জুলাই ১৩, ২০২২, ০১:০৯ এএম
ঈদের তৃতীয় দিন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। গত কদিন দর্শনার্থীর আগমন স্বাভাবিক থাকলেও গতকাল যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রাজধানীসহ আশেপাশের জেলাগুলোর বিনোদনপ্রেমীরা সকাল থেকে চিড়িয়াখানায় ভিড় করছেন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রবেশপথে মানুষ ভিড় করেন। রাজধানী ও দূরদূরান্ত থেকে কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধু-বান্ধব, কেউবা প্রিয় মানুষকে সঙ্গে করে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছেন। কার আগে কে প্রবেশ করবেন— সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ভেতরে প্রবেশের টিকিটের জন্য লম্বা সারি তৈরি হয়। সকাল ৯টা থেকে দর্শনার্থী প্রবেশ শুরু হলেও টিকিটের সারি আর ভেতরে প্রবেশের সারি যেন শেষ হয় না।
চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, পরিবারের ছোট-বড় শিশুদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিটি প্রাণীর শেডের সামনে উপচেপড়া ভিড়। অনেকে ভিড় উপেক্ষা করে পা উঁচু করে আবার ছোট বাচ্চাদের কাঁধে উঠিয়ে আনন্দ পাওয়া ও দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নরসিংদী থেকে চিড়িয়াখানায় দুই বছরের ছোট শিশু ও ছোট বোনকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন দীপু আর্দ। পেশায় গৃহিণী এই নারী প্রথমবার চিড়িয়াখানায় এসেছেন। বেলা
১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘুরে বাড়ির দিকে রওনা হন।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা ঘুরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছি। এখানে না এলে এত আনন্দ উপভোগ করতে পারতাম না।
তবে গরম আর মানুষের ভিড়ের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও অনেক কিছু দেখে বাড়ি যাচ্ছি। সময়-সুযোগ হলে আবারও এখানো আসব। পঞ্চম শ্রেণির মাদ্রাসাছাত্র ইমরান হায়দার প্রথমবার বাবা-মায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় এসেছে বইয়ের পাতার সঙ্গে বাস্তবের প্রাণী মিলিয়ে দেখবে বলে।
এরই মধ্যে বাঘ, হরিণ, ময়ূর, জিরাফ, জেব্রা দেখে জলহস্তির শেডে এলেও ভিড়ের কারণে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। সে কারণে মন কিছুটা খারাপ করে ভিড় কমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ইমরান জানায়, এতদিন শুধু পাঠ্যবইয়ে এসব প্রাণী দেখেছি। আজ বাস্তবে দেখে অনেক ভালো লাগছে। যেসব প্রাণী দেখছি, সেসবের নাম কখনো সে ভুলবে না। চিড়িয়াখানার সব প্রাণী দেখে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা তার।
ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড রোদ আর গরমে অনেকের হাঁসফাঁস অবস্থা। সে কারণে গাছের ছায়ায় অনেককে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। কেউ শুয়ে, আবার কেউ বসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ আবার হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গাছের নিচে বসে বাইরে থেকে নিয়ে আসা খাবার খেয়ে নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর মুজিবুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের নানা ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাদের সব সুবিধা নিশ্চিত করতে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঈদের পর আজ (মঙ্গলবার) সবচেয়ে বেশি ভিড় হওয়ায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তীব্র গরম আর বাড়তি মানুষের চাপে প্রাণীরা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সে কারণে মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে প্রাণীদের বাড়তি পরিচর্যা নেয়া হচ্ছে। বেশি করে ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার দেয়া হচ্ছে। ঈদের তৃতীয় দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন হতে পারে বলেও জানান তিনি।