে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আজ থেকে গার্মেন্ট কারখানাগুলো বিভিন্ন সময়-সূচি অনুযায়ী শ্রমিকদের ছুটি দেয়ার কথা থাকায় সকাল থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে অনেকেই অতিরিক্ত চাপ এড়াতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। অনإদিকে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত যানবাহনের চাপ বাড়তে দেখা গেছে গতকাল। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাতেও গতকাল পর্যন্ত যানবাহনের সেই চাপ সামাল দিতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। মহাসড়কে এখনো পশুর হাট রয়েছেই বরং হাটের পরিধি কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
 

Link copied!