Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ঈদ আনন্দবঞ্চিত সিলেটবাসী

আবদুর রহিম ও মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত

আবদুর রহিম ও মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত

জুলাই ৮, ২০২২, ০১:৪১ এএম


ঈদ আনন্দবঞ্চিত সিলেটবাসী

গ্রামে থেকে শহরে হাঁটে হাঁটে উৎসব। কোরবানির পশু কিনছে মানুষ। দুদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা দেশে ঈদের আমেজ। দরদাম করছেন, যাচাই-বাছাই শেষে পছন্দ হলে কিনে ফেলছেন পশু। তবে ব্যতিক্রম চিত্র সিলেটের গ্রামাঞ্চলে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এই জনপদের বাসিন্দাদের ঈদের আমেজ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামে এখনো থই থই করছে বন্যার পানি। তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট।

এসব এলাকায় এখনো নৌকায় চড়ে যাতায়াত করছেন বানভাসি মানুষ। পাঁচ লকাধিক মানুষ নিঃস্ব হয়ে ভুলেই গেছেন কবে ঈদ। তাদের আনন্দ ও স্বপ্ন এখন জলে ভাসছে। ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, কৃষকের গোলা ভরা ধান, সবজি, মাছ— সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুদিন পরই কোরবানির ঈদ। অথচ তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। 

হাওরাঞ্চলের ৭০-৮০ শতাংশ ঘরে এখনো পানি। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আবার কেউ কেউ ঘরে পানির মধ্যে দিন যাপন করছেন। কিছু পরিবার উজান এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তা, হাটবাজার এখনো পানির নিচে। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ ও মন্দির তলিয়ে গেছে। মানুষের চলাচলের কোনো জায়গা নেই। জীবনই বাঁচে না, কিসের ঈদ। বন্যায় ঈদের সব আনন্দ ভেসে গেছে।

কথাগুলো সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মাথারগ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়ার (৪৫)। তিনি বলেন, ‘এক হাল গরু ছিল, ১০ কুড়ি ধান ছিল। বাড়ির পাশের এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। বন্যায় সব নিয়ে গেছে। সব হারিয়ে আমি নিঃস্ব। আমার ঈদ নেই।’ উপজেলার পিল্লাকান্দি গ্রামের সফতেরা (৫৫) বিবি বলেন, ‘গরিবের কপালও ইবার ঈদ নাই। আমার ৩০টি আস-মুরগি (হাঁস-মোরগি) আছিল (ছিল)। অগুন (এগুলো) দিয়া আমার পেট চলত। বন্যায় সবটি ভাসিয়া (ভেসে) গেছে গি। এবলা (এখন) কিলান খাইয়া বাঁচতাম অউ চিন্তায় দিন যার (যাচ্ছে)।’ 

সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ (২৮) বলেন, ‘তার ঘরে বুকসমান পানি ছিল। এখন পানি নেমে গেছে। তবে ঘরে কাদামাটি জমে আছে। আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে বসবাস করার মতো পরিবেশ এখন নেই। এ জন্য বউ বাচ্চা নিয়ে তিনি শ্রীমঙ্গলে শ্বশুরবাড়িতে উঠেছেন। সেখানে ঈদ কাটাবেন।’ 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা মোরগি ব্যবসায়ী খালেদ মিয়া বলেন, ‘কোরবানি তো দূরের কথা, এবার ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড়ও দিতে পারব না। খুব কষ্টে দিনপার করছি।’ সচ্ছল ভেবে কেউ তাদের ত্রাণও দেয়নি বলে জানান তিনি। 

লাউয়াই গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘বন্যায় সামর্থ্যবানরাও পশু কিনতে হিমশিম। এ ছাড়া এবার কোরবানি পশুর দাম আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।’ 

তিনি বলেন, ‘তার গ্রামে যারা আগেরবার পাঁচ-সাতটা পশু কোরবানি দিয়েছেন, এবার অনেকেই দুই থেকে একটা কোরবানি দিচ্ছেন।’ 

কোরবানির পশুর হাট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, সামর্থ্যবানরাও হিমশিম পশু কেনায়। বন্যার কারণে পশুর দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় দাম দ্বিগুণ হওয়ায় পছন্দের পশুটি কিনতে পারছেন না অনেকেই। অনেকে বাজার ঘুরে একটি পশুও কিনতে পারছেন না। কাপড়ের দোকানগুলোও ফাঁকা। কোথাও মানুষের ভিড় নেই। অনেক দোকানি সারা দিনে একটি কাপড়ও বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। 

এদিকে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দি আছেন জেলার সবচেয়ে দুরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে। এখনো পানিতে নিমিজ্জিত আছে গ্রামের পর গ্রাম। 

পীর নগর গ্রামের বাসিন্দা সুজেল আহমদ জানান, ‘গ্রামের অনেক বাড়ি এখনো বন্যার পানিতে নিমিজ্জিত। হাঁটুপানি মাড়িয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় মানুষ কীভাবে পশু কোরবানি দেবে।’ 

জামডহর গ্রামের ফজলু মিয়া (৫০) জানান, ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখনো গ্রামের রাস্তা ডুবে আছে। নৌকায় চড়ে বাজারে যাওয়া-আসা করতে হয়। তার গ্রামের অধিকাংশ ঘরে এখনো ডুবে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিন্তায় আছি এবার কীভাবে কোরবানির পশু কিনব। আর কোথায় পশু জবাই করব।’ 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেটে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন আশ্রিত আছেন। তাদের বাড়িঘর থেকে এখনো পানি নামেনি। জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট ৩১৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত চালু আছে।

সূত্র আরও জানায়, জেলায় বন্যায় প্রায় পাঁচ লাখ পরিবারের ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। জেলায় ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন লোক আশ্রয় গ্রহণ করেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩১ হাজার ৯৭টি গবাদিপশু নিয়ে এসেছিলেন বন্যাকবলিতরা। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চার লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৪০ হাজার ৯১টি। 

জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সিলেটে নগদ চার কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৫ লাখ টাকা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে। এর বাইরে দুই হাজার ১১২ টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা ও ২০ হাজার ১২৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। 

চার লাখ ২৯ হাজার কৃষকের কান্না : গোলাভরা ধানে সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মুখে ছিল রাজ্যের হাসি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার টন বেশি চাল উৎপাদন হয়েছিল। সিলেটে সেই উৎসবে মই দিয়েছে তিন দফা বন্যা। এতে সিলেটের কৃষকদের সব স্বপ্ন মিশে গেছে জলে। 

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত তিন দফা বন্যায় সিলেট অঞ্চলের চার লাখ ২৯ হাজার ৪০১ জন প্রান্তিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ১২৪ জন, হবিগঞ্জে এক লাখ আট হাজার ৮৪৩ জন, সুনামগঞ্জে ৭৭ হাজার ৩৩৯ জন এবং ২১ হাজার ৯৫ জন। 

এপ্রিল, মে ও জুন মাসে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বোরো, আউশের বীজতলা, আউশ ফসল, সবজি, বোনা আমন ও চিনাবাদামের ফসল। চার জেলায় এক হাজার ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ফসলে। এখন যা অবশিষ্ট আছে তাতে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের চেয়েও কম।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আউশে ৬৯ হাজার ৫২ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আর্থিক হিসাবে ৫৬১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দুই লাখ ৪২ হাজার ১৯৯ জন। 

এর আগে আউশের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল মালিক জানান, ২৫ হেক্টর জমিতে তিনি আউশ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু, বন্যার পানিতে তার এক হেক্টরও অবশিষ্ট থাকেনি। সব কিছু বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। 

এর আগে, আউশের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার। আব্দুল মালিকের মতো এ উপজেলায় শত শত কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমন মৌসুমের জন্য প্রণোদনা দেয়া হবে।

৮০ শতাংশ মানুষ এখনো পানিবন্দি : বিয়ানীবাজার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও কুড়ার বাজার ইউনিয়নের খশির চাতল পার এলাকার ৮০ শতাংশ বাড়ি এখনো পানির নিচে। গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে এখনো বন্যার পানি না নামায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। কথা হয় একই গ্রামের আয়ফলা বেগমের (৬০) সাথে। 

তিনি বলেন, ‘পয়লা পানি আওয়ার সময় আমার ঘরও কমর পানি আছিল। এখনো আটু পানি আছে। পরিবার লইয়া আশ্রয় কেন্দ্রত আছি। দিনও বাড়ি থাকি রাইত আশ্রয়কেন্দ্র যাই গি। ঘরর অবস্থা নাই পানি এ সবতা নষ্ট করি দিছে। দিনও ঘরও আইলে কান্দন আয় আমার। এখন পানি আছে এর লাগি ঘর খাড়া আছে। পানি হরি গেলে গি ঘর পড়ি যাইব। ইবার খেত করিয়া কিছু ধান পাইছলাম আমরা পানি ডুবিয়া সব নষ্ট ওই গেছে। ১০ জন ওর পরিবারও আমার জামাই একমাত্র রুজগারি। তাইনও বেকামা এখন। রুজওর কাম করতা এখন রুজর কামও নাই। কিতা যে সামনের দিনও আমরার কপালো আছে জানি না বাবা। ইতা চিন্তা করলে চকুর পানি আটকাইতাম পারি না।’ 

একই গ্রামের সইজ্জাদ আলীর (৭৫) বাড়িতে দেখা গেল কোমর পানি। পানিবন্দি সইজ্জাদ আলীর আট সদস্যর পরিবার নিয়ে দিন ভালো কাটছিল।  কিন্তু বন্যার কারণে সব কিছু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ঘরের দুরবস্থা দেখিয়ে বৃদ্ধ সইজ্জাদ আলী বলেন, ‘চিন্তায় কিচ্চু ভালা লাগের না। তিন পুয়া রুজগারি আছলা এখন তারাও বেকামা ওই গেছন। ইবারর পানি আমারে রাস্তাত নামাই দিব। এক টেখাও নাই হাতও এলাকার মানুষে ত্রাণ দেয়ায় খাইয়া বাছিয়া আছি। পানি নামার বাদে ঘর টিক করইতাম না পরিবার লাইয়া খাইয়া বাঁচতাম জানি না। প্রত্যক দিন আইয়া আমার মায়ার বাড়ি খান দেখি। বাড়ির ই অবস্থা দেখিয়া চকুর পানি দরিয়া রাখতাম পারি না। দিনও পাঁচ-ছয় বার বুক পানি মারিয়া আইয়া বাড়ি খান দেখি টিন-টান আছে নি, না পানি এ ভাসাইয়া লইয়া গেছে গি।’ 

কুড়ার বাজার ইউনিয়নের ১০ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মালিক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে আমার ওয়ার্ডের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনো পানিবন্দি। আমার ওয়ার্ডে কিছুটা নিম্নাঞ্চল তাই এখনো বন্যার পানি নামেনি। আমার এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করছি।’  

বেঁচে থাকাই কষ্টকর কিসের ঈদ আবার, সন্তানদের নিয়ে ত্রাণ খুঁজছি : ছাতকের আবদুর রউফ কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৌকায় ওঠার অল্প সময় পর চোখের সামনে দিয়ে বন্যার পানিতে ভেসে যায় বছরের পর বছর কাজ করে জমানো টাকায় বানানো কষ্টের ভিটেমাটি। এক নিমিষেই ফতুর হয়ে গেলাম।’ মাত্র দেড় মাস আগের কথা। বর্গা নিয়ে চাষ করা অল্প কিছু জমির বোরো ধান তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবদুর রউফ। তবে ঘরে তুলতে পারেননি ফসল। 

সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবারের বন্যায় সব হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বলেন, ‘বেঁচে থাকাই এখন কষ্টকর, তাই ঈদের আনন্দ নেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে। যার ঘর নেই, বাড়ি নেই, খাওয়ার উপায় নেই তার আবার ঈদ কিসের!’ তিন মেয়ে ও দুই ছেলে এবং স্ত্রী শরিফা খাতুনকে নিয়েই আবদুর রউফের সংসার। 

তিনি এখন সকাল হলেই ত্রাণের আশায় রাস্তায় বসে থাকেন। গাড়ি দেখলেই ত্রাণের জন্য দৌড়ান। পরিবারের সবার কাপড় চোপড়সহ যা কিছু ছিল সব বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এক কাপড়ে নৌকায় করে এসেছিলেন। মেয়েদের জন্য স্ত্রী শরিফা গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে অল্প কিছু পুরাতন জামাকাপড় এনেছেন যা পর্যাপ্ত নয়। 

আবদুর রউফ জানান, সোনাহর আলীর বাড়িতে কদিন থাকতে পারবেন তা জানেন না। কাজের আশায় প্রতিদিন ঘর থেকে বের হন, কিন্তু চারদিকে এখনো পানি। কোথাও কাজ নেই। বড় মেয়ে সারজেনার বিয়ের কথা চলছিল। এখন পানি হয়তো বা চলে যাবে কিন্তু মেয়ের বিয়ে দেয়ার খরচ পাবেন কোথায়, ঘর বানানোর টাকাই বা দেবেন কে— এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে। 

সিলেটে বন্যায় ৫৭ জনের মৃত্যু : সরকারি হিসাবে, গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলাভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে সুনামগঞ্জ। এ জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিলেট জেলায় ১৮ জন, হবিগঞ্জে পাঁচজন এবং মৌলভীবাজার জেলায় মারা গেছেন ছয়জন। 

বন্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এ জেড এম মাঞ্জুর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। নদীতে বর্জ্য ও প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে।’ 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিত বাঁধও ঘন ঘন বন্যার কারণ। এর ফলে পানির প্রবাহ আটকে দেয়া হচ্ছে। সহজে পানি নামতে পারছে না। সাময়িক লাভের জন্য আমরা যেখানে সেখানে উঁচু রাস্তাঘাট তৈরি করছি। এটিও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার একটি কারণ।’ 

সিলেটের নদীগুলো খনন করা অতি জরুরি জানিয়ে ড. এ জেড এম মাঞ্জুর রশীদ বলেন, ‘নদী শাসন বন্ধ করতে হবে। দখলদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভূমিকা নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে নানামুখী প্রচরণা চালাতে হবে।’ আমরা সিলেটবাসী এমন দুঃসময়ের ঈদ আর দেখতে চাই না। সিলেটের বুকে এমন কষ্টের সময় আর না আসুক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যগ্ম সম্পাদক ও সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, ‘সমপ্রতি এক নাগরিক বন্ধনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। বন্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে, সুরমা নদী খনন, জলধারা রক্ষার পাশাপাশি সিলেটের দীঘিগুলো উদ্ধার করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছভাবে সুরমা নদীর খননকাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি শসস্ত্রবাহিনীকে যেন খননকাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, নদীর পাড় থেকে মাটি খনন করে আবার সেগুলো পাড়েই রাখা হয়। এতে নদীর মাঝখান ভরাটই থাকছে। ফলে লোক দেখানোর জন্য খননকাজ করা হলেও কার্যত কোনো লাভই হচ্ছে না।’ সিলেটের মানুষের এ ঈদ যেন শেষ দুঃসময় হয়। এটি কার্যত সমাধানে আগামী ঈদে আনন্দ ফিরে আসুক।  

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য নতুন করে ৫০০ টন চাল, নগদ অর্থ হিসেবে বিতরণের জন্য এক কোটি টাকা, গৃহমঞ্জুরি বাবদ ৬০ লাখ টাকা এবং দুই হাজার বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নতুন বরাদ্দ জেলা প্রশাসন ২৬১ টন চাল ও নগদ ৭৫ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দিয়েছে। সহকারী কমিশনার (ব্যবসা বাণিজ্য শাখা) আহসানুল আলম জানিয়েছেন, ঈদের দিন বানভাসিদের জন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।’
 

Link copied!